6:04 pm , September 19, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বানারীপাড়ায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে আটক করেছে বরিশাল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় বৃটিশ আমল থেকে দলিল তৈরীর ভুয়া স্ট্যাম্প, অসংখ্য জাল দলিল, বিভিন্ন অফিস আদালতের কয়েক শত সিল, ডিক্রি, আদালতের রায়ের কপি, ভূয়া ওয়ারেন্টসহ অনান্য কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান নিয়ে গতকাল বেলা ১১ টায় বরিশাল নগরের পুলিশ লাইন্স ইন সার্ভিস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা পুলিশ বিভাগ। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রথমে একটি একটি ভূয়া ওয়ারেন্টের উৎসের সন্ধান করতে গিয়ে এ প্রতারক চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে গোপন সংবাদ পেয়ে পুলিশের একটি দল বরিশালের বানারীপাড়ার ইলুহার গ্রামে অভিযান চালায়। এসময় জাল দলিল প্রস্তুতের মূল হোতা মহুরী আব্দুল মন্নান তালুকদারকে আটক করা হয়। তিনি বানারীপাড়া ইলুহার গ্রামের মৃত একরাম আলী তালুকদারের ছেলে। তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযান চালিয়ে বরিশাল নগরের চকবাজার এলাকা থেকে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের আলিমাবাদ গ্রামের মো: আবুল হোসেন চৌকিদারের ছেলে মো: বাবুল চৌকিদার, নগরীর বগুড়া রোড থেকে উজিরপুরের কেশবকাঠী গ্রামের মৃত: আ: রহিম হাওলাদারের ছেলে শাহজাহান হাওলাদার ও আগৈলঝাড়ার চাত্রিশিরা গ্রামের মৃত: রহিম উদ্দিন মৃধার ছেলে নজর আলী মৃধাকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে আব্দুল মান্নান তালুকদার বরিশাল জেলা আইনজীবি সমিতির আইনজীবি সহকারী। তার সহকারী আইনজিবী সনদ নং ২৬২।
এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান জাল দলিল মৌজা নকশা, পর্চা, বিভিন্ন মুল্যের স্ট্যাম্প, ফলি, বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতের সিল, ভূমি অফিস ও রেকর্ড অফিসসহ বিভিন্ন দফতরের কয়েক বস্তা সিল জব্দ করা হয়। এমনকি ১৯০০ সালের বর্ষপঞ্জিও উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার জানান, অনেক পুরানো তারিখে ভূয়া দলিল তৈরী করার জন্য তারা এ বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করত। উদ্ধারকৃত ভূয়া সিলগুলোর মধ্যে বরিশাল তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার সাব রেজিষ্টার, বরিশাল সাব রিজিষ্টার, নোটারী পাবলিক, সুপ্রীম কোর্টের বিভিন্ন দপ্তরের সীল, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমানের সীল, বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, রেকর্ড কিপার মামুন হাওলাদার, মহাফেজখানার অফিস সহকারী, বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারের সিল, বিভিন্ন সহকারী কমিশনারদের সীল, রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যাবহার করা হয় এমন লিখা সম্বলিত সীল সহ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের সীল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে আরো বেশ কয়েকজন প্রতারক চক্রের সদস্যের নাম পেয়েছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত সাধারন মানুষের সাথে প্রতারনা করে আসছে। এরা আদালতের কাগজপত্র সিল নকল করে এবং ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করতো। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার মো: সাইফুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর, সহকারী পুলিশ সুপার আবুল বাশার, বানারীপাড়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খলিলুর রহমান, তদন্তকারী কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন। সাংবাদিকদের মধ্যে প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এ্যাড. এস এম ইকবাল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুরাদ আহম্মেদ, দৈনিক আজকের পরিবর্তনের প্রকাশক ও সম্পাদক এবং দৈনিক কীর্তনখোলার প্রকাশক কাজী মিরাজ মাহমুদ, বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী আবুল কালাম আজাদ, বরিশাল টেলিভিশন সাংবাদিক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হুমায়ূন কবির, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টুয়েন্টিফোরের ব্যুরো প্রধান রাহাত খান, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ।