সন্ত্রাস আর মাদকের আখড়া বরিশালের নদী তীরবর্তী এলাকা ॥ আল আমিন গ্রুপ আতঙ্কে ঘরছাড়া মানুষ সন্ত্রাস আর মাদকের আখড়া বরিশালের নদী তীরবর্তী এলাকা ॥ আল আমিন গ্রুপ আতঙ্কে ঘরছাড়া মানুষ - ajkerparibartan.com
সন্ত্রাস আর মাদকের আখড়া বরিশালের নদী তীরবর্তী এলাকা ॥ আল আমিন গ্রুপ আতঙ্কে ঘরছাড়া মানুষ

4:10 pm , September 5, 2024

বিএনপির ৬ কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে আলামিন বাহিনী

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সন্ত্রাসীরা কতটা ভয়ঙ্কর হলে পুলিশের সামনে থেকে ধরে নিয়ে একজনকে কোপাতে পারে, আর যা দেখে উদ্ধার করাতো দূরের কথা ভয়েই পালিয়ে যায় বরিশাল মডেল থানা পুলিশ। এলাকাবাসী মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে যাওয়া আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে এসেও মেরে ফেলতে পারে আতঙ্কে পালিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে আহতরা। এ চিত্র বরিশালের ১১ নং ওয়ার্ডস্থ স্টেডিয়াম কলোনীর। গত ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার রাতে ৫/৬ জনকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করার ঘটনার বর্ণনা দেন চাঁদমারি খেয়াঘাট ও মাদ্রাসা রোড এলাকার বাসিন্দারা।
বরিশালের কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী এলাকার চাঁদমারি খেয়াঘাট সংলগ্ন খালের ওপাড়েই ১১ নং ওয়ার্ডের স্টেডিয়াম বা বঙ্গবন্ধু কলোনী। যেখানে প্রায় প্রতিদিনই মাদক ও চাঁদাবাজি টাকার ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে খুনোখুনি লেগেই আছে। বলা যায়, সন্ত্রাস আর মাদকের আখড়ায় পরিনত হয়েছে বরিশালের এই নদী তীরবর্তী এলাকার কলোনীগুলো। ১০ নং ওয়ার্ড ডিসিঘাট থেকে শুরু করে চাঁদমারি খেয়াঘাট ও ১১ নং ওয়ার্ড ত্রিশ গোডাউন পর্যন্ত কীর্তনখোলা নদীর পাড় পুরোটাই এই মাদক সন্ত্রাসীদের দখলে। আর এখানে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পল্লান গ্রুপের তৎপরতা। এরা পুরো স্টেডিয়াম কলোনীতে বংশপরম্পরায় রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। যখন যে সরকার আসে সেই সরকারের নেতাদের ছত্রছায়ায় এদের দাপট চলে বলে জানালেন একাধিক এলাকাবাসী।  ১০ নং ওয়ার্ড এর সাবেক কাউন্সিলর এটিএম শহীদুল্লাহ কবীরও এদের ভয়ে আতঙ্কিত থাকেন বলে জানান তিনি। এই মুহূর্তে এদের পরিচয় আওয়ামী লীগের ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন ও  ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মজিবর রহমানের লোক এরা। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পলায়নের কোনো প্রভাবই এখানে পড়েনি। জয়নাল আবেদীন পলাতক থাকলেও কাউন্সিলর মজিবর বহাল তবিয়তে এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে জানালেন স্টেডিয়াম কলোনীর কয়েকজন বাসিন্দা। এখানে আল আমিন এর নেতৃত্বে পল্লান গ্রুপের ভয়ে গত রাত থেকে ঘরছাড়া ১০/১২ জন লোক জড়ো হয়েছেন বেলস পার্কের বিপরীতে এলজিআরডি ভবনের সামনে। সেনাবাহিনী বরিশাল জোনের কর্মকর্তা মেজর রাশেদ খান এর কাছে অভিযোগ নিয়ে আশ্রয় চাইতে এসেছেন তারা। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বুধবার রাত আটটার দিকে চাঁদমারি মাদ্রাসা সড়ক থেকে সুমন নামের এক যুবককে ধরে নিয়ে যায় পল্লান গ্রুপের আলামিনসহ কয়েকজন। সুমনকে বাঁচাতে তারা থানায় অভিযোগ জানিয়ে পুলিশের সাহায্য চায়। পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দা ফেরদাউস হাওলাদারসহ তিন-চার জনকে সাথে নিয়ে নদী তীরবর্তী মাদক ব্যবসায়ী সুমি নামে এক মহিলার ঘর থেকে সুমনকে উদ্ধার করে ফেরার পথে পল্লান গ্রুপের ২০-৩০ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপরই হামলা চালাতে চেষ্টা করে। এতে আহত সুমন ও ফেরদাউসকে ফেলে পুলিশ পালিয়ে যায়। আলামিন গ্রুপ তখন ফেরদাউস, আসলামসহ কয়েকজনকে ইচ্ছেমতো কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে ও মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। দু’জনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান জহিরুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা। এসময় একজন বয়স্ক লোক এগিয়ে এসে বলেন, আল আমিন, রাব্বি, বাদল, রাকিব, বাদল, মুন্না, ফারুক, মাদক সুমি, লিলি, নাজমা এরা একটা বিশাল গ্রুপ ডিসি রোডের ঈদগাহ কলোনী, কেডিসি কলোনী ও স্টেডিয়াম কলোনীতে মাদক ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। শুধু তাই নয় রসুলপুর ও পলাশপুর কলোনিও চলে এদের নিয়ন্ত্রণে।  এদের মনমতো কেউ না চললেই তারা আর কলোনীতে থাকতে পারে না। ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন ও ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মজিবর যৌথভাবে এদের নিয়ন্ত্রণ করে। বৃদ্ধ কাঁদতে কাঁদতে আরো বলেন, এদের ভয়ে গত দুটি বছর আমি পালিয়ে বেড়িয়েছি। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ফিরে এসে দেখি সবাই পালালেও এরা কেউই পালায়নি। এরা এখন রাতারাতি নিজস্ব কয়েকটি গ্রুপ তৈরি করে নিয়েছে। কেউ চরমোনাই ইসলামি আন্দোলন, কেউ বিএনপি আবার এক গ্রুপ এখনো কাউন্সিলর মজিবর ও আওয়ামী লীগ হয়ে কাজ করছে। যেদিকে পাল্লা ভারী হবে, সেদিকের লোক হয়ে যাবে এই পল্লান গ্রুপ। এদের নারীরা আরো ভয়ঙ্কর বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল মডেল বা কোতোয়ালি থানায় এদের সকলের নামেই রয়েছে একাধিক মামলা। মাদক সুমি, নাজমা ও লিলি বস্তি এলাকার নারীদের নিয়ন্ত্রণ করে। ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ নিষিদ্ধ সব মাদক বস্তির বিভিন্ন ঘরে লুকিয়ে রাখা ও প্রয়োজনমত বের করে দেয়াই এদের প্রধান কাজ। কোনো তদন্ত কর্মকর্তা এলে এরা ধর্ষণের অভিযোগ আনার ভয় দেখায় বলেও জানা গেছে।  বরিশালের নদী তীরবর্তী এলাকার ডিসিঘাট থেকে ত্রিশ গোডাউন ৫ কিলোমিটার পথে প্রায় ৫০ হাজার বস্তিঘরই জয়নাল আবেদীন ও মজিবর কাউন্সিলরের দখলে। আগে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ছিলো এদের সরাসরি গডফাদার। মেয়র পরিবর্তন হবার পর থেকে এরা স্থানীয় কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে বলে জানান চাঁদমারি মাদ্রাসা রোডের বাসিন্দারা। তিনি প্রতিনিধি পাঠিয়ে এলাকাবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, সভা শেষে শুনবেন এলাকাবাসীর বক্তব্য। আর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন শুধু। আর কিছু বলতে নারাজ। যদিও চাঁদমারি মাদ্রাসা রোডের বাসিন্দারা জানান, এসআই মিজান সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক পল্যান গ্রুপের আল আমিনের। এই দুর্ধর্ষ আল-আমিনের বিরুদ্ধে থানায় ডজন খানেক মামলা থাকলেও প্রভাবশালীদের তৎপরতার কারণে সে ধরা পড়ছে না। মাদকের গডফাদার খ্যাতে আল-আমিনের ভয়ে এলাকায় টু শব্দ পর্যন্ত করতে পারে না। এদিকে সন্ত্রাসী আল-আমিনসহ অন্যান্যদের সন্ত্রাসীদের ধরতে সেনাবাহিনী অভিযান করলেও অভিযানের পূর্বেই তারা ট্রলার যোগে নদীর ওপারে পালিয়ে যায়।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT