বরিশাল বিআরডিবি : দুর্নীতি ও অনিয়মের রাণী উপ-পরিচালক সুপ্রিয়া বরিশাল বিআরডিবি : দুর্নীতি ও অনিয়মের রাণী উপ-পরিচালক সুপ্রিয়া - ajkerparibartan.com
বরিশাল বিআরডিবি : দুর্নীতি ও অনিয়মের রাণী উপ-পরিচালক সুপ্রিয়া

4:24 pm , April 25, 2024

মহাপরিচালকের কাছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিখিত অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) বরিশাল এর উপ পরিচালক সুপ্রিয়া বর’র বিরুদ্ধে অনিময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারী অর্থ আত্মসাৎ,অধীনস্থ  কর্মকর্তা-চারীদের জিম্মি করে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ অন্তত ১৮  অভিযোগ এনে বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ডের মহা পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন জেলার বিআরডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এই অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন। অভিযোগকারীরা বলেন, এতদিন বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই তারা মহাপরিচালক বরাবরে অভিযোগ করেছেন। তবে এসব অভিযোগ কোনভাবেই আমলে নিচ্ছেন না সুপ্রিয়া বর। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ নিয়ে আমি মোটেও ভাবছি না। কারন কাজ করতে গেলে অভিযোগ  হবে এটাই স্বাভাবিক। বিআরডিবির মহাপরিচালক (গ্রেড-১) আব্দুল গাফফার খান বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি। আমরা বিষয়টি প্রথমে তদন্ত করে দেখব। অভিযোগ প্রমানিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বরিশালে উপপরিচালক হিসাবে যোগদানের পর থেকেই  সুপ্রিয়া বর বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অতিমাত্রায় কর্তৃত্বপরায়ণ, দুর্ব্যবহার,  অশ্রাব্য ও অশালীন ভাষা প্রয়োগ ও অহেতুক হয়রানি সহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। এমনকি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার সময়ে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রেও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য অহেতুক হয়রানি করে থাকেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় ।
অভিযোগে বলা হয় ২০২২ সালে জেলা দপ্তরে আইপিএস ক্রয়ের নামে প্রত্যেক উপজেলা থেকে ৯ হাজার টাকা করে মোট ৯০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে সম্পূর্ণ টাকাই আত্মসাৎ করেন তিনি। একই বছরে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হলে সেখান থেকেও তিনি প্রত্যেক উপজেলা থেকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ২০ হাজার টাকা করে মোট ২ লক্ষ টাকা চাঁদা হিসেবে উত্তোলন করেন এবং উক্ত টাকা পরবর্তীতে আত্মসাৎ করেন। চলতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসে বরিশাল জেলা দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ৩ দিনের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত প্রশিক্ষণের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য সম্মানী ভাতা ও দুপুরের খাবারের টাকা সহ সর্বমোট ২৯ হাজার টাকা প্রদান না করে সে টাকাও অভিনব উপায়ে হাতিয়ে নেন সুপ্রিয়া। গত ৫ মার্চ এজি অফিস  কর্তৃপক্ষ জেলার দশটি উপজেলায় অবস্থিত বিআরডিবির সকল অফিসে নিরীক্ষা কার্যক্রম  পরিচালনা করে। সুপ্রিয়া বর এজি অফিস কর্তৃপক্ষকে উৎকোচ দিতে হবে বলে ১০ টি উপজেলা অফিস থেকে ২৫ হাজার টাকা করে আড়াই লাখ টাকা উত্তোলন করেন।
এছাড়া জেলা দপ্তরে প্রাপ্য ফটোকপি মেশিন সহ অন্যান্য আসবাবপত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একজন উপরিচালকের উপজেলা দপ্তর ভ্রমণ করা তার অফিসিয়াল কর্তব্যের মধ্যে পড়লেও তিনি উপজেলা দপ্তরসমূহ ভ্রমণকালীন সময়ে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করতে বলেন এবং সরবরাহককৃত খাবার দাবার তার মনপুত না হলে উপজেলার কর্মকর্তাদের তিনি নানাভাবে অপদস্ত করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি উগ্র সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগেও অভিযুক্ত।
একজন উপ-পরিচালকে  সরকারি গাড়ি বরাদ্দ করা হয় উপজেলা দপ্তর সহ অন্যান্য অফিসিয়াল কাজে ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু প্রায়শই তিনি গাড়ি ব্যবহার না করে বরাদ্দকৃত তেলের বিল ঠিকই উত্তোলন করে নেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে খুলনা জেলায় তার নামে পাঁচ কাঠার একটি দামি প্লট রয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় এর পূর্বে ২০১৫ সালে নড়াইল জেলায় উপপরিচালকের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি নানাবিধ আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে  সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন এবং পরবর্তীকালে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের ( বিআরডিবি’র) মহাপরিচালক তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেন এবং শাস্তি স্বরূপ তার কয়েকটি বার্ষিক বর্ধিত বেতনও স্থগিত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল জেলা বিআরডিবি অফিসে কর্মরত একাধিক কর্মচারী বলেন, অনেক সহ্য করেছি আর না। এভাবে চাকরি করা যায় না। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিজি স্যার ব্যবস্থা না নিলে আমরা গণবদলীর জন্য আবেদন করব। না হয় প্রকাশ্যে আন্দোলনে যাব। এতদিন বিআরডিবির সম্মানের কথা চিন্তা করে মুখ খুুলিনি।
অভিযোগের বিষয়ে সুপ্রিয়া বর বলেন, আই ডোন্ট কেয়ার। কে কি করলো তা নিয়ে ভাবার সময় নেই। প্রতিবেদক কে তিনি বলেন, আশা করি আপনিও এর পিছনে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। সত্যি অভিযোগ করে থাকলে কর্তৃপক্ষ তা দেখবে। বিআরডিবির মহা পরিচালক আব্দুল গাফফার খান বলেন, আমরা কোন অভিযোগ এড়িয়ে যাই না। যেতেু অভিযোগ এসেছে আমি তদন্ত করে দেখব। প্রমানিত হলে বদলীসহ বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT