আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও ভয় থাকলে শবে কদর পেয়ে যাবেন আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও ভয় থাকলে শবে কদর পেয়ে যাবেন - ajkerparibartan.com
আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও ভয় থাকলে শবে কদর পেয়ে যাবেন

4:01 pm , April 5, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ আখেরীজুম্মা বা পবিত্র রমজান মাসের শেষ জুম্মা হওয়ার কারণে এ দিনটিকে বিদাতুল জুম্মাও বলা হয়। পবিত্র রমজানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন এই শেষ শুক্রবার। তাই নগরীর প্রতিটি মসজিদে, এমনকি পাড়া-মহল্লা ও গাঁও-গ্রামের মসজিদেও মুসল্লীদের ঢল নেমেছিল ৫ এপ্রিল দুপুরে।
সব মসজিদেই আলোচনার প্রধান বিষয় শবে কদর ছিলো বলে জানান বরিশালের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। বললেন, এ নিয়ে আলোচনার নির্দেশনা রয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের। যার তাকওয়া আছে তার কোনো ভয় নেই। তাকে শবে কদর খুঁজতে হবে না। শবে কদর নিজে এসে তার কাছে ধরা দেবে। আর আমরা যারা সাধারণ মুসল্লী তাদের জন্য শবে কদর খুঁজতে হবে। রমজানের শেষের দশদিন বেজোড় রাতে এই কদর তালাশ করতে বলেছেন প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। আখেরী জুম্মা বলে খ্যাত পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার শবে কদর এবং ঈদের নামাজ আদায়ের আগে ফিতরা পরিশোধ করার ফজিলত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বরিশাল মডেল মসজিদের ঈমাম মাওলানা মুনির হাসান। জামে কসাই মসজিদের ঈমাম ও জেলা ঈমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান নামাজ শেষে জানান, তিনিও প্রায় একই বয়ান করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর নেকবান্দাকে কখনো শবে কদর খুঁজতে হয়না, শবে কদর নিজে এসে তার কাছে ধরা দেবে। কেননা নেক বান্দা যিনি সে কখনোই রাতের নামাজ আদায় করতে ভুলে যায়না এবং সে যাবতীয় সৎ কাজ করার পর  বিনয়ের সাথে মাঝরাতে সেজদায় কান্নাকাটি করে।
এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের মধ্যে তখন কান্নার রোল চলছিল। আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করে শবে কদর ও নবী করিম (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসায় তার উটনী এবং সাহাবা (রাঃ) এর ত্যাগ  তুলে ধরেন ঈমাম মাওলানা গোলাম মোস্তফা। তিনি বুখারী শরীফের হাদিস থেকে শবে কদর সম্পর্কিত হযরত বেলাল ( রাঃ) এবং আব্দুর রহমান জামী এর প্রসঙ্গ বর্ণনা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
শবে কদর বা লাইলাতুল কদর এর গুরুত্ব তুলে ধরে ঈমামরা বলেন, কদরের এক অর্থ মাহাত্ম বা সম্মান। অন্যান্য রাতের তুলনায় এ রাত মহিমান্বিত হওয়ার কারণ এটাকে লাইলাতুল কদর তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন সেটা মহিমান্বিত ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব যা নবীর ওপর অবতীর্ণ, তিনিও মহিমান্বিত ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং যে উম্মতের জন্য অবতীর্ণ করেছেন, তারাও মহিমান্বিত ও সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। সর্বোপরি আমল না করার কারণে যার সম্মান ও মূল্য ছিলনা সেও এ রাতে তওবা ইস্তিগফার ও বন্দেগীর মাধ্যমে মহিমান্বিত হতে পারে। বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ, আল কোরআন নাযিল করা হয়েছিল এ রাতে। এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআনকে মহিমাময়ী রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি”। একই সূরায় বলা হয়েছে, ‘মহিমাময়ী রাত্রি কি তুমি কি জান? মহিমাময়ী রাত্রি হাজার মাস থেকে উত্তম।” সত্যিই হাজার মাস থেকে পূণ্য এই অসাধারণ রাত্রি। পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, (এই রাত্রিতে) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে ফেরেশতারা ও পবিত্র আত্মারা পৃথিবীতে নেমে আসেন।’ মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কদরের রজনীতে কোরআন নাজিল করেছি। আপনি জানেন কি? কদরের রজনী কি? কদরের রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম! সে রাতে ফেরেশতাগণ অবতীর্ণ হন, জিব্রাঈল (আ:) সহ তাদের রবের নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে সব বিষয়ে শান্তির ফয়সালা নিয়ে, তা উষার উদয় পর্যন্ত’। সূরা-কদর, আয়াত ১-৫।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে জানিয়ে মাওলানা গোলাম মোস্তফা বুখারী শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস বর্ণনা করেন। যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ (ছগিরা) ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরের রাত জেগে ইবাদতে মশগুল থাকে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তবে কিছু মানুষের গুনাহ এ রাতে ক্ষমা করবেন না। ১. অনিষ্টকারী যাদুকর,গনক ২. মাতা পিতার অবাধ্য সন্তান ৩. ব্যাভিচার ৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ৫. চোগলখোর ৬. যার অন্তর হিংসা বিদ্বেষ ও কৃপনতায় পরিপূর্ণ ৭. বান্দার হক আত্মসাৎকারী।
প্রিয় নবী (সা.) একবার সাহাবায়ে কেরামের সামনে বনী ইসরাঈলের একজন মুজাহিদ হযরত শামাইন (রা.) এর অবস্থা উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি এক নাগারে একহাজার মাস ইবাদত বন্দেগী এবং দিনে রোজা রাখতেন এবং সাথে সাথে আল্লাহর পথে কাফিরদের সাথে যুদ্ধও করেছেন। একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম প্রিয়নবীর খেদমত আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (সা.) আমাদের আয়ুতো খুবই কম এর মধ্যে আবার বিছু অংশ ঘুমে অতিবাহিত হয়, কিছু অংশ জীবিকা অন্বেষনে, কিছু অংশ পানাহারে এবং পার্থিব কাজে ব্যয় হয়। তাই আমরা তো হযরত শামাইন (রাঃ) এর মত ইবাদত করতে পারি না। ফলে বনী ইসরাঈল আমাদের থেকে অগ্রগামী হবে। উম্মতের কান্ডারী নবী (সাঃ) এটা শুনে বিষন্ন হলেন। সেই মুহূর্তে হযরত জিব্রাইল (আঃ) নবীর দরবারে আল্লাহর পক্ষ হতে সূরা কদর পেশ করেন। এতে আল্লাহর হাবীবকে শান্তনা দেয়া হয়েছে। ( হে আমার হাবীব) আপনি মর্মাহত হবেন না, আপনার উম্মতকে আমি প্রত্যেক বছরের জন্য এমন রাত দিন দান করেছি, যদি তারা সে রাতে আমার ইবাদত করে তাহলে শামাইন এর হাজার মাসের ইবাদত থেকে বেশি সাওয়াব তাদের আমল নামায় লেখা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT