শেবাচিম হাসপাতালে ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অচলের পাশাপাশি জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে শেবাচিম হাসপাতালে ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অচলের পাশাপাশি জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে - ajkerparibartan.com
শেবাচিম হাসপাতালে ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অচলের পাশাপাশি জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে

3:51 pm , October 15, 2022

 

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে হৃদ রোগীদের জন্য এনজিওগ্রাম  এবং ¯œায়ু রোগীদের রোগ নির্ণয়ে সিটিস্ক্যান চালু করা সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যে এ দুটি মেশিন দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন। গত ১৫ দিনে এ হাসপাতালে ৩ জন রোগীর হার্টের ব্লক অপসারণ করে রিং স্থাপন সম্ভব হয়েছে বলেও পরিচালক জানিয়েছেন। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এনজিও গ্রাম মেশিনের সাহায্যে এখন এ অঞ্চলের  হৃদরোগী বিশেষ করে যাদের হৃদযন্ত্রের ধমনিতে ব্লক রয়েছে, তাদের রিং পরানোসহ রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে বলে হাসপাতালটির সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সালেহ উদ্দিন জানিয়েছেন। একই সাথে এ হাসপাতালে রেডিওগ্রাম করার লক্ষ্যে ‘কোবাল্ট-৬০’ মেশিনটিও সচল  করা সম্ভব হওয়ায় ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের রেডিও থেরাপী প্রদান শুরু করায় এখানের রোগীদের আর ঢাকায় ছুটতে হচ্ছে না।
দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান, বরিশালের শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির সিটিস্ক্যান, এমআরআই, কোবাল্ট-৬০ মেশিন ছাড়াও সেল সিরাম সেপারেটর এবং একাধিক আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বিকল ছিলো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব মেশিন মেরামত বা পুনর্বাসন সহ নতুন মেশিন সরবরাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এতদিন সব প্রচেষ্টা খুব একটা ফলপ্রসু হয়নি। অতি সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়ের প্রচেষ্টায় হাসপাতালটির  বিকল এনজিওগ্রাম এবং সিটিস্ক্যান ছাড়াও রেডিও থেরাপীর কোবাল্ট-৬০ মেশিন সচল হয়েছে। তবে অন্যান্য বিকল মেশিনগুলো কবে নাগাদ সচল এ বিষয়ে আপাতত কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে পারেনি। তবে  প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক সহ দায়িত্বশীল মহল। অতি সম্প্রতি মেরামত হওয়া অতি স্পর্শকাতর ৩টি মেশিন সচল হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সরকারী এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা কিছুটা হলেও উন্নত ও সহজতর হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন। এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ও জনবল সংকট সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা পরিচালন-এ সব চেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে আছে। দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৮শ রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও ৫শ শয্যার জন্য অনুমোদিত জনবলেরও প্রায় ৩০ ভাগ শূন্য এ হাসপাতালে। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে  প্রতিদিন আরো প্রায় দেড় হাজার রোগীর  ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসক থেকে শুরু করে রেডিওলজিষ্ট, রেডিওথেরাপিষ্ট ও ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিষ্ট এর অনেক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় হাসপাতালটিতে ভর্তিকৃত রোগীদের দুর্ভোগের সীমা নেই। অনেক ক্ষেত্রেই চিকিসকরা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। বিশেষ করে গরীব ও অসহায় রোগীরা বাইরে থেকে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা সহ এক্স-রে করাতে না পারলে দিনের পর দিন হাসপাতালের বেড বা মেঝেতে পরে থেকে আরো দুর্বল হয়ে পড়ছেন। এ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ মাত্র ১০টি হলেও সেখানেও আছে শূন্যতা।
হাসপাতালটির প্যাথলজি বিভাগে ৪ জন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিষ্ট পদের বিপরীতে আছেন দু জন। ১০ জন টেকনিশিয়ানের ৪ জনই অন্য হাসপাতালে প্রেষণে নিযুক্ত। ফলে বিশাল এ হাসপাতালটিতে রোগ নির্ণয় কার্যক্রমে যথেষ্ট বিপত্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪শ রোগীর রক্তসহ বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষার জন্য গ্রহণ করতে হয়। একজন সিনিয়র ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিষ্ট ও দুজন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিষ্ট এর পক্ষে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেও এ বিপুল সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
হাসপাতালটির রেডিও এন্ড ইমেজিং বিভাগে ১৫টি এক্স-রে মেশিনের ১৩টি বিকল ছিলো এতদিন। সচল দুটি এক্স-রে মেশিনের সাহায্যে হাসপাতালের ইনডোর ও আউট ডোরের ১০ ভাগ রোগীরও এক্স-রে করা সম্ভব হচ্ছিলো না। ফলে সিংহভাগ রোগীকেই হাসপাতালের বাইরে এক্স-রে করাতে হচ্ছে । তবে অতি সম্প্রতি আরো কয়েকটি ডিজিটাল এক্স-রে  মেশিন এখানে দেয়া হয়েছে। ৪টি পোর্টেবল এক্স-রে মেশিনের দুটি শিশু বিভাগ ও হৃদরোগ বিভাগে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। এখানেও রেডিওলজিষ্ট থেকে শুরু করে অন্যসব পদে জনবল সংকট রয়েছে। হাসপাতালটির রেডিওলজি, জেনারেল রেডিওলজি ও নিউরো রেডিওলজি বিভাগে অধ্যাপকের পদ শূন্য। দুজন সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে একজন দায়িত্বে থাকলেও তিনজন সহকারী অধ্যাপকের বিপরীতে কর্মরত একজন।
এসব ব্যাপারে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা এ হাসপাতালের অচল সব মেশিন সচল করা ছাড়াও পরিবর্তনেরও চেষ্টা করছি। অতি সম্প্রতি এখানে নতুন আল্ট্রাসনোগ্রাম  মেশিন ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনসহ কয়েকটি অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয় ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরেই এমআরআই মেশিন সহ আরো কিছু অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। জনবল সংকট প্রসঙ্গে তিনি জানান, এক বছর আগে যেখানে হাসপাতালটিতে মঞ্জুরীকৃত পদের প্রায় ৫৫ ভাগ শূন্য ছিলো এখন সেখানে শূন্য পদের হার ৩০ ভাগেরও কম।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT