শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মান তলানীতে স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে বরিশালে ৫ শতাধিক স্কুলের কমিটি নিয়ে বিরোধ-মামলা শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মান তলানীতে স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে বরিশালে ৫ শতাধিক স্কুলের কমিটি নিয়ে বিরোধ-মামলা - ajkerparibartan.com
শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মান তলানীতে স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে বরিশালে ৫ শতাধিক স্কুলের কমিটি নিয়ে বিরোধ-মামলা

3:19 pm , January 7, 2025

ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের অধীন ৫ শতাধিক স্কুলের কমিটি নিয়ে বিরোধ ও মামলায় সৃষ্ট শিক্ষকদের দলাদলিতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। মামলার ব্যায় চালাতে স্কুলগুলোতে চলছে অর্থ সংকট। এসব স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও শিক্ষার মান এখন তলানিতে এসে পৌঁছেছে। শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে শিক্ষাবোর্ড ।
বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের অধীন ১৮শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব স্কুল ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ম্যানেজিং কমিটি গঠনে শঠতা, গোপনীয়তা, দাতা ও প্রতিষ্ঠাতাদের উপেক্ষা, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব নিয়েই ৫ শতাধিক স্কুলে চলছে অস্থির অবস্থা। বিরোধ আর মামলায় জর্জরিত এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। কোনভাবেই এ অবস্থাকে সামাল দেয়া যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর রফিকুল ইসলাম খান বলেন,  স্কুল কমিটিতে কে আসবে, কে আসতে পারেনা এ নিয়েই বিরোধের শুরু হয়। এমন  দৃষ্টান্ত রয়েছে যে স্থানীয় প্রভাবে যারা স্কুলের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা তাদেরকেও বাদ দেয়া হচ্ছে। প্রায়শই স্বার্থান্বেষি মহল প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় গোপনে কমিটি গঠন করে।  এতে প্রচন্ড ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষায়। প্রধান শিক্ষক মামলা চালাতে গিয়ে স্কুল চালাতে পারছেন না।
বরিশাল নগরীর প্রানকেন্দ্র ও বানিজ্যিক এলাকা গীর্জা মহল্লায় প্রায় দুই একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ কে (আসমত আলী খান) স্কুলের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এর অর্থ ও সম্পদ। এ স্কুলের সামনের বানিজ্যিক স্টল থেকে মাসিক আয় ৬ লাখ টাকা। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি এতোদিন গঠন হয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবে। বিগত কমিটি অর্থ লোপাটে প্রধান শিক্ষক বাধা হওয়ায় তাকে গত ৪ বছর ধরে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। কোন ধরণের কারণ ছাড়া তাকে বরখাস্তও করা হয়। সম্প্রতি তিনি আইনগতভাবে দায়িত্ব নিয়ে দেখেন শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধেকে। হিসেব নেই অনেক ব্যায়ের।
এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক এইচএম  জসিম উদ্দীন বলেন, স্কুলের মাসিক বড় অংকের আয় ও প্রচুর সম্পদই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত কমিটি এসব অর্থ ও সম্পদ অনৈতিকভাবে ভোগ করতে চেয়েছে। এমনকি সাবেক সভাপতি দুই কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। আমি বাধা দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বরখাস্ত করে ৪ বছর স্কুলের বাইরে রেখেছে। স্কুলে সৃষ্টি করেছে দলাদলী। এ কারনে স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৪শ’ তে নেমেছে। এসএসসি পুরীক্ষার্থী নেমেছে মাত্র ৬৫ জনে।
স্কুলগুলোতে ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে এমন বিরোধ-মামলায় প্রধান শিক্ষকসহ সাধারন শিক্ষক ও স্টাফ বরখাস্তের ঘটনা ঘটছে প্রায়শই। এরমধ্যে মামলা পাল্টা মামলায় জড়িয়ে জেল খাটাসহ  বরখাস্ত আছেন আরো অনেকে। শিক্ষকতা করতে এসে ক্লাস রেখে শিক্ষকদের আদালতের বারান্দায় থাকতে হচ্ছে বেশিরভাগ সময়। যে কারনে সার্বিক শিক্ষা কার্ক্রম একাধারে যেমন বিপর্যস্ত হচ্ছে তেমনি বিপদ সংকুল এসব স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ। এমন কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
একাধিক শিক্ষক বলেন, কমিটি ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে এমন দ্বন্দ্ব থাকলে আমরা বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়ি।  এ কারণেই  শিক্ষকদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট হয়ে গেছে। কাজে মন বসে না, সমস্যা হলে সমাধান মেলে না। পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়।  দলীয় সভাপতি দিয়ে কাজ চলে না, সরকারি প্রতিনিধির কোন বিকল্প নেই।
এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। এরা অনেকেই সন্তানদের অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে দলাদলীর কারনে শিক্ষকরা ঠিকমতো পড়াশোনা করাচ্ছে না। অন্যদিকে নিজের দল ভারি করতে কোন পক্ষই মনিটরিং করছে না। ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থিদের।
ফখরুদ্দীন নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মামলা হলে তার প্রভাব শিক্ষার্থীসহ সবার উপর পড়ে। এ অবস্থায় মামলা গ্রহণের আগে যাচাই করা শ্রেয়। তা না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা খুবই ভুক্তোভোগী হয়।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১৮শ টি মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে ৫০২টি স্কুল এমন কোন্দল ও মামলায় জর্জরিত। ৮৬টি স্কুলের মামলা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এরমধ্যে ৭৬টি রীট হয়েছে, আপিল বিভাগে আছে ২টি,রিভিউ/রিভিশনে আছে ২টি, কন্টেপ্ট পিটিশন একটি, দেওয়ানিতে রয়েছে ৪টি এবং ফৌজধারি রয়েছে একটি মামলা। শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, উচ্চ আদালতের ৮৬ টি মামলার মধ্যে গত এক বছরে আমরা ২১টি মামলার নিস্পত্তি করিয়েছি। বাকিগুলো দ্রুত নিস্পত্তির চেষ্টা চলছে। বিরোধ ও মামলার কারণে স্কুলগুলোতে লেখাপড়ার মান ঠিক রাখা যাচ্ছে না। শিক্ষকদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে অসন্তোষ। এক কথায় শিক্ষার পরিবেশ হারাচ্ছে। মামলা চালাতে অর্থের ব্যায় করতে গিয়ে স্কুলের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, অর্থ সংকটে পড়ে স্কুলগুলো। আমি আমার কর্মকালীন সময় এসব বিরোধ ও মামলা নিস্পত্তিতে উদ্যোগ নেবো, গঠন করবো বিশেষ মনিটরিং সেল।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT