১৭ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে হবে ত্রি-মুখী লড়াই ১৭ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে হবে ত্রি-মুখী লড়াই - ajkerparibartan.com
১৭ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে হবে ত্রি-মুখী লড়াই

6:08 pm , June 25, 2018

রুবেল খান ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা চারজন। তবে ভোটের ক্ষেত্রে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা করছে ভোটাররা। অবশ্য সেই সম্ভাবনা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের উপর। কেননা ওয়ার্ডটিতে দলীয় দু’জন প্রার্থী থাকলেও তাদের মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এদের মধ্যে থেকে একজন সড়ে দাড়ালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে লড়াই হবে দ্বিমুখী। আজকের পরিবর্তন’র ওয়ার্ড পরিক্রমায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। সরেজমিনে জানাগেছে, বিসিসি’র ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি জনগুরুত্বপূর্ন এবং অন্যতম ভিআইপি এলাকা ১৭নং ওয়ার্ড। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত করে বিজয়ী হয়েছিলেন মহানগর বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি ও ১৭নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি আক্তার উজ্জামান গাজী হিরু। পরবর্তী সময়ে তৎকালিন মেয়র শওকত হোসেন হিরনের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন তিনি। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জনসমর্থনের কারনে দল পরিবর্তনের প্রভাব না পড়ায় পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর মধ্যে প্রথম হন মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য আক্তারউজ্জামান গাজী হিরু। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সাথে তার ভোটের ব্যবধান ছিলো সাড়ে চারশত। সে অনুযায়ী টানা ১০ বছর কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। কাউন্সিলর হিসেবে নিজেকে শতভাগ সফল দাবী করে পুনরায় আসন্ন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহনের চুড়ান্ত প্রস্তুতি রয়েছে তার। এমনকি ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগ ১৭নং ওয়ার্ডে আক্তার উজ্জামান গাজী হিরুকেই মনোনয়ন দিয়েছে। যে কারনে ওয়ার্ডে দলের অন্য প্রার্থী থাকলেও তাতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি। এবারেও বিপুল ভোটে জয়ের ক্ষেত্রে আশাবাদী তিনি।

আলাপকালে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে আক্তার উজ্জামান গাজী হিরু বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দলের প্রভাব আছে। তবে বিজয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি ইমেজের প্রাধান্য বেশি। গত ১০ বছর দায়িত্বপালন কালে ওয়ার্ডের উন্নয়ন করেছি। দৃশ্যমান উন্নয়নের কথা বলতে গেলে সিটি সুপার মার্কেট এবং রাখাল বাবুর পুকুর আধুনিকায়ন আমার বড় সাফল্য। তাছাড়া সুখে-দুঃখে জনগনের পাশে ছিলাম। কাজেই আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

এদিকে ওয়ার্ডটিতে ঘুরে জানাগেছে, জনগুরুত্বপূর্ন এই ওয়ার্ডের সব থেকে বড় সমস্যা হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে আছে ময়লার ভাগার, অপরিচ্ছন্নতা এবং জলাবদ্ধতার চিত্র। দৃশ্যমান এই সমস্যাগুলোর জন্য বর্তমান কাউন্সিলকেই দায়ি করছেন ওয়ার্ডের তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সহ বিশেষ মহল। অভিযোগ রয়েছে মৃত ব্যক্তির নামে বয়স্ক ভাতা তুলে তা আত্মসাত করার। যে বিষয়টি ওয়ার্ড জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়।

ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্ছিত সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী রোকন উদ্দিন। যিনি ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি। ১৯৮৬ সাল থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কখনো সাংগঠনিক আবার কখনো সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাছাড়া ২০০৩ সাল থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন তিনি। ২০১৩ সালের নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে দ্বিতীয় অবস্থান ছিলো তার। এবারের নির্বাচনেও অংশগ্রহনের আশাবাদ করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের নিকট। ওয়ার্ডবাসির ভাগ্যের উন্নয়ন, অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করবেন বলে জানিয়েছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে আপাতত দলের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন কাজী রোকন উদ্দিন।

আলাপকালে কাজী রোকন উদ্দিন জানান, আমার ওয়ার্ডটি ভিআইপি এলাকা হিসেবে পরিচিত হলেও এখানের মানুষ উন্নয়ন এবং সুযোগ সুবিধা বঞ্ছিত। প্রতি বছর ওয়ার্ড থেকে আড়াই কোটি টাকা ট্যাক্স আদায় করে নিচ্ছে বিসিসি। কিন্তু উন্নয়ন হচ্ছে অর্ধ কোটি টাকারও কম। সামান্য বৃষ্টিতেই হাটু সমান জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের ঘরের মধ্যে পানি জমে মশা, মাছি সহ বিষাক্ত প্রানীর আক্রমন ঘটছে। সে দিকে বর্তমান কাউন্সিলরের গুরুত্ব নেই। কেননা তিনি নিজেই অনিয়ম আর দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়ে আছেন। বিবির পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনকারী ফোয়ারা বিকল হওয়ার পিছনে বর্তমান কাউন্সিলরের যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিযোগ কাজী রোকন উদ্দিনের। তাছাড়া পুকুরের চার পাশ ঘিরে মোবাইল কোম্পানি অবৈধ ভাবে যে বিলবোর্ড স্থাপন করেছে তার পেছনেও ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগিতার অভিযোগ করেন তিনি।

তাছাড়া যেই ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি সেই ওয়ার্ডবাসীর সাথেই প্রতারনা করার অভিযোগ করা হয়েছে বর্তমান কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। জমি নিয়ে সালিশি করে পার্সেন্টেজ আদায়, মৃত ব্যক্তির নামে বয়স্ক ভাতা উত্তোলনের বিষয়ে আক্তার উজ্জামান গাজী আলোচিত বলে দাবী ওই প্রার্থীর।

তিনি বলেন, ওয়ার্ডের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে তদারকির জন্য বিসিসি থেকে ১৫ জনের মত কর্মী দেয়া হয়েছে ওয়ার্ডটিতে। তারা কেউ সঠিক ভাবে কাজ করে না। ময়লা আবর্জনা অপসারন করে না। যে কারনে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা এবং সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের পেছনের অংশ বিশাল ময়লার ভাগারে পরিনত হয়েছে। যারা এসব পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে আছে তার মধ্যে ৬ জনই বর্তমান কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত গোলামী করছে। যার মধ্যে ৩ জন কাউন্সিলরের বাসার বাজার, রান্নাসহ অন্যান্য কাজ করছে এবং বাকি তিন জন সাবেক এক কমিশনারের বাসায় কাজ করছে। অথচ বেতন নিচ্ছে বিসিসি থেকে। মুলত জবাবদিহিতা না থাকার কারনেই ১৭নং ওয়ার্ডটির বেহাল দশা বলে অভিযোগ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা রোকনের।

তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন কাউন্সিলর আক্তার উজ্জামান গাজী হিরু। তিনি বলেন, ৩ জন নয়, একটি ছেলে আমার বাসায় কাজ করে। তাও পার্টটাইম হিসেবে। তাকে আমার নিজের পকেট থেকে বেতন দেই। তাছাড়া সাবেক কমিশনার যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলাম নিজামের বাসায় যে তিনজনের কাজ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে তারাও বিসিসি’র অর্পিত দায়িত্ব পালন শেষে অবসরকালীন সময় কাজ করে। এজন্য তারা আলাদা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে। তাছাড়া জলাবদ্ধতার প্রধান কারন হিসেবে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও অসচেতনতাকেই দায়ি করছেন কাউন্সিলর আক্তার উজ্জামান গাজী হিরু। তিনি বলেন, ড্রেনের আয়তন ছোট। তার মধ্যে ড্রেনের ভেতরে ময়লা আর্বজনা ফেলা হচ্ছে। এজন্য পানির প্রবাহ ঠিক নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। তাছাড়া গাল্স স্কুলের পেছনে যে ময়লার ভাগারটির নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেটিও স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে। তবে ময়লা রিফাইন করার মেশিনটি চালু হলে শুধু ১৭নং ওয়ার্ডেই নয়, বরং ৩০ ওয়ার্ডের কোথাও ময়লার যন্ত্রনা থাকতো না।

এদিকে নিজের বিজয় নিশ্চিত করতে মরিয়া ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আনোয়ার হোসেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩য় স্থানে থাকা আনোয়ার এবারেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিগত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এবার বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনের অংশগ্রহনের জন্যই গত চার বছর পূর্বে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, একসময় আমি ঠিকাদারী করেছি। তখন কাজের সুষ্ঠু জবাবদিহিতা ছিলো। কিন্তু এখন আর তাই নেই। উন্নয়নের ক্ষেত্রে হচ্ছে না মাষ্টার প্লান। যার দরুন সামান্য বৃষ্টিতেই ফকির বাড়ি রোড, আগরপুর রোড, বগুড়া রোড পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ১৭নং ওয়ার্ডে কি উন্নয়ন গত ৫ বছরে হয়েছে তা বসবাসকারিরাই যানে। অথচ প্রতি বছরই ওয়ার্ড ভিত্তিক বরাদ্দ হচ্ছে। সুষ্ঠু জবাবদিহিতা না থাকার কারনেই আমাদের ওয়ার্ডটি উন্নয়ন বঞ্ছিত। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই তিনি নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ওয়ার্ডে বিএনপি’র ভোটার বেশি। তাছাড়া ওয়ার্ড বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের সাথে আমি আলোচনা করেছি। আমার ভুলত্রুটি থাকলে তাতে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। বিএনপি’র দলীয় ভোট পেলে বিজয় নিশ্চিত বলে জানান নগরীর ফজলুল হক সড়কের লাকী জুয়েলার্সের মালিক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, অন্যান্য প্রার্থীরা বিগত নির্বাচনের পর পরই ওয়ার্ডবাসির কাছ থেকে সরে যায়। কিন্তু নির্বাচনে পরাজিত হয়েও গত পাঁচ বছর ওয়ার্ডবাসির সুখে-দুঃখে পাশে দাড়িয়েছি। অসহায় শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার খবর, দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেছি। আমার বিশ্বাস ওয়ার্ডবাসি আমাকে একবারের জন্য হলেও সুযোগ দিবে।

অপরদিকে ওয়ার্ডটিতে আরো এক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ১৭নং ওয়ার্ডের সভাপতি মাওলানা কাজী মো. সাইফুল ইসলাম। দল থেকে তাকে নির্বাচনের জন্য মনোনিত করা হয়েছে। তবে ভোটের প্রচার-প্রচারনায় তাকে দেখা যাচ্ছে না। যে কারনে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই অনিবার্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অবশ্য ১৭নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার নিজামুল ইসলাম নিজাম। কেননা ওয়ার্ডটিতে তার অনুসারী বিশাল একটি অংশ রয়েছে। যারা নিজামুল ইসলাম নিজামের ইশারাতেই ভোট দিয়ে থাকেন। বিগত সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী বিজয়ের ক্ষেত্রে নিজামের সহযোগিতা ছিলো বলে দাবী পরাজিত প্রার্থীদেরও। তাই এবারের নির্বাচনেও নিজামুল ইসলাম নিজামের সমর্থন জয়-পরাজয়ের কারন হয়ে দাড়াতে পারে। তাই পূর্বের ন্যায় এবারেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আক্তার উজ্জামান গাজী হিরু’র পক্ষেই নিজানুল ইসলাম নিজামের সমর্থন রয়েছে বলে দাবী করেছেন স্থানীয়রা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT