6:48 pm , June 3, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ এবারের ঈদেও বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আরো দুটি বিলাসবহুল নৌযান। এর মধ্যে একটি থাকবে দিবা সার্ভিস এবং অপরটি রাত্রিকালিন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরে আগামী ৬ জুন মেসার্স নিজাম শিপিং লাইন্স’র দ্রুতগামী এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৫ ও এ্যাডভেঞ্চার-৯ নৌযান দুইটির উদ্বোধন করবেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান-এমপি। ঢাকা নৌ বন্দরে উদ্বোধন পরবর্তী ৭ জুন থেকে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচল করবে। এরই মধ্যে গত শুক্রবার দুপুরে এ্যাডভেঞ্চার-৯ কীর্তনখোলা নদীতে পরীক্ষামূলক চলাচল করেছে। নৌযানটি চরমোনাই পর্যন্ত গিয়ে পুনরায় ডকইয়ার্ডে ফিরে এসেছে। এসময় চরমোনাই’র পীর মুফতি মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম নৌযান ঘুরে দেখেন এবং এর সফলতা কামনা করে দোয়া করেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ও নিজাম শিপিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজাম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
জানাগেছে, গত দুই বছর ধরে নলছিটি’র তিমিরকাঠি ইউনিয়নের দপদপিয়া এলাকায় কীর্তনখোলার তীরে নিজাম শিপিং লাইন্সের নিজস্ব ডকইয়ার্ডে নির্মান হয় এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৫ ও এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৯। একই ডকইয়ার্ডে নির্মিত দ্রুত গতির জাহাজ এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৬ দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অবশ্য এর পূর্বেই একই ডক ইয়ার্ডে নির্মিত এমভি এ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চটি বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচল শুরু করে।
এর মধ্যে দিবা সার্ভিসের এ্যাডভেঞ্চার-৫ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। বিদেশী টুরিষ্ট নৌযানের আদলে নির্মিত এই জাহাজটি খুবই দ্রুত গতির। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই জাহাজটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইঞ্জিন। ক্যাটামেরিন পদ্ধতির দ্বিতল এই নৌযানে মোট আসন সংখ্যা রয়েছে ৫২০টি। যার মধ্যে নীচতলায় ৩শ ও দ্বিতীয় তলায় ২শ আসন রয়েছে। রয়েছে কেবিনের ব্যবস্থাও। যেখানে ২০টি আসন নির্ধারিত। থাকছে ডেকের ব্যবস্থা।
জানা গেছে, অন্যান্য লঞ্চের তুলনায় ক্যাটামেরন আদলের এই নৌযানের ভাড়া বেশি নয়। নীচতলায় ৩শত আসনের প্রতিটির ভাড়া ৭শ এবং দ্বিতীয় তলার আসনের ভাড়া ১ হাজার টাকা। তাছাড়া প্রথম শ্রেণির ২০টি আসনের ভাড়া ১২শত টাকা করে। দ্রুত গতির এই নৌযানটি পূর্ন ক্ষমতায় চলাচল করলে মাত্র চার ঘন্টায় ঢাকা পৌঁছতে পারবে বলে দাবী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে ৩১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থর চার তলা বিশিষ্ট এ্যাডভেঞ্চার-৯ নৌযানে রয়েছে সব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য লিফট, মিনি জিমনেশিয়াম, প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোর্ট এরিয়া, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ফ্রি ওয়াইফাই জোন। এর মধ্যে লিফট ও জিমনেশিয়াম অন্যান্য লঞ্চ এর থেকে ভিন্নতা এনে দিয়েছে। নৌযানে রয়েছে ৯৫ টি ডাবল ও ৮৫টি সিঙ্গেল কেবিন, একটি ডুপ্লেক্স সহ ৬টি ভিআইপি কেবিন, ৪টি সেমি ভিআইপি, ৬টি ফ্যামিলি কেবিন ও ৩০টি স্লিপিং সোফা। যাত্রীদের নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
জার্মানির তৈরী ৩ হাজার ২শ হর্স ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি মুল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌযানের বাতানুকূল প্রথম শ্রেণী এবং ভিআইপি কক্ষ সহ ডেকের যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের নিশ্চিৎ করতে রয়েছে তিনটি শক্তিশালী জেনারেটর এবং একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর।
হুইল হাউসে (মাস্টার ব্রীজ) সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়েছে। এর রাডার এবং সুকান ‘ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক’ ও ম্যানুয়াল দ্বৈত পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি জিপিএস পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যেকোনো নৌযানের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারবে। প্রথম শ্রেণির মাস্টার, সুকানী ও ইঞ্জিন চালক (ড্রাইভার) ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণির মোট ৫৫ জন ক্রু নিয়োগ করা হয়েছে। ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে ডেক শ্রেনী আড়াইশ এবং প্রথম শ্রেণি সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা।
নিজাম শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন জানান, বিলাসবহুল জাহাজ দুটি আগামী ৭ জুন ঢাকা সদর ঘাট থেকে প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। তবে ঢাকা সদর ঘাটে ৬ জুন জাহাজ দুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য দিনক্ষণ নির্ধারন করা হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান-এমপি জাহাজ উদ্বোধন করবেন। থাকবেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু-এমপি এবং এফবিসিসিআই’র সভাপতি সফিউল মহিউদ্দিন প্রমুখ।