আরো ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র প্রেরণ আরো ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র প্রেরণ - ajkerparibartan.com
আরো ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র প্রেরণ

3:10 pm , August 10, 2020

রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু, ঝালকাঠি ॥ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কোভিড-১৯ এর মাত্র ৬ জন রোগীর চিকিৎসায় খরচ দেখানো হয়েছে ৮ লাখ টাকা। মার্চ ২০২০ থেকে জুন পর্যন্ত এ খরচ দেখানো হয়। এ বরাদ্দের আনুষাঙ্গিক খাতেই খরচ দেখানো হয়েছে ৩ লাখ টাকা। হাসপাতালের সাবেক সিভিল সার্জন শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার থাকাকালীন প্রধান সহকারি আঃ মতিনের বিরুদ্ধে এসব খরচের বিল ভাউচার তৈরী করে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। চলতি অর্থ বছরে আরো ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে মার্চ এপ্রিল মাসে করোনার শুরুতে পজেটিভ আক্রান্তদের চিকিৎসা না দিয়ে বরিশালে রেফার্ড করা হয়েছে। এ নিয়ে রোগীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানালেও সিভিল সার্জন কোন উদ্যোগ নেয়নি। সিভিল সার্জন বলতেন, আমাদের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পজেটিভ রোগীরা চাইলে এখানে চিকিৎসা নিতে পারে। অনেকেই বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে চায়। তাই তাদের ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়না। কিন্তু যখন জুন মাসে করোনার বরাদ্দ টাকা ফেরৎ পাঠানের নির্দেশনা আসে তখনই লুটপাটের প্রক্রিয়া শুরু করতে ওয়ার্ডটি চালুর ঘোষনা দেয়া হয়। তাই মে-জুন মাসে পজেটিভ রোগী ভর্তি করে বরাদ্দের ৮ লাখ টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ফেরত না পাঠালে বরাদ্দের পুরোটাই লুটপাট হতো। হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা খরচ বাবদ গত অর্থ বছরে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ২০ লাখ টাকা। চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বরাদ্দ হতে খরচ দেখানো হয়েছে ৮ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ১২ লাখ টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, উল্লেখিত সময়ে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় চিকিৎসকসহ ২১ জনের খাবার খরচ দেখানো হয়েছে প্রতি জনের ৫০০ টাকা হারে ৯ হাজার ৪৫০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ হিসাবে ৪২০ দিনের খাবার বিল বাবদ ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। ঐ সময় কর্মরত নার্সদের অভিযোগ তাদের জন্য খাবার বিলের বরাদ্দ টাকা দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে নার্স শাহারুন্নেসা, রেখা রানী, শিপ্রা মালোসহ ৬ জন জানান, প্রধান সহকারি মতিন আমাদের জনপ্রতি ২ হাজার টাকা এবং রিনা মিস্ত্রি, তাছলিমাসহ আরো ৬ জনকে ৪ হাজার টাকা করে ধরিয়ে দেয়। এ টাকা কিসের জানতে চাইলে কোন স্বাক্ষর ছাড়াই মতিন আমাদের টাকা দিয়ে বলেন, করোনা ডিউটির জন্য মানবিক কারনে এটা দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে মে-জুন দুই মাসে চিকিৎসকদের ঝালকাঠি বরিশাল পরিবহন খরচ বাবদ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে। হাসপাতালের সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসকদের আনা নেয়া করা হয়েছে। কিন্তু রেন্ট গাড়ির ভাড়া ভাউচারের মাধ্যমে এ টাকা উত্তোলন করে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। গত অর্থবছরে করোনাকালীন যাতায়াত বাবদ কত টাকা বিল পেয়েছেন জানতে চাইলে চিকিৎসক আবুয়াল হাসান বলেন, মনে নেই। কিভাবে বরিশাল থেকে আসা যাওয়া করেছেন প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে। অথচ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক আনোয়ার হোসেন ও মহসীন জানান, বরিশালে থাকা ঝালকাঠির কর্মরত চিকিৎসকদের সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে আনা নেয়া করলেও আমরা কোন পারিশ্রমিক পাইনি।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, উল্লেখিত খাত ছাড়াও এ সময়ে বিল ভাউচারের মাধ্যমে শুধু আনুসাঙ্গিক খাতেই খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। জীবানুনাশক বিল উত্তোলন করা হয়েছে ৩৬ হাজার টাকা। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন খাতে ৬৬ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের প্রধান সহকারি আব্দুল মতিনের বক্তব্য গত অর্থ বছরের ২০ লাখের ৮ লাখ টাকা সঠিক ভাবেই খরচ হয়েছে। বাকি টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। খরচের খাতে কোন অনিয়ম বা ত্রুটি নেই। খাবার খরচ নিয়ে নার্সদের অভিযোগ সঠিক নয়। চিকিৎসকদের ভাড়া গাড়িতে বরিশাল-ঝালকাঠি আসা যাওয়ার ভাউচার দাখিলের মাধ্যমে খরচের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে সাবেক সিভিল সার্জন শ্যমল কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, আমি প্রধান সহকারির সাথে কথা না বলে এই খরচ করা বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না। আপনি তার সাথে যোগাযোগ করে যা জানার জানতে পারেন। এ বিষয়ে ঝালকাঠির নবাগত সিভিল সার্জন রতন কুমার ঢালী বলেন, আমাকে বলা হয়েছে গত অর্থ বছরে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসে ছিল। এরমধ্যে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তার মধ্যে ৩ লাখ টাকার নাকি মাক্স, জীবানুনাশক ইত্যাদি কেনা হয়েছে। বাকি ৪ লাখ টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ দেখানো হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT