7:01 pm , June 11, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশাল শাখায় দুই গ্রুপের সংঘাতের ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রিয় শাখা। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত টিমের প্রতিবেদন হাতে পেলেই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তারা। এমনটিই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশাল শাখার শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাছাড়া দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে উভয় পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। ঘটনার সময় উপস্থিত ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথেও কথা বলেছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশাল শাখার জিএম আনোয়ার হোসেন বলেন, যে মামলাটি হয়েছে সেটি আইনের গতিতেই চলবে। তবে আমাদের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করা করব। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভেতরে কর্মচারীদের বিরোধ সুখকর কিছু বয়ে আনে না বলে দাবী করে তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শৃঙ্খলাভঙ্গ মারাত্মক অপরাধ। আমরা মনে করি এই ঘটনার পেছনে আরও কিছু থাকতে পারে। সংগঠন থাকলে সেখানে মত-দ্বিমত থাকবে। তাই বলে সেখানে এতটা উদ্ভট আচরণ কাম্য নয়। সে কারনেই অরাজকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশাল শাখার কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু নিজস্ব শাখায় হয়েছে। সেখানে এত বিলম্বে প্রতিবেদন দাখিল হওযার কথা নয়। তবে পোস্টার ছিড়ে ফেলার যে অভিযোগ তা ‘সাজানো’ হতে পারে এমন তথ্যের কারণে গভীরভাবে মামলার এজাহার ও ঘটনা সম্পৃক্ত লোকদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
অভিযোগ মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তথ্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের সরবারহ করে কর্মকর্তাদের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি, সংগঠনের নামে কর্মচারীদের কোনঠাসা করে রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনগুলোতে। যার সর্বশেষ ঘটনা, বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশাল শাখার একটি কক্ষে ভাংচুরের অভিযোগ এবং সেই অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় মামলা দায়ের করা।
জানা গেছে, সিবিআই এর দাপট দেখিয়ে বরিশাল শাখার কোন শীর্ষ কর্মকর্তার নির্দেশনা ছাড়াই মামলা দায়ের করা হয়। ওদিকে ব্যাংকের অভ্যন্তরে কোন্দলে জড়ানো উভয় পক্ষ এবং আনিত অভিযোগে জাতির জনকের পোস্টার ছেঁড়ার বিষয়টি সত্য নাকি সাজানো তা সংশ্লিষ্ট থানা কর্তৃপক্ষসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কঠোরভাবে খতিয়ে দেখছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাইনুল হোসেন জানিয়েছেন, মামলাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এটি একটি স্পর্শকাতর মামলা।
ঘটনার বিষয়ে এ্যাম্পøয়ীজ এ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী সংঘের নের্তৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক জিএম আবু তাহেরের বিদায়ী সংবর্ধণা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। এ্যাম্পøয়ীজ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান বলেন, সাবেক জিএম আবু তাহের সিবিএ নেতাদের জন্য কোন কাজ করেননি। যেহেতু তাকে দিয়ে আমাদের কোন উপকার হয়নি সে কারনে তাকে বিদায় সংবর্ধনা প্রদানে এ্যাম্পøয়ীজ এ্যাসোসিয়েশন উদ্যোগ নেয়নি।
কর্মচারী সংঘের কতিপয় লোক তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিতে ৩০ টাকা করে উত্তোলন করে। যাদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছে তাদেরকে ফেরত দিয়ে দিতে বলেছি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মচারী সংঘের ছয়জন আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে শুরু করেন। যখন জাতির জনকের পোস্টার ছেঁড়া করা হয় তখন কেন প্রতিবাদ করেননি-জানতে চাইলে মাকসুদুর রহমান বলেন, প্রতিবাদ করায় তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে রাখে। সংগঠনের বিরোধ নিয়ে জাতির জনকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা কতটা যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেননি এই কর্মচারী নেতা। তিনি দাবী করেন, ঘটনার পরপরই শ্রমিকলীগ নেতা পরমিল দাসকে জানান। তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
ব্যাংকের অভ্যন্তরীন ঘটনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানোর আগে রাজনৈতিক দলের নেতাদের জানানোর প্রশ্নে মাকসুদুর রহমান বলেন, তিনি আমাদের পার্টির লোক। মাকসুদুর রহমান আরও বলেন, ঘটনাটি আমি পুলিশকে জানালেও প্রথমে মামলা দায়ের করতে চাইনি। তবে রাতে পুলিশ ফোন করে আমাদের ডেকে নিয়ে মামলা দায়ের করান। ওদিকে ৩জুন সংগঠিত ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো দাবী করেছেন কর্মচারী সংঘের নেতারা। তাদের দাবী অভ্যান্তরীণ প্রতিহিংসার শিকার তারা। কর্মচারী সংঘের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সাবেক জিএম আবু তাহেরের বিদায় সংবর্ধণা সঠিক নয়। আমরা তাকে একটি ফুলেল তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম। সেটাও তাদের অনুমতি নিতে গিয়েছিলাম। তখন ফুলের তোড়া দিতে বারণ করেন। আমরা কারন জানতে চাইলে হুমকি ধামকি দেয়। এক পর্যায়ে বাকবিতন্ড হয়। শেষে আমরা চলে আসি। সন্ধ্যায় শুনি আমরা নাকি জাতির জনক, প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করেছি। শহিদুল ইসলাম বলেন, তার সাথে বিরোধ হতে পারে। কিন্তু জাতির জনক বা প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমাদের কোন বিরোধ নাই। মাকসুদুর রহমানের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে জাতির জনকের ছবি ভাঙ্গলে আমাদের লাভটা কি প্রশ্ন করে তিনি বলেন, সামান্য তর্কবিতর্কের প্রতিশোধ নিতে মাকসুদুর রহমান ও তার সভাপতি শেখ জাহাঙ্গির নিজেরা ছবি নিচে ফেলে একটি ইস্যু তৈরী করে আমাদের ঘায়েল করছে। উলে¬খ্য, গত ৩ জুন একজন জিএমকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে বিরোধে জড়ায় কর্মচারী সংঘ ও এ্যাম্প¬য়ীজ এ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। এ ঘটনায় কর্মচারী সংঘের ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এ্যাম্পøয়ীজ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান। মামলায় সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন অভিযুক্তরা। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, শহিদুল ইসলাম, আনোয়ারুজ্জামান, নূরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম খান রনি, বাবুল দাস ও মিল্টন।