5:33 pm , September 14, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ২২ ঘন্টা পর ঘর থেকে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার তুলে নেয়া দশম শ্রেণীর ছাত্রী মোমিনা আক্তারকে থানায় পৌছে দিয়েছে ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগ নেতা। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাকিল ও উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাওলাদার ভোলা থেকে উদ্ধার করে ওই তরুনীকে স্পিডবোটযোগে থানায় জমা দেন। তবে ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে অপহরণকারী ৯নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু জমোদ্দারসহ ৮ আসামী। এরা হচ্ছে ঃ মোহাম্মদ আলী জমোদ্দার, শাহে আলম দেওয়ান, ইউসুফ মোল্লা, গনি জমোদ্দার, আলী জমোদ্দার, ইকবাল জমোদ্দার, আমির চৌকিদার। এছাড়াও আরো ৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে মামলায়। মামলার বাদী হচ্ছেন অপহৃতা মোমিনার মা জেসমীন বেগম। মোমেনা সৌদি প্রবাসী মনির মাঝির মেয়ে এবং পাতারহাট আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। মিন্টু একই এলাকার মৃত মালেক জমোদ্দারের ছেলে এবং একই ওয়ার্ডের উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি কাউন্সিলর মনির জমোদ্দারের ছোট ভাই। এরা স্থানীয় এমপি পংকজ নাথের অনুসারী বলে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আব্দুল হক জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দায়েরের পর থেকেই অপহৃতকে উদ্ধার এবং আসামীদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। কোনভাবেই তাদের স্থান নিশ্চিত না করতে না পারায় গতকাল সকালে অপহরনকারী মিন্টু জমোদ্দারের মাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এমনকি ওই সময় মিন্টুর ভাই কাউন্সিলর মনিরকেও আটকের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তাকে ঘরে পাওয়া যায়নি। মিন্টুর মাকে আটক করে তাদের পরিবারের সদস্যদের মোমিনাকে নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় পরিবারের সকল সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গতকাল বিকেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাকিল ও উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাওলাদার মোমিনাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তারা ভোলা থেকে মোমিনাকে নিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে। মোমিনাকে জমা দেয়ার পের মিন্টুর মাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে আসামীরা কোথায় আছে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। ওসি আব্দুল হক আরো জানান, মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে জানিয়েছে মিন্টু ও তার দলের কেউ তার সাথে কোন ধরনের খারাপ আচরণ করেনি। তবে একটি কাগজে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় করেছে। মোমিনা ও তার মা বর্তমানে থানায় রয়েছে। আজ শনিবার আদালতের মাধ্যমে মোমিনাকে তার মায়ের হাতে তুলে দেয়া হবে। এ সময় মোমিনার জবানবন্দি গ্রহণ করবেন বিচারক। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, গতকাল বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক কীর্তনখোলা ও দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে আইনশৃংখলা বাহিনী থেকে শুরু করে দলীয় নেতারা। বিষয়টি এমপি পংকজ নাথকেও অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে এমপি পংকজ নাথের নির্দেশে সিনিয়র নেতারা মোমিনাকে উদ্ধার করেন। উল্লেখ্য প্রেমের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার মাগরিব নামাজ বাদ ৭ থেকে ৮টি মোটরসাইকেলযোগে মিন্টু তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার চুনাচর গ্রামে মোমিনার ঘরে যায়। এক পর্যায়ে মিন্টুসহ ৪/৫ জন ঘরে উঠে জোরপূর্বক মোমিনাকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় মোমিনা ডাকচিৎকার দিলে তার মা বাধা দিলে মিন্টু তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মোমিনাকে মোটরসাইকেলে তুলে নেয়। সাথে সাথে মিন্টুর বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে খবর দেয়া হলেও মোমিনা এবং মিন্টুর কোন সন্ধান পাইনি। তাছাড়া এ ব্যাপারে মিন্টুর পরিবার থেকেও কোন সহযোগিতা না পেয়ে ওই রাতে মেহেন্দীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে মোমিনার মা। ঘটনার পর থেকে মমিনার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে।