ভঙ্গুর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে আরো বিপর্যস্ত করছে কীর্তনখোলায় ড্রেজিং ভঙ্গুর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে আরো বিপর্যস্ত করছে কীর্তনখোলায় ড্রেজিং - ajkerparibartan.com
ভঙ্গুর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে আরো বিপর্যস্ত করছে কীর্তনখোলায় ড্রেজিং

3:54 pm , December 13, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নাব্যতা উন্নয়নের নামে কীর্তখোলায় খননকৃত পলি নদীতেই অপসারণের উল্টো এর তলদেশ আরো ভরাট হচ্ছে। এতে বরিশাল মহানগরীর ভঙ্গুর পয়: নিষ্কাশন ব্যবস্থা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরায় মাঝারী বর্ষণেই গোটা মহানগরী পানির তলায় চলে যাচ্ছে। মারাত্মক জলাবদ্ধতায় মহানগরীতে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে  বার বার। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ’র বিবেকহীন এ কর্মকান্ড নিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ন্যূনতম কোন মাথা ব্যথা নেই। প্রতি বছরই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদী বন্দরের নাব্যতা উন্নয়নের নামে কীর্তনখোলা থেকে কম-বেশী ১ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণ করে তা নদীতেই ফেলায় বন্দরের ভাটি এলাকায় তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বন্দরের ভাটিতে খালগুলোর মোহনায় দেড় থেকে ২ মিটার পর্যন্ত পলি জমে নগরীর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে রুদ্ধ করছে। গত দেড় দশক ধরে বরিশাল বন্দরের পলি অপসারণ করে কীর্তনখোলা নদীতেই ফেলা হলেও বিষয়টি নিয়ে নির্বাক নগর ভবন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছেনা। ইতোমধ্যে এ বন্দরে নাব্যতা উন্নয়নে ১ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারণে ড্রেজিং শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এ ব্যপারে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী  জানান, বরিশাল বন্দরের নাব্যতা উন্নয়ন জরুরী। কিন্তু কিনারায় পলি অপসারণের কোন জায়গা নেই বিধায় সতর্কতার সাথেই ভাটির সময় নদীতে ফেলতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রে আরো সতর্কতা অবলম্বনের কথা জানান তিনি।
বরিশাল মহানগরীর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ থেকে পরিত্রান জরুরী হলেও নগরীর ৭টি খাল খননে সরকারী বরাদ্দের ১০ কোটি টাকা ফেরৎ যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ের অভাবে নগরীর ৭টি খাল খনন প্রকল্প বাতিল হবার পথে। প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল মহানগরীর পয়: নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রায় ৩০টি খালের ওপর নির্ভরশীল হলেও পাকা ড্রেন নির্মানের লক্ষ্যে তার বেশ কিছু সংকুচিত হয়েছে। অনেক খালের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। অবশিষ্টগুলোও নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে মৃত প্রায়। বর্তমান ও সাবেক নগর পরিষদ নগরীর খাল সমূহ সংষ্কারসহ উন্নয়নে কয়েক দফায় প্রকল্পÑসারপত্র জমা দিলেও পরিকল্পনা কমিশন থেকে এখনো সবুজ সংকেত মেলেনি।
এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নগরীর ১০টি খাল সংষ্কারসহ তার উন্নয়নে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের পরে বোর্ডের বরিশাল ও এন্ড এম ডিভিশন থেকে দর প্রস্তাব গ্রহণ ও ঠিকাদার বাছাই সহ ব্যাংক গ্যারান্টিও গ্রহনণ করা হয়েছে আরো প্রায় ৭ মাস আগে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এসব খাল খনন ও উন্নয়নে অনেক আগেই পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি দাখিল করার কথা জানিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আপত্তি জানিয়েছে নগর ভবন। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি সদর দপ্তরের মাধ্যমে মন্ত্রনালয়কে অবহিত করে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক গ্যরান্টির মেয়াদ দু দফায় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোন কার্যাদেশ দেয়া হয়নি।
এ কারণে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল মহানগরীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭টি খাল খননের ভবিষ্যত এখন অন্ধকারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ডিসেম্বর শেষ হতে চললেও কাজ শুরুরই সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আর কোন সম্ভাবনা নেই। ফলে বরিশাল মহানগরীর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ১০ কোটি টাকা ফেরৎ দেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প দেখছেন না তারা।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জোনের প্রধান প্রকৌশলী জানান, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি ৭টি খাল খনন প্রকল্প বান্তবায়ন করতে। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, নগরীর ২৪টি খাল খননে নগর ভবন থেকে একটি প্রকল্প-প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনের ইতিবাচক বিবেচনায় রয়েছে। সেখানে অন্য কোন সংস্থা তা করতে গেলে সরকারী অর্থের অপচয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ ভর করে মাত্র ১২ ঘন্টায় প্রায় ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে বরিশাল মহানগরীর ৯০ ভাগ এলাকাই সয়লাব হবার মধ্যে দিয়ে ভঙ্গুর পয়: নিষ্কাশন ব্যবস্থা আরো একবার প্রত্যক্ষ করেছে নগরবাসী। এমনকি ওই বৃষ্টির পানির কারণে অনেকটা মানবিক বিপর্যয়ের কবলে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে।
নগরীর প্রায় দেড়শ কিলোমিটার ড্রেনের ভঙ্গুর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থার সাথে অনেক আগে থেকেই নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে মাঝারী বৃষ্টিতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানির তলায় চলে যাচ্ছে। সেখানে সিত্রাং-এ ভর করে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত গোটা নগরীকে আরেক দফা ডুবিয়ে দিলেও তা থেকে পরিত্রানের পথ এখন রুদ্ধ।
নগর ভবন থেকে অবশ্য পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে অনেক চেষ্টা করা হলেও দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল সরিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়ন সহজসাধ্য ছিলোনা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করে এ নগরী সম্পূর্ণ প্লাবনমুক্ত  হতে ৫ দিন সময় লাগে।
এ নগরীর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে গত কয়েক বছরে নগরভবন কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ২৪টি খাল খননে প্রায় ২২শ কোটি টাকার একটি প্রকল্পÑপ্রস্তাবনা মন্ত্রনালয়ে পেশ করা হয়েছে। তবে এ নগরীর অন্যসব উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মত তাতেও সরকারের সবুজ সংকেত মেলেনি।
নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের জনবলের কিছুটা ঘাটতির পাশাপাশি কর্মকর্তাদের কাজের প্রতি আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। অনেক পরিচ্ছন্ন কর্মী নগর ভবনের দিক নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন বিবেচনায় চাকরি পাওয়া এসব পরিচ্ছন্ন কর্মীর অনেকেই ওয়ার্ডের সুপারভাইজারদের নির্দেশনা পালনেও অনীহা প্রকাশ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নগরীর সরকারী হাতেম আলী কলেজের লেকটির পয়:নিষ্কাশনে নবগ্রাম রোড ও রাজকুমার ঘোষ রোডের সংযোগ স্থলে মাত্র ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ড্রেনটি নিয়মিত পরিষ্কার না করায় একটু ভারি বর্ষণেও লেকটির পানি উপচে আশপাশের এলাকা সয়লাব করে দিচ্ছে। এমকি নগর ভবনের কতিপয় কর্মীর উদাসীনতা, অবহেলা আর নগরবাসীর প্রতি প্রজাসুলভ আচরণে অন্য অনেক কিছুর মতো এ নগরীর পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাও জনকল্যানে আসছে না বলেও অভিযোগ সাধারন মানুষের।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT