সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য মানছেনা বরিশালের ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য মানছেনা বরিশালের ব্যবসায়ীরা - ajkerparibartan.com
সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য মানছেনা বরিশালের ব্যবসায়ীরা

4:05 pm , March 16, 2024

প্রতিবাদ করে ক্রেতারা পড়ছেন রোষানলে
জুবায়ের হোসেন ॥ বাজার নিয়ন্ত্রণে পণ্যের দাম বেধে দেওয়ার পরেও তা মানছে না বরিশাল নগরের ব্যবসায়ীরা। এতে করে বাজারে অস্বস্তি কোনভাবেই কাটছে না। সরকারের বেধে দেওয়া দামে পণ্য কিনতে গেলে বিক্রেতাদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে ক্রেতাদের। নানা অজুহাতে তারা পূর্বের বাড়তি দামেই বিক্রি করছে পণ্য। ক্রেতাদের মতে মূল্য নির্ধারিত হলেও তা বাস্তবায়নে সরকারি সংস্থার বাজারে তদারকি বেশ জোরদার করতে হবে। নিতে হবে নির্দেশনা অমান্য করা প্রতিটি বিক্রেতার বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং তা প্রচার করতে হবে। একই সাথে ক্রেতাদের হতে হবে সচেতন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা বিক্রেতাদের বয়কট করতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে সম্মিলিতভাবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের বেধে দেওয়া যৌক্তিক মূল্যের বাইরে পণ্য বিক্রির কোন সুযোগ নেই। যে বিক্রেতারা এই নির্দেশনা অমান্য করবে খবর পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর তদারকির কাজ শুরু করেছে। গত ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় ২৯ পণ্যের দাম বেধে দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কৃষি বিপণন আইন ২০১৮-এর ৪(ঝ) ধারার ক্ষমতাবলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উৎপাদনকারী, পাইকার ও খুচরা পর্যায়ে  নির্ধারিত দামে কৃষিপণ্য কেনাবেচার জন্য অনুরোধ করা হয়। যেসব পণ্যের যে দাম নির্ধারণ করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর তা হলো- মুগ ডালের পাইকারি মূল্য ১৫৮ দশমিক ৫৭ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৬৫ দশমিক ৪১ টাকা, মাষকলাই ডালের পাইকারি মূল্য ১৪৫ দশমিক ৩০ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৬৬ দশমিক ৪১ টাকা, ছোলার (আমদানিকৃত) ডালের পাইকারি মূল্য ৯৩ দশমিক ৫০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৯৮ দশমিক ৩০ টাকা, মসুর ডাল (উন্নত) পাইকারি মূল্য ১২৫ দশমিক ৩৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৩০ দশমিক ৫০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) পাইকারি মূল্য ১০০ দশমিক ২০ টাকা ও খুচরা ১০৫ দশমিক ৫০ টাকা, খেসারি ডাল পাইকারি মূল্য ৮৩ দশমিক ৮৩ টাকা ও খুচরা মূল্য ৯২ দশমিক ৬১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া পাঙ্গাস মাছ (চাষের) পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ১৫৩ দশমিক ৩৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৮০ দশমিক ৮৭ টাকা, কাতল মাছ (চাষের) পাইকারি মূল্য ৩০৩ দশমিক ০৯ টাকা ও খুচরা মূল্য ৩৫৩ দশমিক ৫৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাংসের মধ্যে গরুর মাংস প্রতি কেজি পাইকারি মূল্য ৬৩১ দশমিক ৬৯ টাকা ও খুচরা মূল্য ৬৬৪ দশমিক ৩৯ টাকা, ছাগলের মাংস পাইকারি মূল্য ৯৫২ দশমিক ৫৮ টাকা ও খুচরা মূল্য ১০০৩ দশমিক ৫৬ টাকা, ব্রয়লার মুরগি পাইকারি মূল্য ১৬২ দশমিক ৬৯ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৭৫ দশমিক ৩০ টাকা, সোনালি মুরগি পাইকারি মূল্য ২৫৬ দশমিক ১০ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৬২ টাকা। ডিম প্রতি পিস পাইকারি মূল্য ৯ দশমিক ৬১ টাকা ও খুচরা মূল্য ১০ দশমিক ৪৯ টাকা বেধে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি পাইকারি মূল্য ৫৩ দশমিক ২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৬৫ দশমিক ৪০ টাকা, দেশি রসুন পাইকারি মূল্য ৯৪ দশমিক ৬১ টাকা ও খুচরা মূল্য ১২০ দশমিক ৮১ টাকা, আদা (আমদানিকৃত) পাইকারি মূল্য ১২০ দশমিক ২৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৮০ দশমিক ২০ টাকা, শুকনো মরিচ পাইকারি মূল্য ২৫৩ দশমিক ২৬ টাকা ও খুচরা মূল্য ৩২৭ দশমিক ৩৪ টাকা, কাঁচামরিচ পাইকারি মূল্য ৪৫ দশমিক ৪০ টাকা ও খুচরা ৬০ দশমিক ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবজির মধ্যে বাঁধাকপি প্রতি কেজি পাইকারি মূল্য ২৩ দশমিক ৪৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৮ দশমিক ৩০ টাকা, ফুলকপি পাইকারি মূল্য ২৪ দশমিক ৫০ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৯ দশমিক ৬০ টাকা, বেগুন পাইকারি মূল্য ৩৮ দশমিক ২৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ৪৯ দশমিক ৭৫ টাকা, সিম পাইকারি মূল্য ৪০ দশমিক ৮২ টাকা ও খুচরা মূল্য ৪৮, আলু পাইকারি মূল্য ২৩ দশমিক ৩০ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৮ দশমিক ৫৫ টাকা, টমেটো পাইকারি বাজার মূল্য ৩০ দশমিক ২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৪০ দশমিক ২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া পাইকারি মূল্য ১৬ দশমিক ৪৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৩ দশমিক ৩৮ টাকা, খেঁজুর (জিহাদি) পাইকারি মূল্য ১৫৫ দশমিক ৫৩ টাকা ও খুচরা মূল্য ১৮৫ দশমিক ০৭ টাকা, মোটা চিড়া পাইকারি মূল্য ৫২ দশমিক ৭৫ টাকা ও খুচরা মূল্য ৬০ টাকা, সাগর কলা প্রতি হালি পাইকারি মূল্য ২২ দশমিক ৬০ টাকা ও খুচরা মূল্য ২৯ দশমিক ৭৮ টাকা এবং ভেশন পাইকারি মূল্য ৯৯ দশমিক ০২ টাকা ও খুচরা মূল্য ১২১ দশমিক ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে রোজার শুরুতেই খেজুর ও চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেসময় প্রতি কেজি অতি সাধারণ মানের খেজুরের ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা ও প্রতি কেজি চিনির মূল্য ১৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই দর নির্ধারিত হলেও এর কোন বাস্তব প্রয়োগ গতকাল শনিবার দেখা যায়নি বরিশাল নগরের কোন বাজারে। নগরের বাজার রোডের পাইকারি সহ বড় বাজার, পোর্ট রোড বাজার, চৌমাথা বাজার, নথুল্লাবাদ বাজারে গিয়ে দর নির্ধারন করা প্রতিটি পণ্যই দেখা গেছে আগের বাড়তি দরে বিক্রি করতে। পাইকারি বাজারের বিক্রেতারা যৌক্তিক মূল্য মানার প্রক্রিয়ায় আছেন বলে দাবি করেছেন। বাজার রোডের পেঁয়াজ আড়তের এক পাইকার বলেন, রমজানে ক্রেতাদের কাছে পণ্য কমদামে বিক্রি করার একটি মানসিক শান্তিও রয়েছে। তবে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে তা করা বেশ কঠিন। সরকার যদি মূল্য নির্ধারন করে দেয় তবে তাৎক্ষনিক না পারলেও শীঘ্রই নির্দেশনা পালন করবেন তারা। পাইকারদের এমন মনোভাব থাকলেও পুরো ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে খুচরা ব্যবসায়ীদের মাঝে। সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য মানা তো দূরের কথা উল্টো তারা এখনও আগের বাড়তি দরে পণ্য বিক্রি করে ক্রেতাদের গলা কাটছেন। সরকারের নির্দেশনা কেন মানছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পূর্বের বাড়তি দরে কেনা মালামাল হঠাৎ নির্দেশনা দিলেই কিভাবে কম দামে বিক্রি করবেন। সরকার ক্রেতাদের জন্য দাম কমিয়েছে, কিন্তু বেশি দামে কেনা মালামাল বিক্রি করলে যে তাদের ক্ষতি হবে তার ভর্তুকি কে দেবে। তবে খুচরা বিক্রেতাদের এমন যুক্তি পুরোই ভিত্তিহীন বলে দাবী ক্রেতাদের। চৌমাথা বাজারে আসা ক্রেতা বটতলা এলাকার বাসিন্দা ফাহাদ নাদিম বলেন, সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যের কোন বাস্তব প্রয়োগ দেখেননি। উল্টো বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ২৯ পণ্যের মূল্য নির্ধারন হয়েছে তার পরেও কেন বাড়তি রাখা হচ্ছে এই পশ্ন করে রোষানলে পড়েছেন। উৎপাদনকারী বা পাইকার সরাসরি ভোক্তাদের সংশ্লিষ্ট নয়, তাই তারা মূল্য কমালেও যদি খুচরা বাজার এমন অনিয়ন্ত্রিত থেকে যায় তবে ক্রেতারা সরকারের এই উদ্যোগের কোন সুফল ভোগ করতে পারবে না। তাই খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রনে কঠোর থেকে কঠোরতর নজরদারী প্রয়োজন। এবং তা অবশ্যই নিয়মিত করার দাবি জানান এই ক্রেতা।
এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যেই ২৯ পণ্য বিক্রি করতে হবে। এটি না মানার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয় তদারকির জন্য বরিশাল জেলায় জেলা প্রশাসনের মোট ১১ টি মনিটরিং টিম কাজ করছে। বরিশাল সদর উপজেলায় দুটি টিম বাজার দর নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে যার প্রধান তিনি নিজেই। এছাড়া বাকি ৯ উপজেলায় একটি করে টিম কাজ করছে যার প্রধান স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এসকল টিম বিভিন্ন স্থানে নির্দেশনা পালনের বিষয়ে কঠোর নজরদারি করবে। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর তদারকির কাজ শুরু করেছে। যারা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারী দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT