4:27 pm , July 4, 2025

চরফ্যাশন প্রতিবেদক ॥ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় সম্পত্তির জন্য মাকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্কুলশিক্ষক ছেলে মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে। ছেলের বিচার চেয়ে আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মা বিবি ফাতেমা। ছেলের হাতে মারধরে আহত হয়ে চরফ্যাশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা।
শুক্রবার উপজেলার দুলারহাট থানার মুজিবনগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মাকসুদুর রহমান শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের হারুন মোল্লার ছেলে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা বিবি ফাতেমা অভিযোগ করে বলেন, তার চার ছেলে ও দুই মেয়ে। মাকসুদুর রহমান তার বড় ছেলে। বড় ছেলেকেই লেখাপড়া করিয়েছেন। সে লেখাপড়া শেষে শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি নেন। এক সময় তার স্বামী হারুন মোল্লাকে নিয়ে উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নে বসবাস করতেন। ছেলে মাকসুদ চাকরি নেয়ার পর থেকে তার ছোট তিন ভাইকে তার বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেন। মাকসুদ তার নিজের নামে বাবার সম্পত্তি লিখে নেয়ার জন্য প্রায় সময় মারধর করত। ৮ বছর আগে বাবা-মা দু’জনকেই মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন ছেলে মাকসুদ। পরবর্তীতে বাবা-মার আশ্রয় হয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগর ১নং ওয়ার্ডে কৃষক ছেলে সফিকের কাছে। সেখানে গিয়ে মাকসুদ তার বাবাকে ব্যাপক মারধর করে। অবশেষে অসুস্থ হয়ে ৬ মাস আগে মৃত্যু হয় বাবা হারুন মোল্লার। ফের শুক্রবার সকালে ছেলে মাকসুদ মিলে বহিরাগত লোকজনদের নিয়ে মুজিবনগরের সম্পত্তি দখলে নিতে ভাই সফিককে মারধর করে। এসময় মা বাঁচাতে গেলে মাকেও ছেলে মাকসুদ তার লোকজনদের নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। এই বিষয়ে আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মা ফাতেমা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ছেলে মাকসুদের অত্যাচার সইতে না পেরে বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগরে গিয়ে কৃষক ছেলের কাছে আশ্রয় নিয়েছি। ছেলেকে জন্ম দেয়ার পর থেকে কত যতেœ লালন-পালন করেছি, অথচ সেই ছেলের হাতেই বিগত কয়েক বছর ধরেই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি। আজ ছেলে মাকসুদকে নিজের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে খুব কষ্ট হয়। কারন তার হাতে তার বাবা মারধরের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যুবরণ করেন।
মাকসুদের ছোট ভাই সফিক ও ছিদ্দিক বলেন, তার ভাই মাকসুদকে বাবা শিক্ষিত করেছেন। ওই সময় তারা জমিতে কৃষি কাজ করেছেন। ভাই লেখা-পড়া শেষে শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরী নেন। তারপর থেকে বাবার সম্পত্তি নিজের নামে করার জন্য বাবা-মাকে বিভিন্ন সময়ে মারধর করতেন। এমনকি স্কুলশিক্ষক ভাই মাকসুদুর রহমান তাদের সম্পত্তিও দখলে নেন। তাদেরকে মুল ভূখন্ডের মধ্যে আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের বাড়ী থেকে উৎখাত করে। পরে তারা আশ্রয় নেয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগরে। শুক্রবার সকালে মুজিবনগরে গিয়ে জমি দখলে নিতে সফিককে মারধর করেন ভাই মাকসুদ। এসময় সফিককে বাঁচাতে মা এগিয়ে এলে মাকেও ব্যাপক মারধর করেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
স্কুলশিক্ষক মাকসুদুর রহমান মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
দুলারহাট থানার ওসি আরিফ ইফতেখার বলেন, এই বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে মাকে ছেলে মারধর করা সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ।