দুই বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে ভোগান্তিতে যাত্রীরা দুই বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে ভোগান্তিতে যাত্রীরা - ajkerparibartan.com
দুই বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে ভোগান্তিতে যাত্রীরা

6:53 pm , June 23, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দুই বাস মালিক সমিতির মধ্যকার হিস্যা দ্বন্দ্বের মাসুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ঈদ না যেতেই বাস মালিক ও শ্রমিকরা দক্ষিণাঞ্চলে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ যাত্রীকে। প্রতিদিন গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গন্তব্যে পৌছতে হচ্ছে তাদেরকে। তার মধ্যেই আবার যাত্রীদের জিম্মি করে ঈদ বকশিশের নামে সিমাহিন চাঁদাবাজীতে মেতেছে গণ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। কিন্তু গত তিন দিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলের ১৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও সংকট নিরসনে উদ্যোগী দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে। তাই হতাশ হচ্ছেন দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ যাত্রী।

জানাগেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতি ও ঝালকাঠি জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মধ্যে সড়কের হিস্যা ও বাস চলাচলের বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। সড়কের হিস্যার দাবীতে মাস কয়েক পূর্বে বরিশাল থেকে ঝালকাঠি সহ পশ্চিমাঞ্চলিয় রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় ঝালকাঠি মালিক সমিতি। এ নিয়ে দুই মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেও সুরাহা দিতে পারেনি প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহল। সর্বশেষ ঈদের কারনে গত ১৩ জুন দুই সমিতিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানায় বিভাগীয় প্রশাসন। ওই দিন দুই সমিতি সার্কিট হাউসের সভায় হাজির হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ আসেননি। তার পরেও দুই পক্ষই ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের ভোগান্তির কথা ভেবে বিরোধের অবসান ঘটনা। এমনকি ১৪ জুন বরিশাল থেকে সরাসরি ঝালকাঠি সহ পশ্চিমাঞ্চলে সমন্বয় করে বাস চলাচল শুরু করে। অবশ্য ওই সভায় বিরোধের স্থায়ী সমাধানের লক্ষে ২০ জুন বিভাগীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে সভা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সভাটি হয়নি। যে কারনে পুনরায় বরিশাল থেকে ঝালকাঠি সহ পশ্চিমাঞ্চলে বরিশাল সমিতির বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় ঝালকাঠি সমিতি। তার মধ্যেই স্থানীয় পুলিশেল সহযোগিতায় বরিশালের বাস যাত্রী নিয়ে ঝালকাঠি পৌছায়। কিন্তু সেখানে বরিশাল সমিতির বাস শ্রমিকদের মারধর ও বাসে ভাংচুর করে ঝালকাঠি সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন। এর প্রতিবাদে ওইদিন অর্থাৎ ২১ জুন বেলা ১১টা থেকে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা, কুয়াকাটা, বাউফল, বাকেরগঞ্জ সহ দক্ষিণাঞ্চলের ১৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় বরিশাল পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। সেই থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকে।

বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আজিজুর রহমান শামীন বলেন, ঝালকাঠি, খুলনা, রুপশা সমিতির সাথে আমরা সমন্বয় করে আমরা বাস চলাচল করে আসছিলাম। কিন্তু ঝালকাঠি সমিতি গায়ের জোড়ে বরিশালের বাস ঝালকাঠি সহ অন্যান্য সড়কে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। তারা রূপাতলী থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দুরে ঝালকাঠি জেলার নলছিটির রায়াপুর নামক স্থানে অবৈধভাবে বাস টার্মিনাল নির্মান করে সেখান থেকে তাদের বাস চলাচল করে আসছে।

তিনি বলেন, চলমান সমস্যা সমাধানে গত শুক্রবার বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ আমাদের দুই সমিতির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। কিন্তু সেখানেও কোন সমাধান হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে রহস্যজনক আচরন করেন। তাই বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ১৮ রুটে বাস ধর্মঘটও অব্যাহত থাকে।

আজিজুর রহমান শাহীন বলেন, ঝালকাঠি সমিতির স্বেচ্ছাচারিতার কারনে অনেকগুলো পরিবার পথে বসতে শুরু করেছে। যারা ঝালকাঠি সহ পুর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের কাউন্টারে চাকুরী করতো। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ওইসব কাউন্টার ক্লার্কদের বেতনও বন্ধ রয়েছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। যে বিষয়টি কোন জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের নখদর্পনে আসেনি।

অপরদিকে দুই সমিতির হিস্যা দ্বন্দ্বের মাসুল দিতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। কেননা ঈদ শেষ না হতেই দক্ষিণাঞ্চলে বাস ধর্মঘট যাত্রীদের ভোগাক্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ঈদের পূর্বে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ মানুষ বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে আসে। ঈদের পরে তারা আবার কর্মে ফেরার যাত্রা করছে। কিন্তু সেই মুহুর্তে বাস বন্ধ থাকায় ভোগান্তি এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। কুয়াকাটা, পটুয়াখালী, বাউফল থেকে যাত্রীরা মাহেন্দ্রা, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেল ভাড়া করে বরিশালে আসছে। তেমনি করে বরিশালের যাত্রীরাও দক্ষিণাঞ্চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে একদিকে ভোগান্তি অন্যদিকে দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে যাত্রীরা।

যাত্রীদের অভিযোগ, বাস মালিকরা নিজেদের দ্বন্দ্ব মেটাতে যাত্রীদের ভোগান্তি দিয়ে ধর্মঘট পালন করছে। অথচ প্রশাসন কিছু বলছে না। তাদের নিরবতার কারনে গণপরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের হয়রানি এবং তাদের সাথে খারাপ আচরন করছে। যাত্রীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। তাই চলমান সংকট নিরসনের মাধ্যমে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে রক্ষার জোর দাবী যাত্রীদের।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT