4:14 pm , August 24, 2024
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ছোট দুই শিশু তাদের মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে এসেছেন বন্যার্তদের সাহায্য করতে। আবার রিকশাচালক রিকশা থামিয়ে তার উপার্জন দিয়ে যাচ্ছেন দানবাক্সে। ২৪ আগস্ট নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউনহলের সামনে দেখা গেছে বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য আসা মানুষের ঢল। পথচারী থেকে ছোট শিশু, কর্মজীবী থেকে ভিক্ষুক, জাত-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ এসে দাঁড়িয়েছেন বানভাসি মানুষের দুঃখ কষ্টের কিছুটা ভাগীদার হতে। টাউনহলের সামনে তখন গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির টেবিল পেতে বসেছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ এবং বৈষম্যবিরোধী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ববি শিক্ষার্থীরা। মোট তিনটি গ্রুপ। তিনভাগে বিভক্ত হলেও আদতে সবাই এক। সকলের সংগৃহীত দানকৃত টাকা, বস্ত্র বা অন্যান্য উপকরণ জমা হচ্ছে টাউনহলের ভিতরে।
আবহাওয়া পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে এখানে। বরিশালের আকাশে তাই রোদ মেঘের খেলা চলছে শনিবার ভোর থেকেই। সকাল ১০টা থেকে অশ্বিনী কুমার টাউনহলকে ঘীরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও সামনের সড়কে সদর রোডে ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দাবী দাওয়া তুলে ধরছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন, নারী ফোরাম, বাসদ বরিশাল এবং একযুগ ধরে নিখোঁজ দুই সন্তানের মা ও স্বজনরা।
২৬ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক- অসাম্প্রদাযিক ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের দাবিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বরিশালের সদর রোডে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে। এতে নেতৃত্ব দেন নারী উদ্যোক্তা রীতা বেগম।
দিনাজপুরে ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট কিশোরী ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনার স্মরণে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও সাম্প্রতিক ধর্ষণের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে মহিলা ফোরামের মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন বাসদ নেত্রী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। এতে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ফোরাম বরিশালের সভাপতি মাফিয়া বেগম। এরপরই বন্যাদুর্গত এলাকাকে উপদ্রুত এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবীতে মিছিল করে বরিশাল বাসদ।
একইসময় একজন মা ফিরোজা বেগম গুম হওয়া সন্তানকে ফিরিয়ে আনার বা সন্ধান দেওয়ার দাবীতে মানববন্ধন করেন টাউনহলের সামনে। রিজিয়া বেগম ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট চট্রগ্রাম থেকে গুম হয়ে যাওয়া বরিশাল সরকারী বিএম কলেজ ছাত্রদল নেতা ও তৎকালীন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ফিরোজ খান কালুর মা। একইসময় ঢাকার মিরপুর থেকে গুম হয়ে যায় তার সহদর সরকারী বরিশাল কলেজ ছাত্রদল নেতা মিরাজ খান। একযুগ পার হলেও তাদের কোনো সন্ধান না পেয়ে মা ফিরোজা বেগম, স্ত্রী আমেনা বেগম এবং সন্তান জিসানের আহাজারি যেন থামছেই না। আয়না ঘর থেকে সবাইকে উদ্ধার করা হলেও জিসানের বাবা ও চাচা কেউ ফেরেনি এখনো। তারা বেঁচে আছে না তাদের হত্যা করা হয়েছে এটুকু তথ্যের নিশ্চয়তা চায় এই পরিবার। উপার্জনহীন পরিবারটির মানবিক জীবনযাপন গত একযুগ ধরে স্বীকার করেন বরিশালের বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা হয় তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান নিখোঁজ কালুর স্ত্রী আমেনা বেগম বৃষ্টি।
এদিকে গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির মাইকিং এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাসপূর্ণ দান প্রদান নিয়ে টাউনহলের সামনে রীতিমতো জনসমুদ্র তৈরি হয়েছে। গণত্রান সংগ্রহ করতে দেখা যায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বরিশালের অন্যতম সমন্বয়ক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুজয় শুভ ও নাভিদ নাসিফ এর সাথে কথা বলে জানা যায়, শনিবার বরিশালের সাতটি পয়েন্টে সাতজন সহ সমন্বয়কের নেতৃত্ব গণ ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি চলছে। বরিশালের রূপাতলী, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল, চৌমাথা, অশ্বিনী কুমার টাউনহল, বেলস পার্ক, আমতলা ও ববি গ্রাউন্ড ফ্লোরে এই সংগ্রহ চলছে বলে জানান সুজয় শুভ।
এসময় নাভিদ নাসিফ বলেন, তাদের একটি টিম অলরেডি কুমিল্লা নোয়াখালী এলাকার জন্য ত্রাণ ও নগদ টাকাসহ যাত্রা করেছে। গত দুদিনে তারা প্রায় পনের লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছেন। তা দিয়ে জরুরী ঔষধ, চাল ও পানিসহ নগদ টাকা সহযোগিতা নিয়ে তাদের টিম কুমিল্লার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলে জানান তিনি।