3:13 pm , September 21, 2020
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ‘তালগাছ’ কবিতাটি শৈশবে পড়েননি এমন বাঙালিও খুঁজে পাওয়া কঠিন। কবি খান মহম্মদ মইনুদ্দিন লিখেছিলেন ‘ওই দেখা যায় তালগাছ/ ওই আমাদের গাঁ/ ওইখানেতে বাস করে/ কানাবগির ছা…। কবির প্রচলিত ছড়ায় যে বর্ণনা, গ্রাম বললেই চোখের সামনে সেই তালগাছের ছবি ভেসে ওঠে।
কবিতা দুটিতে গ্রামবাংলার সঙ্গে তালগাছও দৈনন্দিন যাপনের সঙ্গে সমান ভাবে জুড়ে। তালপাতার পুথি থেকে শিশুদের খেলনা, সিপাই বাঁশি আবার বাড়ির ছাউনি থেকে বর্ষাতি, রস থেকে নানা সুস্বাদু রসের গোটা গাছটাই কাজে লাগে মানুষের। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, তালগাছ বজ্রনিরোধক বলে বিজ্ঞাণ ব্যাখ্যা দেয়ার পর তালবীজ রোপনের শোড়গোল পড়ে গেছে দেশব্যাপী।
কিন্তু সরকারি এই উদ্যোগ গ্রহনের আগেই বিকল্প সব উপায় এসে যাওয়ায় গ্রাম বাংলার এই সুপরিচিত গাছটির বিলুপ্তির পথে হাটছে। কারণ আগে থেকেই কদর ক্রমশ কমছে। কদরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে তাল গাছের সংখ্যাও। এমন সময়ে দাঁড়িয়ে তাল-ঐতিহ্যকে ফিরে দেখতে এবং তালবীজরোপনে উৎসাহিত করতে দেড় বছরের পুরানো কলসকাঠী বিএম একাডেমী উদ্যোগী হল। স্কুলের উদ্যোগে আজ সোমবার ‘তাল উৎসব-২০২০’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। জেলা প্রশাসক এস,এম অজিয়র রহমান এই তাল উৎসবের উদ্বোধন করেন।
স্কুল ক্যাম্পাসে আয়োজিত ‘তাল উৎসব’কে দু’ভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। এক দিকে রয়েছে, তালের তৈরি নানা খাবারের সম্ভার। তাল পুলি, কেক, মালপোয়া, তালপোয়া, পাটিশাপটা, তাল মালাই, তালের বড়া, তাল ফোপড়া, তাল ফাঁপা, রকমারি পিঠে, মালপোয়া-সহ নানা পদ। গ্রামের অন্তত ১০জন মহিলা তাদের ঘরে তৈরী পিঠা স্কুলে প্রদর্শন করেন। অন্য দিকে চলে তালগাছ সম্পর্কিত প্রদর্শনী। সেখানে রয়েছে তালপাতা, তালবীজরোপনের ব্যাপারে আলোচনা। সঙ্গে তালের ইতিহাস, বাংলা ছাড়াও দেশের অন্য ভাগে ও বিদেশে তালগাছের নিয়ে নানা অজানা কথা। তালগাছ নিয়ে লেখা গল্প, কবিতা, ছড়া। কীভাবে এতদিন ধরে মানুষের কাজে লেগে এসেছে ওই গাছ, ভবিষ্যতেও জীবন-জীবিকাকে কী ভাবে আরও উন্নত করতে পারে তালগাছ, তার ওপর আলোচনা ছিল।
বিএম একাডেমী পরিচালনা পর্যদের সভাপতি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন, বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মাধবী রায়, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আকমল হোসেন, বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আকরাম হোসেন, কলসকাঠী বিএম একাডেমি প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার পাল, জেলা প্রশাসনের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ, বাকেরগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচএম জাফর আহমেদ, কলসকাঠী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু তরুণ কুমার গাঙ্গুলী, বিলকিস জাহান টেকনিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষ এস এম জোবায়ের আলম পারভেজ, জনতা ব্যাংক কলসকাঠির শাখা ব্যবস্থাপক শাহানুর আজিজ, গ্রামীণ ব্যাংক অলংকার শাখা ব্যবস্থাপক ফজলুর রহমান।
আলোচকরা বলছেন, ‘‘আম উৎসব হতে পারে, ইলিশ উৎসব হতে পারে, কেন তাল উৎসব নয়’’ তারা বলছেন, ‘‘শ্রাবণের শেষ থেকে ভাদ্রের প্রথম ভাগে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে নানা তালের পদ হয়ে থাকে। সময়ের অভাবে সেই রেওয়াজ বন্ধ হওয়ার মুখে। বাচ্চারাও বোধহয় তাল কুড়িয়ে এখন আর ততটা মজা পায় না। নানা পদও হারাতে বসেছে।’’ সেই ভাবনা থেকেই কাজে লেগে পড়া।
গ্রামের অনামিকা চন্দ্র, অনিমা রানী দাশ বলছেন, ‘‘সেরা পদ বানিয়ে নজর কাড়তে আমরা চেষ্টা করেছি। যাতে করে তালগাছ শুধু আমাদেরকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করবে না, খাদ্যও দিবে সেই তথ্য আমরা জানাতে চেয়েছি। আমরা সুযোগ পেলে তালপাতার সামগ্রী তৈরি শিখতে চাই।’’
স্কুলের খুদেরা মেতেছিল তালপাতার পাখা তৈরিতে। সাজসজ্জার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন স্কুলের ছেলেরা। তাদের নেতৃত্বে ছিল দীপ রাজ চন্দ। তাকে সহযোগিতা করেছে, অভিজিৎ আইচ, দীপংকর পাল, পিয়াস কুন্ডু, ফাহাদ, নাদীম, অর্পন, শীমান্ত ঘোষ, পার্থ চন্দ, শীমান্ত কুন্ডু, তীথ চন্দ, রাতুল কুন্ডু, অংশু, অর্নব, সৌরভ, রুহিত প্রমুখ।