6:17 pm , July 11, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আবাদযোগ্য জমির এক-চতুর্থাংশও এখনো সেচ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। অথচ এ অবস্থাতেও দক্ষিণাঞ্চল প্রায় ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত এলাকা। আবাদযোগ্য জমির অর্ধেকও সেচের আওতায় আনতে পারলে দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞগন জানিয়েছেন। অথচ এখনো গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ১২ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে সেচযোগ্য সোয়া ৮ লাখ হেক্টরের মাত্র ১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর সেচের আওতায় রয়েছে। আর সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে মাত্র ১টি গভীর নলকুপের সাহায্যে ১৫ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। মাত্র ২৯টি অগভীর নলকুপের সাহায্যে সেচ পাচ্ছে ২৯ হেক্টর জমি। আর এ ২৯টি অগভীর নলকুপের ১৭টি বিদ্যুতায়িত।
সম্প্রতি বরিশাল ও পটুয়াখালীতে ‘বরিশাল বিভাগে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমিকা ও ভবিষ্যত সম্ভবনা’ শির্ষক এক সেমিনারে খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি সেক্টরের এসব তথ্য উঠে এসছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলার আবাদযোগ্য প্রায় ১২ লাখ ৪৯ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে সেচযোগ্য ৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৭৮ হেক্টর হলেও এখনো মাত্র ১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টরে সেচাবাদ হচ্ছে। সেমিনারে এ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক বলে আখ্যায়িত করে এ থেকে উত্তরনে বেশ কিছু সুপারিশমালাও পেশ করা হয়েছে।
এসব সুপারিশের মধ্যে এ অঞ্চলের পতিত জমি পুনরুদ্ধার সহ তা আবাদের আওতায় আনার পাশাপাশি সেচের এলাকা বর্ধিত করারও তাগিদ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি খাল পুনঃখনন সহ তা সংরক্ষনের মাধ্যমে সেচের পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করারও তাগিদ দেয়া হয়েছে। পাশাপশি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসি’র কার্যক্রম জোরদার করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। সমস্ত বেড়ি বাঁধ ও স্লুইস গেটসমূহ মেরামত সহ তা ব্যবহার উপযোগী করার পাশাপশি বিএডিসি’র সেচনালাসমূহও সারা বছর কার্যকর রাখার কথাও বলা হয় সেমিনারে। সেচ নালাসমূহের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিরও সুপারিশ করা হয় ঐসব সেমিনারে।
দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকাগুলোতে নোনা পানির অনুপ্রবেশ বন্ধে রাবার ড্যাম, হাইড্রোলিক এলিভেটেড ড্যাম, রেগুলেটর এবং ওয়াটার পাসেস সহ সবধরনের ওয়াটার কন্ট্রোল স্ট্রাকচার সমূহ কার্যকর রাখার পাশাপশি বিদ্যমান অবকাঠামোর সুষ্ঠু রক্ষনাবেক্ষন নিশ্চিত করারও তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগন। সেমিনারে দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতা বৃদ্ধি করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। জোয়ার বা বর্ষার জলাবদ্ধ ফসলী জমি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই পানি মুক্ত করে সেচের আওতায় আনার মাধ্যমে বোরো আবাদ বৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগানোর কথাও বলা হয়েছে। পাশাপশি হাজামজা খালগুলো আধুনিক পদ্ধতিতে পুনরুদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলে সেচবাদকৃত ১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে মাত্র ২১০ হেক্টরে ৩০টি গভীর ও অগভীর নলকুপ থেকে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তলন করা হচ্ছে। যার মধ্যে মাত্র ১৮টি বিদ্যুতায়িত। এ অঞ্চলে অবশিষ্ট প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র সেচ যন্ত্রের সাহায্যে। যার মাত্র ২৯৮টি বিদ্যুতায়িত। অবশিষ্ট ৯ হাজার ৪৮৩টিই ডিজেল চালিত। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে সেচ ব্যয় দেশের অন্য যেকোন এলাকার তুলনায় বেশী। এ কারনেও কৃষকদের মধ্যে সেচাবাদে আগ্রহ কম। কারন ডিজেলে সেচ ব্যয় যেমনি বেশী, তেমনি সেচকাজে ব্যবহৃত বিদ্যুতে ২৫ ভাগ পর্যন্ত সরকারি ভর্তুকিও রয়েছে। যা ডিজেলে নেই।
তবে বরিশাল ও ঝালকাঠীতে কূপ ও পুরনো পদ্ধতির ডোঙ্গার সাহায্যেও প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
তবে এসব ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ ওমর ফারুখ জানান, বর্তমানে সেচের আতওতায় জমির পরিমান কিছু বেড়েছে। ডিএই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই দেখছে বলে জানিয়ে সব ব্লক সুপাভাইজারদের কৃষকদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রেখে সেচাবাদ বৃদ্ধির নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।