আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর পুনঃনির্মাণ শুরু আশ্রিত জীবনে ফুটছে আশার আলো আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর পুনঃনির্মাণ শুরু আশ্রিত জীবনে ফুটছে আশার আলো - ajkerparibartan.com
আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর পুনঃনির্মাণ শুরু আশ্রিত জীবনে ফুটছে আশার আলো

4:11 pm , March 4, 2024

চরফ্যাসন প্রতিবেদক ॥ ভোলার চরফ্যাসনে আশ্রায়ন প্রকল্পের জরাজীর্ণ  ঘরগুলো পুনঃনির্মাণ শুরু হওয়ায় আশ্রিত হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মুখে হাসি ফুটেছে। প্রথম ধাপে পুনঃনির্মাণ করা এমন ৩শ ৭০টি ঘর শীঘ্রই আশ্রিত পরিবারগুলোকে বুঝিয়ে দেয়া হবে এবং বাকী ১ হাজার ২০টি ঘর পর্যায়ক্রমে পুনঃনির্মাণ করা হবে  বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক জানিয়েছেন। জানাগেছে, গত বছরের জুলাই মাসে  চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে নওরীন হক যোগদানের পরপর আশ্রায়ন প্রকল্পগুলো ঘুরে দেখেন। এসময় আশ্রিত আশ্রিতদের দুর্দশা এবং ঘরগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন তিনি । প্রকল্পের ঘরে আশ্রিত হতদরিদ্র অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছু করার জন্য উদ্যোগী হন এবং মুজিববর্ষের ঘরের আদলে আশ্রায়ন প্রকল্পের সবগুলো ঘর পুনঃনির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করেন। প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান করে এমন জরাজীর্ণ ১ হাজার ৩শ ৯০টি ঘরে আশ্রিতদের তালিকা প্রস্তত করেন। প্রেরিত প্রস্তাব অনুযায়ী গত নভেম্বর মাসে  মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম ধাপে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃনির্মাণের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মধ্যেও পুনঃনির্মাণ কাজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চালিয়ে এখন পুনঃনির্মিত ঘরগুলো আশ্রিতদের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তত আছে।  আশ্রয়ন প্রকল্পে আশ্রিত পরিবার এবং প্রকল্পের ঘর পুনঃনির্মাণে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এই প্রকল্প নিয়ে আশ্রিতদের জীবনের হতাশা আর আশাজাগানিয়া অজানা অনেক কথাই জানাগেছে। হাজারীগঞ্জের ঝিনুক আশ্রায়নে আশ্রিত সত্তর বছরের বৃদ্ধা জোবেদা জানান, ৩০ বছর আগে দিনমজুর  স্বামী মোস্তফা মারা যান। নিঃসন্তান জোবেদার যেমন আপনজন আর কেউ ছিল না তেমনি ছিল না মাঠাগোজার ঠিকানা।  বিশাল এই পৃৃথিবীতে ভূমিহীন ইসমাইল-জোবেদার আপনজন বলতে যেমন কেউ নেই, তেমনি ছিল না নিজের কোন জমি বা  মাথাগোঁজার ঠাই । নৌবাহিনীর করুণায় ২০ বছর আগে হাজারীগঞ্জের ঝিনুক আশ্রায়ন  প্রকল্পের একটি ঘর পান জোবেদা। সেই ঘরে হয়ে উঠে জোবেদার  ঠিকানাহীন জীবনের ঠিকানা। সময়ের ব্যবধানে ঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে যায়। মেরামত করার সামর্থ ছিল না পেশায় ভিক্ষাজীবী জোবেদার। পলিথিন মুড়িয়ে ওই ঠিকানা আকঁড়ে ছিলেন তিনি । এখন সরকারের  উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন জোবেদার জরাজীর্ণ  ঘরটি পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করেছে ।ফলে  জীবনসাহ্নে এসে সেমি পাকা ঝকঝক্ েএকটি নতুন ঘর জোবেদার জীবনে একঝলক হাসি হয়ে ধরা দিয়েছে। সব থেকেও সর্বহারা ষাটোর্ধ বিধবা ফাতেমার জীবনেও এক ঝলন হাসি হয়ে ধরা দিয়েছে আবাসন প্রকল্পের পুনঃনির্মাণ করা নতুন ঘর। ১৭ বছর আগে ২ ছেলে এবং ১ মেয়েকে রেখে মারা যান ফাতেমার স্বামী সামছুল হক। স্বামীর মৃত্যুর পর স্বজনরা স্বামীর ভিটে থেকে ৩ সন্তানসহ ফাতেমাকে উচ্ছেদ করে দেন। ফলে ঠিকানাহীন হয়ে পরেন ষাটোর্ধ বিধবা ফাতেমা। এই অবস্থায় ৯ বছর আগে হাজারীগঞ্জের ঝিনুক আশ্রায়ন প্রকল্পের জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত একটি ঘরে আশ্রয় নেন তিনি।পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় ঘরটি আর সংস্কার করাও হয়নি। এখন উপজেলা প্রশাসন  ঘরটি পুনঃনির্মাণ উদ্যোগ নেয়ায় মহাখুশি এই বিধবা।  পেশায় ভিক্ষাজীবী প্রতিবন্ধী ওমর ফারুক। বয়স ৭০ বছর। ২০ বছর আগে হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ঝিনুক আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি ঘর পান তিনি। এই ঘরে থেকেই  স্ত্রী জয়নব এবং ৫ ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে বিশাল সংসারের ভার বয়েছেন ভিক্ষা করেই। কর্মক্ষম হওয়ার পর ছেলেরা বিয়ে করে প্রতিন্ধী বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে অন্যত্র চলে গেছেন। বিয়ে করে মেয়ে চলে গেছেন স্বামীর কাছে। প্রতিবন্ধী এই বৃদ্ধ জরাজীর্ণ ঘরটি পলিথিলিন মুড়িয়ে রোদ- ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করলেও আর্থিক দৈণ্যতার কারণে ঘরটি সংস্কারের কথা চিন্তাও করতে পারেন নি। সেই ঘরটি এখন পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। ঘরটি পুনঃনির্মাণের  এই আয়োজন প্রতিবন্ধী ফারুক-জয়নব দম্পতির কাছে মেঘ চাওয়ার আগেই বৃষ্টি হয়ে ধরা দিয়েছে।  উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানাযায়, আশ্রয়হীন,ভূমিহীনের মতো  ভাসমান মানুষের নিজস্ব ঠিকানা নিশ্চিত করতে আশ্রায়ন প্রকল্প শুরু হয় এবং এসব প্রকল্পে নিজের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন জোবেদা, ফাতেমা আর ওমর ফারুকের মতো সমাজের চরম নিঃস্ব  অসহায়  ১ হাজার ৩শ ৯০টি চরম দরিদ্র পরিবার।এক যুগ বা তার চেয়েও বেশী আগে নির্মিত  আশ্রায়ন  প্রকল্পের ঘরগুলো সময়ের ব্যবধানে এখন জরাজীর্ণ এবং বসতির অনুপযোগী হয়ে পরেছে। দীর্ঘ এই সময়ে সরকারি ভাবেও ঘরগুলো সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।  কিন্ত দারিদ্রের কবলে পতিত অসহায় মানুষগুলোর  এসব ঘর সংস্কারের সামর্থ কখনো হয়ে উঠেনি। এমন বাস্তবতা দেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হকের উদ্যোগে  মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে আশ্রায়ন  প্রকল্পের জরাজীর্ণ  ১ হাজার ৩শ ৯০টি ঘর পুনঃনির্মাণের  উদ্যোগ গ্রহনের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়। যার প্রেক্ষিতে প্রথম পর্যায়ে চরফ্যাসনে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃনির্মাণ  কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীন হক জানান, ভাসমান দরিদ্র মানুষের আশ্রয় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে টিনের ছাউনী আর টিনের বেরা বেষ্টিত এসব ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো এতো জরাজীর্ণ যে তা সংস্কারের উপযোগীও নেই। তাই আশ্রিত পরিবারগুলোর দুর্দশা লাগবের কথা ভেবেই ঘরগুলো মুজিববর্ষের ঘরের আদলে পুনঃনির্মাণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে চরফ্যাসনে প্রথম ধাপে ৩শ ৭০টি ঘর পুনঃ নির্মাণ করা হচ্ছে।  ঘরগুলো পুনঃনির্মাণে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রত্যেকটি ঘর পুনঃনির্মাণে  ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা। সেমি পাকা এসব ঘরে থাকছে রঙ্গিন টিনের ছাউনি। বারান্দাসহ ২টি কক্ষ, রান্নাঘর  এবং একটি সংযুক্ত শৌচাগার । আছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং পাকা ঘাটলাসহ পুকুর।  ঘর পুনঃনির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর উপ-সচিব মো. আরিফূল ইসলাম সরদার জানান, প্রথম পর্যায়ে আশ্রীতদের জন্য ঘর গুলো পূর্ণঃনির্মান করে বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। পরবর্তীতে এসব ঘরের বাসিন্দাদের সরকারী নানান সুবিধার আওয়াতায় আনা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT