2:49 pm , August 4, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর কাশিপুরের বাসিন্দা পিকআপ চালক উজ্জলকে জবাই করে লাশ বালুর নীচে পুতে রাখার ঘটনার মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। নির্মানাধীন শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বিভাগীয় ট্রাক টার্মিনালের চোরাই মালামাল বিক্রির টাকা ভাগ বাটোয়ারা ও চুরির তথ্য ফাঁস করে দেয়ায় সাব কন্ট্রাক্টর ও তার দুই সহযোগী মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর বালু চাপা দেয়া হয় পিকআপ চালক উজ্জলকে। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারকৃত তিন ঘাতকের বরাত দিয়ে পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবউদ্দিন খান এই তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় উজ্জল হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেন তিনি। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নগরী ও ঢাকা সদর ঘাট এলাকা থেকে উজ্জল হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছুড়ি, দুটি বেলচা ও ১টি কোদাল সহ অন্যান্য আলামত জব্দ করেছেন তারা।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বিভাগীয় ট্রাক টার্মিনাল নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানের সাব কন্ট্রাক্টর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ফুলঝুড়ি গ্রামের বাসিন্দা জালাল হাওলাদারের ছেলে ও নগরীর আলেকান্দা রিফিউজি কলোনী’র ভাড়াটিয়া সোহাগ হাওলাদার, ট্রাক টার্মিনালের নির্মান শ্রমিক ও কালকিনি এলাকার ইদ্রিস ফকিরের ছেলে রবিউল ইসলাম এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট এলাকার আনোয়ার হোসেন এর ছেলে পিকআপ চালক রমজান।সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মো. শাহবউদ্দিন খান বলেন, নিহত উজ্জল ও গ্রেফতারকৃতরা একই সাথে চলাফেরা করতো। তারা সংঘবদ্ধভাবে বিভাগীয় ট্রাক টার্মিনালের রড, সিমেন্ট, পাথর এবং স্টীল সিড সহবিভিন্ন নির্মান সামগ্রী চুরি করে তা বিক্রির পর টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে আসছিলো।সর্বশেষ চোরাই মালামার পরিবহনের জন্য উজ্জলের পিকআপ ভ্যান দেড় হাজার টাকায় ভাড়া নেয় সাব কন্ট্রাক্টর সোহাগ। এর মধ্যে ১২শ টাকা পরিশোধ করলেও বাকি ৩শ টাকা আটকে রাখে। পাওনা টাকা চাইলে সোহাগ তার সাথে টালবাহানা শুরু করে। এজন্য উজ্জল ট্রাক টার্মিনালের মূল ঠিকাদারের কাছে সোহাগ, রবিউল ও রমজানের চুরির রহস্য ফাঁস করে দেয়। এরজন্য ঠিকাদার স্বপন সাব কন্ট্রাক্টর সোহাগের পাওয়া ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আটকে দেয়। এতে পিকআপ চালক উজ্জলের উপর ক্ষুব্ধ হয় সোহাগ ও তার অপর দুই সহযোগী।পুলিশ কমিশনার বলেন, ওই ঘটনা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই তাদের মধ্যে বিরোধ চলে। এরই মধ্যে আরো দু’বার উজ্জলকে কোমল পানীয়র সাথে ঘুমের ওষুধ সেবন করিয়ে হত্যার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। তাই সর্বশেষ গত ১ আগস্ট রাত ৯টার দিকে ট্রিপ দিয়ে ভান্ডারিয়া থেকে কাশিপুরে ফেরে উজ্জল। পরে সোহাগ ও রবিউলের ফোন কল পেয়ে বিভাগীয় ট্রাক টার্মিনালের একতলা ভবনের ছাদে ওঠে উজ্জল। এর পর ঘাতকদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিউল ও রমজান পিকআপ চালক উজ্জলকে তাদের দু’জনের মাঝখানে বসিয়ে গল্প করছিলো। ঠিক সেই মুহুর্তে ঘটনার মুল হোতা সোহাগ পেছন থেকে এসে কন্ট্রাকশনের কাজে ব্যবহৃত ধারালো চাকু দিয়ে সোহাগের গলায় আঘাত করে। এতে উজ্জল রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটফট করতে থাকলে রবিউল ও রমজান তার হাত, পা ও মাথা চেপে ধরে। তখন সোহাগ উজ্জলকে ওই চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যা করে।এদিকে ঘটনার পরে রবিউল ও রমজানকে উজ্জলের লাশ গুমের নির্দেশ দিয়ে নগরীর কালুশাহ সড়কে নিজ বাসায় চলে যায় ঘাতক সোহাগ। পরে তার উপস্থিতিতেই ট্রাক টার্মিনালে কাশবনে পূর্বে থেকেই গর্ত করে রাখা স্থানে নিয়ে উজ্জলকে কাথায় পেচিয়ে বালু চাপা দিয়ে দেয় তিন ঘাতক।পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘটনার পরে রবিউল ও রমজান লঞ্চ যোগে ঢাকায় পালিয়ে যায়। তবে মুল হোতা সোহাগ নগরীতে ছিলো। ২ আগস্ট রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এমনকি তার স্বীকারক্তি অনুযায়ী নগরীর সাগরদী ধানগবেষনা এলাকা থেকে নিহত উজ্জলের পিকআপটি উদ্ধার এবং বাকি দুই আসামিকে গ্রেফতারে ঢাকায় চলে যায় পুলিশের টিম। এর পর ৩ আগস্ট সকালে ঢাকা সদর ঘাট থেকে রবিউল ও রমজানকে গ্রেফতার করা হয়।উল্লেখ্য, গত ১ আগস্ট রাত থেকে নিখোঁজ হয় নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডস্থ কলাডেমা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রব সিকদারের ছেলে পিকআপ ভ্যান চালক উজ্জল সিকদার (২১)। এর পর দিন অর্থাৎ দুই আগস বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী নির্মানাধিন বিভাগীয় ট্রাক টার্মিনালে কাশবনের ভেতরে বালু চাপা দেয়া উজ্জলের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের মা পারভিন বেগম বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।