গত মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলো গত মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলো - ajkerparibartan.com
গত মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলো

3:05 pm , October 6, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নির্বিঘœ প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার  মধ্যরাত থেকে উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মৎস্য আহরণসহ সারাদেশে ইলিশের পরিবহন ও বিপণনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীরা আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে পরে ভোলার পশ্চিম আউলিয়া পয়েন্টÑতজুমদ্দিন, মনপুরা দ্বীপ,  পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট-এর ধলচর দ্বীপ, মৌলভীরচর দ্বীপ, কালিরচর দ্বীপ এবং মায়ানী পয়েন্টÑমীরসরাই ছাড়াও কুতুবদিয়া পয়েন্ট এলাকায় মা ইলিশের অত্যাধীক প্রাচুর্য চিহিৃত করেছেন। উপকূলের ওই ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘ইলিশের প্রধান প্রজননস্থল’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর সবধরনের মৎস্য আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে সরকার। ফলে জেলে পরিবারগুলোতে কিছুটা বিষাদের ছায়া লক্ষ্য করা গেছে। তবে সরকার ইলিশ আহরণে নির্ভরশীল জেলেদের খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় ১৩ হাজার  ৮৭২ টন চাল বিনামূল্যে বিতরণের কর্মসূচীও ঘোষনা করেছে। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ৩৭টি জেলার ১৫৫টি উপজেলার ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ জেলে পরিবারের মধ্যে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৪১টি উপজেলার ৩ লাখ ৬ হাজার ১২০ জেলে পরিবারের মাঝে ৯ হাজার ১৮২ টন চাল বিতরণ করা হবে। দেশে উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৭০ শতাংশই  পাওয়া যায় দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও উপকূলীয় এলাকায়।
আগামী ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে পুলিশ এবং র‌্যাব ছাড়াও বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ও কোষ্ট গার্ডকে সম্পৃক্ত করছে সরকার। এছাড়া প্রতিটি জেলা উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমান আদালতসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযানের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার সাথে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার ইলিশ রক্ষায় সরকারী নির্দেশনার আলোকে জিরো টলারেন্স নিয়ে তা কার্যকর করার কথা জানিয়েছেন।
‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’এর আওতায় ২০০৫ সালে প্রধান প্রজনন মৌসুমে দেশে প্রথমবারের মত ১০দিন ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখা হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিনে ও ২০১৬ সাল থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়। এমনকি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র এবং মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখাসহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজার্ভ এরিয়া’ হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রজনন মৌসুমে ২২ দিনের সাথে জাটকা আহরণে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দুই দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন ২ লাখ টন থেকে গত অর্থ বছরে প্রায় ৫.৬০ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। এমনকি সারা বিশে^ উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৬৫% বাংলাদেশে উৎপন্ন ও আহরিত হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১ শতাংশেরও বেশী এবং মৎস্য খাতে প্রায় ১২ শতাংশ।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের ইকোসিষ্টেমে সারা বছরই ৩০শতাংশ মা ইলিশ ডিম বহন করে। এসব ইলিশ পরিপক্ক হয়ে ডিম ছাড়ে। যে ডিমগুলো পুরুষ ইলিশ দ্বারা নিষিক্ত হয়ে থাকে তা নতুন প্রজন্ম গঠন করে।
অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ প্রতিদিন ¯্রােতের বিপরীতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলে জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়ান করে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্ত ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমূহে বিচরণ করে খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারী ক্ষেত্রসমূহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্কতা অর্জনে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২Ñ১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ক হয়েই পূর্র্ণাঙ্গ ইলিশ হিসেবে প্রজননের লক্ষ্যে স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, ২০১৮ সালে ৭Ñ২৮ অক্টোবর আহরণ বন্ধকালে উপকূলের প্রজননস্থল সহ অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয়ে ৪৮ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর মতে প্রজননক্ষম মা ইলিশের হার ২০১৭ সালে ৭৩ শতাংশ থেকে ’১৮ সালে ৯৩ শতাংশে  উন্নীত হয়। পাশাপাশি এসময়ে প্রজনন সাফল্য ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের ফলে ওই সময়ে দেশে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি উৎপাদিত ডিমের ৫০ শতাংশ এর সাফল্যজনক পরিস্ফূটন  সহ তার ১০ শতাংশ বেঁচে থাকলেও ইলিশ পরিবারে নতুন ৩ হাজার কোটি জাটকা যুক্ত হয়। ২০১৯ সালে মূল প্রজনকালীন সময়ে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সমূহে পরীক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩ শতাংশ ইলিশের রেনুর পাশাপাশি ১৭ শতাংশ অন্যান্য মাছের রেনু পোনাও পাওয়া যায়। ফলে ইলিশ আহরণ নিষদ্ধকালীন ২২ দিনে উপকূলে অন্যান্য মাছের নিরাপদ প্রজননও সাফল্যজনক ভাবে স¤পন্ন হচ্ছে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। যা দেশে অন্যান্য প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করছে বলেও জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT