দক্ষিণাঞ্চলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দক্ষিণাঞ্চলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়

4:05 pm , April 27, 2021

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ স্মরনকালের ভয়াবহ দাবদাহের সাথে লাগাতার অনাবৃষ্টিতে উজানের প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় সাগরের নোনা পানিতে সয়লাব নদ-নদী। এতে দক্ষিনাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবনে বিপর্যয়ের সাথে মারাত্মক পরিবেশ সংকট সৃষ্টি করছে। বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ইতোমধ্যে স্মরনকালের সর্বোচ্চ ৩৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠেছে। যা স্বাভাবিকের ৫.৪ ডিগ্রী বেশী। প্রচন্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সকাল ১১টার পর তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। পশু-পাখী পানির তৃষ্ণনায় খাল, নদী, পুকুরে নেমে পড়ছে। গরম থেকে রক্ষায় কীর্তনখোলা নদীতে শিশু-কিশোরদের দুরন্তপনা বেড়েছে। অব্যাহত তাপ প্রবাহে দক্ষিনাঞ্চলে চলমান ডায়রিয়া রোগীদের পানিশূণ্যতা তরান্বিত করে জীবনের ঝুকি বৃদ্ধি করছে। নদ-নদীতে লবনাক্ততার মাত্রা ১২শ পিপিএম অতিক্রম করেছে। ফলে নদীÑখালের পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যারা এসব উৎসের পানি ব্যবহার করছেন, তাদের ডায়রিয়া ঝুকিও বাড়ছে। সরকারী হিসেবে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। গত ৪ মাস ধরেই দক্ষিনাঞ্চলে বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টির অভাবে ফসলী জমি থেকে শুরু করে খাল-বিল শুকিয়ে চৌচির। মুগ, ভুট্টা, সয়াবিন ও শাক-সবজী সহ সূর্যমুখির উৎপাদনে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পানি সংকটে বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধানে সেচ ব্যবস্থা পর্যন্ত ব্যহত হচ্ছে।
গত অক্টোবর থেকেই দক্ষিনাঞ্চলে বৃষ্টির অভাব শীত মৌসুমে তা ততটা অনুভুত না হলেও ক্রমে সংকট ঘনীভুত হতে থাকে। জানুয়ারী মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ৮.৯ মিলিমিটার হলেও কোন বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া বিভাগের মতে, ফেব্রুয়ারীতে ২৭ মিলিমিটারের স্থলে বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ১ মিলিমিটার। মার্চে ৫৭.১ মিলিমিটারের স্থলে মাত্র ০.৩ মিলি বৃষ্টি হয়েছে এ অঞ্চলে। যা ছিল স্বাভাবিকের ৯৯.৫% কম। আর চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে ১৩২.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হবার কথা থাকলেও ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত কোন বৃষ্টি হয়নি।
লাগাতার অনাবৃষ্টির সাথে সীমান্তের ওই পাড়ে অভিন্ন নদ-নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রনের ফলে গত ডিসেম্বরের পর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে সাগরের নোনা পানি উঠে আসতে শুরু করে। ইতোমধ্যে লবনাক্ততার মাত্রা ১ হাজার পিপিএম অতিক্রম করেছে। মার্চে থেকে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে শুরু করে। বঙ্গোপসাগর থেকে ১১০ কিলোমিটার উজানে কীর্তনখোলা নদীতে লবনাক্ততার মাত্রা ১ হাজার ২শ পিপিএম অতিক্রম করেছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানা গেছে। ইতোমধ্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম বিষয়টি নিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। সে আলোকে মন্ত্রীর কাছে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনও দাখিল করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এমনকি অনাবৃষ্টির সাথে অত্যাধিক তাপপ্রবাহ দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা রবি ফসলের জন্য ক্রমাগত হুমকি সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ সর্বকালের রেকর্ড ছাপিয়ে ৩৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়সে উঠেছে গত ২৫ এপ্রিল। ২৬ এপ্রিল ছিল ৩৭.৫। অথচ আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে এপ্রিল মাসে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ৩৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের ৫.৫ ডিগী সেলসিয়াস বেশী তাপমাত্রায় জনজীবনে ভয়াবহ সংকট নেমে এসেছে। এমনকি পরদিন ২৬ এপ্রিল তাপমাত্রা ১.৩ ডিগ্রী হ্রাস পেলেও তা ছিল স্বাভাবিকের ৪.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী, ৩৭.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চলতি মাসের প্রথম দিনেও বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৩৬.২ ডিগ্রীতে উঠে গিয়েছিল। মার্চে বরিশালে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩২.২ ডিগ্রী থাকার কথা। কিন্তু গত ২২ মার্চ বরিশালে তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৭ এবং ২৫ ও ২৭মার্চ ৩৬.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
তবে বৃষ্টি অভাবেই তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ ওপরে উঠছে এবং গরমের অনুভুতিও বাড়ছে বলে মনে করছেন আবহাওয়া পর্যবেক্ষকগন ।
কয়েক দফার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিগত ‘খরিপ-২’ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে আমনের উৎপাদন প্রায় দেড় লাখ টন হ্রাস পায় । সে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেতে প্রায় ৭ লাখ ২ হাজার ১৭৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, গম ও ভুট্টা’র মত দানাদার খাদ্য ফসল এবং গোল আলু, সয়াবিন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তেল ফসল, মসলা ও ডাল ফসলের আবাদ হয়েছে। এছাড়া এবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৪৭ হাজার চারশ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। ফলে প্রায় ১০ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের কথা । কিন্তু লাগাতর অনাবৃষ্টির সাথে সাগরের নোনা পানি কৃষকের সব আশাকে ম্লান করতে উদ্যত।
সাথে অব্যাহত তাপ প্রবাহ দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনকে অনেকটাই বিপর্যস্ত করে দিয়েছে ইতোমধ্যে। যা পরিবেশেরও জন্যও হুমকি বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক পরিবেশবীদ।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারী তাপ প্রবাহর বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যঅহত থাকবে বলা জানান হয়েছে। এমনকি দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে বলেও জানিয়েছে অবহাওয়া বিভাগ । মঙ্গলবার সকালে বরিশালে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ২৬.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের ২.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী। সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ছিল ৩৭.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT