খানাখন্দেভরা পোর্ট রোড ঘীরে বেড়েছে চাঁদাবাজি খানাখন্দেভরা পোর্ট রোড ঘীরে বেড়েছে চাঁদাবাজি - ajkerparibartan.com
খানাখন্দেভরা পোর্ট রোড ঘীরে বেড়েছে চাঁদাবাজি

3:52 pm , November 30, 2024

বাজার কমিটি ও বিআইডব্লিউটিএর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ রাস্তার দুপাশেই সারি সারি ভ্যান-রিকশা বোঝাই তরিতরকারি, আলু পিঁয়াজ, চাল, কলা, পেঁপে সহ বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলমূল। এছাড়াও রয়েছে ঝুড়ি নিয়ে বসা মাছের বাজার। রাস্তার প্রায় অর্ধেক জুড়ে বিভিন্ন হকারদের স্থায়ী ব্যবসা চলছে। রাস্তার দুইপাশে অসংখ্য ভ্যান প্রশস্থ রাস্তাটিকে সংকুচিত করে ফেলেছে। যানজট এখানে নিত্যদিনের সাথী। জনভোগান্তি চরমে। রাস্তা দখল করে ব্যবসা করা প্রতিটি ভ্যান থেকে ৪০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে পোর্ট রোড বাজার কমিটি। এদিকে বাজারের সামনে ও ভিতরেও রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় দোকান। সেগুলো থেকেও প্রতিদিন একশ থেকে দুইশ করে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। বাজারের ইজারাদার খান হাবীব পলাতক থাকায় তার ভাই বিএনপি নেতা খান কামাল, জহির সিকদার সহ কয়েকজন এখন এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানালেন স্থানীয়  ব্যবসায়ীরা। তারা আরো জানান, সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ছিলো বরফকল এলাকায়। সেটিকে ষড়যন্ত্র করে বন্ধ করা হয়েছে। সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চলমান থাকলে এখনকার এই ইজারাদারদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে যেত। জানা গেছে, চলতি বছরের জুনে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকায় এই বাজারের ইজারা নিয়েছেন মৎস্য শ্রমিকলীগ নেতা খান হাবিব। তার স্ত্রীর নামে এ ইজারা নেওয়া হয়। বিএনপি ও খান হাবীবের লোকজন  মিলে এই বাজার চালাচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা তাদের আয় বাড়াতে পোর্ট রোড সড়কের দুপাশে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে ভাসমান বাজার বসিয়ে তদারকি করছে। এতে করে পোর্ট রোড বাজারের সামনের ও ভিতরের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবী তাদের।  এছাড়াও লঞ্চঘাট পর্যন্ত পুরো সড়কের দুপাশে ফুটপাত দখল করে শত শত স্থায়ী ও ভাসমান দোকান দেখা গেল শনিবার দুপুরেও। এই ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করে চাদা আদায় করে আরেকটি গ্রুপ। পোর্ট রোড নিয়ে ইতিপূর্বে অনেকবার সংবাদ হয়েছে। সড়কটি সিটি করপোরেশনের না হওয়ার কারণে এটির ভাগীদার বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক নিজেও এই টাকার ভাগ নিচ্ছেন বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
সরেজমিনে একতলা লঞ্চঘাট থেকে পোর্ট রোড পর্যন্ত চলতে গিয়ে ভাঙাচুরা সড়কে অসংখ্যবার হোঁচট খেতে হল। অথচ এই সড়কে সাধারণ পথচারী শুধু নয়, প্রতিনিয়ত চলাচল করেন প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তারাও। কেননা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের উপর উপজেলা ভূমি অফিস, পাইকারী ও খুচরা বাজার ছাড়াও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রয়েছে আবাসিক হোটেলসহ আরো অনেক কিছু। ঐতিহ্যবাহী পোর্ট রোড বাজারে যেতে হলে এই সড়কের বিকল্প নেই। তবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হলেও এই সড়কটি বিআইডব্লিউটিএর বলে জানালেন সড়কের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। পোর্ট রোড নামে পরিচিত এই সড়কের ৪০০ মিটারের মতো অংশের বিভিন্ন সময় নামমাত্র সংষ্কার হয়েছে।  যে কারণে পোর্ট রোড বাজারে আসা হাজার হাজার মানুষের চরম ভোগান্তি এই সড়কে। এর উপর পায়েচলা পথটুকু পুরোটাই দখল করে চা, সিগারেট, খাবারের দোকান ছাড়াও বড় ব্যবসায়ীদের মালামাল এবং ভাসমান ভ্যানের বাজার বসিয়ে রীতিমতো বিরক্তিকর পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এরপর রয়েছে ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল। চালকদের অভিযোগ, এই সড়কে চলতে গিয়ে উল্টে গিয়ে হাত-পা ভেঙেছেন অসংখ্য যাত্রী। আবার কত যে ইজিবাইক ও অটোরিকশা নষ্ট হয়েছে তার হিসাব নেই।
এখানে বাজার করতে আসা বাকেরগঞ্জের দুধল ইউনিয়নের সুন্দরকাঠী গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ হাওলাদার বলেন, আমাদের গ্রামের রাস্তাও এর চেয়ে ভালো।
এদিকে পোর্ট রোড বাজারের ঠিক সামনের সড়ক কিন্তু পাকা এবং সিমেন্ট ঢালাই। এখানের প্রবীণ ব্যবসায়ী দুলাল ফরাজি বলেন, গত ১৫ বছর ধরেই এই সড়কটি এভাবে পড়ে আছে। একতলা লঞ্চঘাট এলাকার বালুরমাঠ টেম্পুস্ট্যান্ড থেকে পোর্ট রোড ব্রীজ পর্যন্ত এই সড়ক বিআইডব্লিউটিএর অধীনে। সিটি করপোরেশনের হলে এতোদিনে এটিও এই সামনের অংশের মতোই সিমেন্ট ঢালাই হয়ে যেত।
বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ  এ বিষয়ে অবগত থাকলেও তারা হবে হচ্ছে বলে সময় পার করছেন বলে জানালেন একাধিক ব্যবসায়ী।
জানা গেছে,  প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ প্রথম এই সড়কের পুরো নির্মাণ কাজ করেছিলেন। তখনও বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি করেছিল। কিন্তু হিরণ তা কর্ণপাত করেননি। তিনি জনস্বার্থে সড়কের নির্মাণ শেষ করেন। এরপর আর এই সড়কের খোঁজ কেউ রাখেনি। পাইকারী তিন-চারটি বাজার ও শিল্প কারখানার কারণে প্রতিদিন অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে এই সড়কে। ফলে ধীরে ধীরে সড়কটির এই করুন পরিণতি হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সড়কটি বিআইডব্লিউটিএর অধীনে এটা সঠিক। তবে এটির রক্ষণাবেক্ষণ নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তরের। বন্দর কর্তৃপক্ষের নয়। তবে শুনেছি সড়কটি মেরামতের জন্য ঢাকায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। হয়তো খুব শীঘ্রই এটির কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। ফুটপাত দখল ও ভ্যান বসিয়ে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না দাবী করে বলেন, ফুটপাতের দায়িত্ব বরিশাল সিটি করপোরেশনের।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল বারী বলেন পোর্ট রোডে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজীর খবরটি বিভিন্ন মাধ্যমে আমার কাছে এসেছে। এটা বরদাস্ত করা হবে না। আমরা বাজার ইজারা দেই, রাস্তা না। মানবিক কারনে অনেকে রাস্তায় দোকান নিয়ে বসে। এটা হয়ত বিবেচ্য হতে পারে। কিন্তু এসব দোকান থেকে ইজাদাররা বা অন্য কোন লোক চাঁদা নিবে তা হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে খুব শীঘ্রই অ্যাকশন শুরু হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT