4:40 pm , June 15, 2023
কালিজিরা ফিডারে ওজোপাডিকোর দুই কর্মকর্তার বাসস্থানের কারণে লোডশেডিং নেই
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি আরো ভয়াবহ আকার ধারন করায় সান্ধ্য পীক আওয়ারের লোডশেডিং গত দুদিন ধরে মধ্যরাত পেরিয়ে ভোররাত পর্যন্ত প্রলম্বিত হচ্ছে। সোমবার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভোট পর্ব শেষ হবার পরে নগরীতেও লোডশেডিং পুরো মাত্রায় চলছে। নগরবাসীর অভিযোগ, ‘ভোট নেয়া শেষ হবার পরেই বিদ্যুৎ তার পুরনো আদলে ফিরেছে’। বৃহস্পতিবার রাতের প্রথম প্রহর থেকে সকাল পর্যন্ত খোদ বরিশাল মহানগরীতে বিদ্যুৎ সংকটে নাকাল হয়েছে নগরবাসী। এমনকি বৃহস্পতিবার সকালের বজ্রবৃষ্টিতে গোটা নগরীতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আরো একবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিনাঞ্চলে সান্ধ্য পীক আওয়ারে প্রায় সোয়া ৪শ মেগাওয়াট এবং ডে পীক আওয়ারে পৌনে ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে গত দুদিনে ঘাটতির পরিমান প্রায় ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ ঘাটতি সামাল দিতে যখন বরিশালের গ্রীড সাব স্টেশন ও ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশনের কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন, তখনই সেন্ট্রাল লোড ডেসপাস সেন্টার থেকে বরিশালের ২টি ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশনের পুরো সরবরাহ ব্যবস্থাই বন্ধ করে দেয়া হয় বৃহস্পতিবার। এসব বিড়ম্বনার মধ্যেও ঘাটতি হিসেব করে বিদ্যুতের সমবন্টন নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। সাথে দুর্বল বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকার মানুষ দুঃসহ বিড়ম্বনার শিকার। এমনকি বৃহস্পতিবার রাতে মহানগরীর পলাশপুর ও দপদপিয়া-২ সাব স্টেশন দুটির ৩৩ কেভি লাইন সেন্ট্রাল লোড ডেসপাস সেন্টার থেকে দূর নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় কেটে দেয়ার ফলে নগরীর প্রায় ৩০ ভাগ এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।
এ অবস্থাতেও বরিশাল মহানগরীর কালিজিয়া ফিডারে হিসেব মাফিক লোডশেডিং না করে অন্য ফিডারে বাড়তি বিড়ম্বনা চাপিয়ে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। ওই ফিডার এলাকায় বিতরণ কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র দুজন উর্ধ্বতন প্রকৌশলী উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একজন রুবেল কুমার দে আরেকজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহাদী হোসেনের বাসা বিধায় খুব বড় সংকট তৈরী না হলে সেখানের রেশনিং অন্য এলাকায় চাপিয়ে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বৃহস্পতিবার রাতের প্রথম প্রহরে নগরীর হাতেম আলী কলেজ ফিডারে লোডশেডিং বিশাল এলাকার মানুষের ঘুম কেড়ে নিলেও রাত পোহাবার সাথেই ভোর ৫টার দিকে পুনরায় লোডশেডিং করা হয় একই ফিডারে। প্রায় পৌনে ১ ঘন্টা পরে ওই ফিডারে বিদ্যুৎ ফিরলেও আধঘন্টার মধ্যেই মেঘের গর্জনের সাথে বৃষ্টিপাতে আবার একই পরিস্থিতির শিকার হন । বৃহস্পতিবার সকালের বজ্র বৃষ্টি পুরো নগরীর বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থাকেই বিপর্যস্ত করে দেয়।
অপরদিকে গত ৫ জুন থেকে কয়লার অভাবে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটটিও বন্ধ করে দেয়ায় জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সংকট বৃদ্ধির সাথে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ভোল্টেজ সমস্যায় শিল্প,বানিজ্য ও আবাসিক গ্রাহকদের দুর্ভোগ আরো একদফা বেড়েছে। দু মাস আগে ভোলাতে গ্যাস ভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াটের একটি বেসরকারী কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশন বন্ধ রয়েছে জরুরী রক্ষনাবেক্ষনের নামে। ফলে এ দুটি বড় মাপের উৎপাদন ইউনিট বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ সংকটের চেয়ে ভোল্টেজ সমস্যা আরো প্রকট হয়েছে। এমনকি ভোল্টেজ সংকটে দক্ষিণাঞ্চলসহ পশ্চিম জোনের ২১ জেলার প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদ্যুতিক সামগ্রীর সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিচালনও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পানির পাম্প ছাড়াও টিভি,ফ্রিজ, এয়ারকুলার সহ সব ধরনের বৈদ্যুতিক সামগ্রী।