নকলের মাঝে আসল খুঁজে পাওয়া দায় নকলের মাঝে আসল খুঁজে পাওয়া দায় - ajkerparibartan.com
নকলের মাঝে আসল খুঁজে পাওয়া দায়

2:52 pm , September 15, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীতে দালালবাহী ১৫ ডাক্তারের কারনে অপর ডাক্তারদের অর্জনও ম্লান হয়ে যাচ্ছে। একই সাথে দালাল ডাক্তারের কারনে হতদরিদ্রদের যেনতেনভাবে চিকিৎসা দিয়ে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় লেখালেখি হলেও দালাল নির্ভর ডাক্তাররা রয়ে গেছেন ধরাছোয়ার বাইরে। কোন সমস্যা পড়লেও প্রভাবশালী ব্যক্তি ও টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করছেন তারা। নগরবাসীর দাবি দালালদের বিরুদ্ধে যেভাবে আইনশৃংখলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে আসছে দালাল নির্ভর ডাক্তারদের বিরুদ্ধেও একইভাবে অভিযান চালানো দরকার। এতে করে তাদের হাত থেকে রক্ষা পাবে দরিদ্র রোগীরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে নগরীর এক দালাল বলেন, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা ডাক্তারদের জন্য রোগী ধরার কাজ করে আসছেন। রোগী প্রতি টাকা এবং পরীক্ষা-নীরিক্ষা বাবদ কিছু পার্সেন্টিজ নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তার দাবি আমরা যদি তাদের রোগী না দিতাম তারা কখনো রোগী পেতেন না। ওই দালাল বলেন, যে সকল ডাক্তারদের তারা রোগী দিয়ে আসছেন তারা আসলে মানসম্পন্ন ডাক্তার না। তাদের কাছে মনে হয় শিক্ষা জীবনে তারা তেমন কোন লেখাপড়া করেনি। এ কারণে তেমন কোন ডিগ্রিও তাদের নেই। তাদের একমাত্র ভরসা হচ্ছি আমরা (দালাল)। অথচ আমরা তাদের আয়ের বড় পথ বের করে দিলেও আমরা বিপদে পড়লে তারা আমাদের জন্য এগিয়ে আসে না। তাদের সাফ কথা রোগী আনবা টাকা পাবা। এরপর সব দায়িত্ব তোমাদের। আমরা আইনশৃংখলা বাহিনীর ধারেকাছে যেতে পারবো না। ওই দালাল জানান, দীর্ঘ ১২ বছরের অধিক সময় ধরে সে দালালী পেশায় রয়েছে। মাঝে মধ্যে হতদরিদ্রদের যেভাবে ডাক্তাররা টাকা হাতিয়ে নেয় তা দেখে তারও মায়া লাগে। কিন্তু করার কি আছে পেটের দায়ে আমাদের এ কাজ করতে হচ্ছে। আর আমরা দালালী পেশা ছাড়তে চাইলেও দালাল নির্ভর দালালরা আমাদের ছাড়তে দিচ্ছে না। আমাদের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেয়াসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। এ কারণে মাঝে মধ্যে ধরা পড়ার পরও আবারো ওই পেশায় ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এছাড়াও বেশ কয়েকজন ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারও রয়েছেন। যাদের সনদ জাল। তারপরও বিভিন্ন বাহারী ধরণের ডিগ্রি লাগিয়ে বড় ডাক্তার হিসেবে নিজেকে জাহির করছে।
‘স’ অদ্যাক্ষরের এক দালাল বলেন, ভাই আমি ৬ ডাক্তারকে রোগী দেই। আমি কিন্তুু ওই ৬ ডাক্তারের ধারেকাছে যাই না। কারণ আমি জানি তারা ডাক্তারের ‘ড’ও জানে না। উল্টো আমার শরীরে আরো রোগের সৃষ্টি করবে। সে জানায়, দালাল নির্ভর ডাক্তাররা যে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে তাও ঠিকমত বোঝে বলে মনে হয় না। তাছাড়া আজকাল যে সকল অত্যাধুনিক মেশিন বের হয়েছে তার পরীক্ষা দেখে তারা ঠিকমত রিপোর্টও লেখতে পারে নাা। এর চেয়ে টেকনিশিয়ানরা ভালো বোঝেন। অথচ তারা টাকার পাহাড় বানিয়ে ফেলেছে। আমরা আর ক’টাকা পাই। এর জন্য মাঝে মধ্যে জেলে পর্যন্ত যেতে হয়। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। জেলে গেলে সামান্য টাকা দিয়েও তারা আমাদের কোন সাহায্য করে না। যা আমাদের পরিবার থেকে করতে হয়। আর আমরা আমাদের স্থান ছেড়ে দিলে ওই দালাল নির্ভর ডাক্তার সেখানে আবার নতুন লোক নিয়ে আসে। মুলত দালাল তৈরী করছে ডাক্তাররাই। সেখানে বলির পাঠা হচ্ছি আমরা।
‘ম’ অদ্যাক্ষরের দালাল জানান, আমাদের মাধ্যমে রোগী নিয়ে তাদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা না লাগলেও তা করিয়ে মোটা অংকের টাকা আয় করছেন দালাল নির্ভর ডাক্তাররা। আমরা যত সামান্য পেয়ে থাকি। আমার কষ্টটা হচ্ছে যে সকল রোগীদের তাদের কাছে নিয়ে যাচ্ছি তাদেরকে সামাণ্যতম চিকিৎসা দিতে পারছেন না ওই সকল দালাল নির্ভর ডাক্তাররা। একটু চিকিৎসা দিতে পারলেও মনকে বোঝাতে পারতাম দালালী করলেও রোগীরা তো চিকিৎসা পাচ্ছে। ভাই এখন দালাল প্রতিযোগিতায় নামিয়েছে ওই সকল দালাল নির্ভর ডাক্তাররা। আমরা তাদের কাছ থেকে চলে গেলে তারা ব্যাটারীচালিত রিকশা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের দালালী কাজে নামিয়ে দিচ্ছে। আর ওই সকল দালাল বরিশাল নৌ বন্দর থেকে শুরু করে বাসস্ট্যান্ড এমনকি নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে রোগী ধরে আনছেন। তাদের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আবার দালাল নির্ভর ওষুধের দোকানে নিয়ে যাচ্ছে। এখন এমন অবস্থা দাড়িয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে দালাল নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এ জন্য দালাল নির্ভর ডাক্তার থেকে শুরু করে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের লোকজনও দায়ি রয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, ওষুধ লিখতেও ধরতে হয় দালাল। তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, পুলিশের সম্বনিত অভিযান না থাকা এবং কিছু অসাধু পুলিশের সাথে এসব সমাজ বিরোধী চিকিৎসকদের আর্থিক লেনদেনের কারণে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত হচ্ছে। যদিও মাঝে মধ্যে ডিবি পুলিশ রোগী ধরা দালালদের আটক করলেও দালালদের গডফাদার দালাল ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: শাহাবুদ্দিন খান বলেন, একটি গ্রুপ দালাল প্রাক্টিস করছে। কিন্তু সেই ডাক্তার যদি ভুয়া হয়, তবে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়। তিনি বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে আইন পদক্ষেপ গ্রহন করা যায়। আমরা প্রায়ই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। এর সংখ্যা যদি বেড়ে যায় তবে অভিযানও বাড়িয়ে দেয়া হবে। প্রয়োজনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT