4:05 pm , May 3, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দিন যত এগোচ্ছে প্রচার প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রমে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন নগরীর সম্ভাব্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা। প্রায় সকল ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হলেও অন্যান্য দলের সমর্থিতরাও রয়েছেন। এ সকল প্রার্থীরা কেউ কেউ দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নিজেদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর তকমা দেন। তবে সকলের আশাবাদ নির্বাচনটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। এই আশা নিয়ে প্রার্থীরা চালাচ্ছেন তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। প্রতি ওয়ার্ডে কোন না কোন ভাবে আওয়ামী লীগ দলের সাথে সম্পৃক্ত এমন প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি। তবে জনপ্রিয়তায় এবং জনগণের আস্থার জায়গায় ভোটারদের নির্ভরযোগ্যতার স্থান দখল করে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি ঘেষা প্রার্থীরা। বুধবার নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকার প্রতিবেদক গিয়েছিল নগরী ২৬নং ওয়ার্ডে। সেখানের চিত্র ঠিক এমনটাই। এই ওয়ার্ডটিতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও ভোটারদের আস্থার জায়গা বিএনপি প্রার্থীর। আসলে নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন নিজেদের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে জাহির করলেও প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের মাঠে থাকছেন তিনজন। এরা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ হুমায়ুন কবির, সাবেক কাউন্সিলর মো. ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার এবং মো. শফিকুল ইসলাম সুমন। দিনভর ২৬ নং ওয়ার্ড ঘুরে এবং ওয়ার্ডে সাধারণ ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা যায় ,এই ওয়ার্ডে কিছুদিন পূর্বে রাস্তাঘাটে সমস্যা থাকলেও বর্তমানে তা সমাধান হয়েছে । শাখা রাস্তার তেমন কোন উন্নয়ন না হলেও বর্তমান মেয়রের মাধ্যমে প্রধান সড়ক উন্নত হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের এখন মৌলিক এবং প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশুদ্ধ পানি। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওয়ার্ডের বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে দেয়া পানির সংযোগ অপর্যাপ্ত হওয়ায় এবং গভীর নলকুপ স্থাপনে সিটি কর্পোরেশনের প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে এ সমস্যা চরমে পৌঁছেছে। এছাড়া বর্তমান কাউন্সিলর চাইলেও অনেক সুবিধা এনে দিতে পারেননি। রাজনৈতিক কারণে তিনি শুধু কাউন্সিলর হিসেবেই ছিলেন। এমনটা জানিয়ে সাধারণ বাসিন্দারা আরো জানায়, ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তাদের মতো করেই কাউন্সিলরের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা গুলো নিজেরাই বণ্টন করেছে। তারা নিজেদের অনুসারীদের মাঝেই বেশিরভাগ বন্টন করলেও কিছু সুবিধা পেয়েছে সাধারণ মানুষও। এই ওয়ার্ডের জন্য সর্বোত্তম এবং সুযোগ্য কাউন্সিলর হিসেবে তারা নাম উল্লেখ করেন মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন হাওলাদারের। এক কথায় তারা বলেন ২৬ নং ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষের জন্য ফরিদ উদ্দিনের চেয়ে ভালো কোন ব্যক্তি এর আগে নির্বাচিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে বলে তারা মনে করেন না। তারা আরো বলে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বজায় থাকলে ভোট যুদ্ধে ফরিদ উদ্দীনের সামনে কেউ টিকতে পারবে না। তবে সর্বশেষ তারা তাদের মূল্যবান ভোট তাকেই দেবে যাকে বিপদে-আপদে পাশে পাবে । সাধারণ ভোটারদের সাথে আলাপের পর আলাপ করা হয় ওয়ার্ডের সম্ভাব্য তিন কাউন্সিলর প্রার্থীর সাথে। আলাপে বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, ২৬ নং ওয়ার্ডে প্রধান প্রধান তিন-চারটি সড়ক হয়েছে। তবে জনগণের প্রতিনিধি হয়েও বিগত পাঁচ বছরে সিটি কর্পোরেশনের কোন উন্নয়ন কর্মকা-ে ওয়ার্ডে শরিক হতে পারেননি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দাপটে পারেননি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে কোন নাগরিক সুবিধা বন্টন করতে। ওয়ার্ডের এখন প্রধান সমস্যা হিসেবে রয়েছে পানি সংকট। এছাড়াও আছে রোড লাইট, সাপ্লাই পানির লাইন এর সমস্যা। তিনি বলেন বিএনপি’র মেয়র থাকাকালীন সময়েও বিনামূল্যে এই ওয়ার্ডে টিউবওয়েল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই মেয়র তা তো দেয়নি উল্টো ব্যক্তিগত খরচে টিউবল বসানোর প্রক্রিয়াকেও করে তুলেছে চরম জটিল। তাই বিশুদ্ধ পানির সমস্যার কোন সমাধানই এই পাঁচ বছর প্রতিনিধি হিসেবে তারা ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটারদের দিতে পারেননি। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র প্রার্থীর প্রতি আশাবাদী তিনি । মোঃ হুমায়ূন কবির বলেন, আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ব্যক্তি হিসেবে একজন ভালো মানুষ। তার সাথে আলাপে তিনি তা স্পষ্ট হয়েছেন। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে তার অধীনে প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের জন্য অনেক কিছুই করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সাবেক দুবারে নির্বাচিত কাউন্সিলর মো ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ওয়ার্ডে বিশুদ্ধ পানির সমস্যাটি মূল। প্রধান সড়কের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও এই ওয়ার্ডে শাখা রাস্তাগুলো নেই বললেই চলে। ১১ হাজার ভোটারের এই ওয়ার্ডে আছে মাদকের সমস্যা। এছাড়াও ক্ষমতাসীনদের দলভেদের কারণে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েও জনগণের জন্য কিছুই করতে পারেনি। এতে করে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকার সাধারণ ভোটাররা। যদি পূর্বের নেয় কারচুপির ভোট না হয় সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ বিরাজ করে তবে তিনি ২৬ নং ওয়ার্ড থেকে রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কারণ ২৬ নং ওয়ার্ডের জনগণের আস্থার জায়গায় তিনি রয়েছেন বলেও জানান। অপর সম্ভাব্যপ্রার্থী মো শফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, ছেলেবেলা থেকেই ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষের সেবা করে এসেছেন তিনি । এই ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষকে ভালোবাসেন তাই তাদের পাশে থেকে সর্বদাই নিজেকে তৃপ্ত করতে পারেন। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য কিছু করার প্রত্যয় নিয়েই কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বর্তমান কাউন্সিলর এর কাছ থেকে ওয়ার্ডে সাধারণ ভোটাররা বিগত পাঁচ বছরে কিছুই পায়নি। কাউন্সিলর যতটুকু দিতে না পেরেছেন তার চেয়ে বেশি বাসিন্দাদের জন্য মেয়রের কাছ থেকে এনে দিয়েছেন তারা। ভবিষ্যতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারলে নিজেকে উজাড় করে জনগণের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন বলেও জানান। ২৬ নং ওয়ার্ডটিকে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি মুক্ত এবং আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড গড়ার লক্ষ্যে তরুণ নেতৃত্বে আস্থা রাখার আহ্বান জানান তিনি । উল্লেখ্য, ২ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা আসে আগামী ১২ জুন নির্বাচন। এতে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ছিল গত ২৭ এপ্রিল। বরিশাল সিটিতে বর্তমান ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন।