3:21 pm , February 26, 2023

নভো এয়ার ২৮শ টাকায় ॥ ইউএস বাংলা এয়ার ৩ হাজার টাকা ॥ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৩২শ টাকা
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র আকাশ পথে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর রহস্যজনক ব্যর্থতার পরে এবার রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি উল্টোপথে হাটতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতু চালুর খোড়া অজুহাতে গত ৫ আগষ্ট থেকে প্রতিদিনের নিয়মিত ফ্লাইট সপ্তাহে ৩ দিনে হ্রাস করার পরে ১ মার্চ থেকে বরিশাল সেক্টরে বিমান এর ভাড়া ৩ হাজার থেকে ৩২শ টাকায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তবে একই দিন থেকে বেসরকারী নভো এয়ার ২৮শ টাকায় যাত্রী পরিবহণের ঘোষনা দিয়ে আবার ফিরছে বরিশালের আকাশে। ইউএস বাংলা এয়ার সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৫শ টাকা কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করে প্রতিদিন বিকেলে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনের পরে খুব শীঘ্রই বরিশাল সেক্টরে সকালের দিকে দ্বিতীয় ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহনের চিন্তা করছে। তবে সপ্তাহে ৪ দিন বিমান-এর ফ্লাইট না থাকার সুযোগে বেসরকারী এয়ারলাইন্সটি ১০ হাজার ৬শ টাকায়ও বরিশাল সেক্টরে যাত্রী পরিবহন করছে। একদিকে সপ্তাহে মাত্র ৩দিন ফ্লাইট পরিচালনা, অপর দিকে যাত্রী বান্ধব সময়সূচি না হওয়ায় রাষ্ট্রীয় বিমানে ভ্রমণ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের আগ্রহ ইতোমধ্যে তলানীতে ঠেকেছে। এমনকি বরিশাল সেক্টরের প্রতি বিমানের সীমাহীন উদাসীনতা ও অবহেলায় মাত্র ৬১ এ্যারোনটিক্যাল মাইলের দেশের স্বল্প দূরত্বের বরিশাল সেক্টরের আকাশ পথে বেসরকারী এয়ারলাইন্স প্রায়শই ঢাকাÑকোলকাতার চেয়েও বেশী ভাড়া আদায় করছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারন যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটির তেমন কোন মাথাব্যথা নেই। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র আকাশ পথে জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের উদাসীনতা ও অবহেলাকে ‘যাত্রীদের দুর্ভোগের বিনিময়ে বেসরকারী এয়ারলাইন্স-এর জন্য অনৈতিক সুবিধা প্রদানের নামান্তর’ বলেও অবিহিত করছেন অনেক যাত্রী। পাশাপাশি এ বিষয়টি আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচনসহ জাতীয় নির্বাচনেও সরকারী দলকে যথেষ্ট বেকায়দায় ফেলতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। ১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বরিশাল বিমানবন্দর ও জাতীয় পতাকাবাহী বিমান ফ্লাইট চালুর পারে দীর্ঘ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বরিশাল সেক্টরে বিমানের দৈনিক ফ্লাইট চালু হয়। সেই থেকে দুটি বেসরকারী এয়ারলাইন্স-এর সাথে সুষ্ঠু প্রতিযোগীতার মাধ্যমে এ সেক্টরে বানিজ্যিক পরিচালন অব্যাহত রাখছিল রাষ্ট্রীয় বিমান। অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের ২৭ জুন পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পরে একটি মহল তৎপর হয়ে ওঠে বরিশাল সেক্টরকে বেসরকারী এয়ারলইন্স-এর একক বানিজ্যের জন্য নির্দিষ্ট করতে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগাতে গত বছর ঈদ উল আজহা পরবর্তী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কর্মস্থলে ফিরে যাবার পরে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে চলাচল সাময়িকভাবে সীমিত থাকার সুযোগে বরিশাল সেক্টরে বিমানের দৈনিক ফ্লাইট সপ্তাহে ৩ দিনে হ্রাস করা হয়। এমনকি গত অক্টোবরের শেষ ভাগে কার্যকর শীতকালীন সময় সূচীতে বরিশাল সেক্টরে বিমানের সময়সূচী যাত্রী বান্ধব না হওয়ায় সাধারন যাত্রীরা রাষ্ট্রীয় বিমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে এবং অন্য ৬ দিন সকালে বরিশাল সেক্টরে বিমান চলাচল করলেও এখন তা দুপুরে নির্ধারন করায় রাষ্ট্রীয় বিমানে ভ্রমণে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী সাধারন ক্রমশ আগ্রহ হারাচ্ছেন। বর্তমানে বৃহস্পতি, শুক্র ও রোববার দুপুরের দিকে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও অবশিষ্ট ৪ দিন বিকেলে বেসরকারী এয়ারলাইন্সে ৩ হাজার টাকার টিকেট ১০ হাজার ৬শ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। ‘ফলে রাষ্ট্রীয় বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটের কোন বিকল্প নেই’ বলে মনে করছেন যাত্রীরা। এ ব্যাপারে বিমানের বরিশাল সেলস অফিসের জেলা ব্যবস্থাপকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন ‘এখানের সার্বিক পরিস্থিতি কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করা হয়ে থাকে। বিষয়টি নিয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিমের সাথে সেল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, বরিশাল সেক্টর নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহনের চেষ্টা চলছে। বরিশাল সেক্টরের ফ্লাইট সময়সূচি যাত্রীবান্ধব নয়। এরফলে ‘ফ্লাইট লোড হ্রাস’ পেয়েছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই ইতিবাচক ধারায় ফেরার চেষ্টা চলছে’ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্রু সংকটের কারণেও খুব দ্রুত সব কিছু ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে নানামুখি আত্মঘাতি কর্মকান্ড ও যাত্রীবান্ধব সময়সূচি থেকে সরে আসার পরেও গত বছর বরিশাল সেক্টরে বিমানে যাত্রী ভ্রমণের হার ছিল ফ্লাইট প্রতি ৭০ শতাংশের বেশী। এমনকি বরিশাল সেলস অফিসে রাজস্ব আয় এখনো লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুন বলে জানা গেছে। সাধারন যাত্রীদের তরফ থেকে আসন্ন গ্রীষ্মকালীন সময়সূচিতে বরিশাল সেক্টরে প্রতিদিন সকালে ও বৃহস্পতিবার বিকেলে ফ্লাইট পরিচালন-এর পাশাপাশি এখান থেকে যশোর ও চট্টগ্রামে ফ্লাইট চালুর দাবী জানান হয়েছে। এ ব্যাপারে বিমানের পরিচালক ( প্রশাসন, মার্কেটিং ও সেলস) সিদ্দিকুর রহমানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘এয়ারক্রাফট ও ক্রু সংকটের কারণে বরিশাল সেক্টর নিয়ে আমরা কিছু সমস্যায় আছি। বিদ্যমান ফ্লাইটের পাশাপশি আমরা চেষ্টা করছি বরিশাল থেকে চট্টগ্রামেও ফ্লাইট চালু করতে’। তবে ঠিক কবে নাগাদ এটা সম্ভব হবে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু না বললেও ‘যত দ্রুত সম্ভব এটা করার চেষ্টা চলছে’ বলে জানান তিনি। যাত্রী সাধারনের পক্ষ থেকে বরিশাল সেক্টরে বিদ্যমান ফ্লাইটগুলো সকালে পরিচালনের পাশাপাশি ঢাকা-বরিশাল-চট্টগ্রাম-ঢাকা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-বরিশাল-ঢাকার আকাশ পথে সকালের দিকে পরিচালনের দাবী জানান হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা-বরিশালÑযশোর-ঢাকা এবং ঢাকা-যশোর-বরিশাল-ঢাকা রুটেও বিমান ফ্লাইট পারিচালনের দাবী জানান হয়েছে। এদিকে অন্যসব সেলস অফিসের মত বিমানের বরিশাল সেলস অফিস থেকেও দেশ বিদেশের যেকোন রুটের টিকেট সংগ্রহের পাশাপাশি ফ্লাইট সিডিউল নিশ্চিতসহ যেকোন সেবা প্রদান করায় আকাশ পথের যাত্রীরা নিজের এলাকা থেকেই বিমানের যেকোন সেবা লাভ করছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহল।