হোমিওপ্যাথির জনক মহাত্মা হ্যানিমানের ২৬৯তম জন্মদিন ও কিছু কথা হোমিওপ্যাথির জনক মহাত্মা হ্যানিমানের ২৬৯তম জন্মদিন ও কিছু কথা - ajkerparibartan.com
হোমিওপ্যাথির জনক মহাত্মা হ্যানিমানের ২৬৯তম জন্মদিন ও কিছু কথা

4:14 pm , April 17, 2024

 

খবর বিজ্ঞপ্তির ॥ ১০ এপ্রিল মহাত্মা হ্যানিমানের ২৬৯ তম জন্মদিন। হোমিওপ্যাথির পথিকৃৎ ফ্রেডারিক সামুয়েল হ্যানিমান ১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ১০ই এপ্রিল জার্মানীর স্যাক্সনি রাজ্যের মাইসেন নগরে এক দরিদ্র মৃৎপাত্র চিত্রকর পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি বিভিন্ন ভাষাসহ চিকিৎসা ও রসায়ন বিদ্যায় সুপন্ডিত ছিলেন। তিনি ৪০ বছর বয়সে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এম.ডি উপাধি প্রাপ্ত হইয়াও হোমিওপ্যাথি বা সদৃশ বিধান মতে অনুরক্ত হলেন। তিনি হোমিওপ্যাথির জনক বলে পরিচিত। তিনি সারাজীবন চিকিৎসা বিজ্ঞানে নানা শাখায় অনুসন্ধান করে সমঃ সমং সময়তি (সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার) এ মূল মন্ত্রের সন্ধান দিয়েছেন। হ্যানিমানের একক সাধনায় পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ চিকিৎসক এবং কোটি কোটি রোগী হয়েছে। পৃথিবীর অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ও চর্চা করতেন এবং হোমিওপ্যাথি ঔষধ খেয়ে সুস্থ্য হয়েছেন।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি ২০০ বছরের অধিক সময় অনেক প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয়েও আজও হোমিওপ্যাথি টিকে আছে এবং এর স্বকীয়তা বজায় রেখে চলেছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা, ইউনানী এবং অন্যান্য বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে প্রতিযোগিতা করে হোমিওপ্যাথি বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি হোমিওপ্যাথি চর্চা ও গবেষণা এবং চিকিৎসা চলছে। হ্যানিমান সৃষ্ট হোমিওপ্যাথি জার্মানিতে প্রথম এ চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হয়। সারা পৃথিবীতে এর ব্যাপক প্রচার ও প্রসার এখনও  ঘটেনি। অনেক দিন থেকে হোমিওপ্যাথি চর্চা ও গবেষণা অব্যাহত থাকলেও হোমিওপ্যাথি দাড়িয়ে আছে দর্শণ শাস্ত্রের উপরে। হ্যানিমানের উদ্ভাবিত ভাইটাল ফোর্স বা জীবনী শক্তি অস্বাভাবিক (কম বা বেশি) হলেই জীবকোষে বিশৃংঙ্খলতা বা অসুস্থতা দেখা দেয়। হোমিওপ্যাথিতে রোগের মূল কারণ মায়াজম। এর সাথে আধুনিক জেনেটিক্স বা বংশগতি বিদ্যার কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা খুঁজে দেখা দরকার। হোমিওপ্যাথি আজও লক্ষন ভিত্তিক চিকিৎসা বিজ্ঞান হিসাবে পরিচিত।
বর্তমানে আমার গবেষণায় একে ভাইটাল ফোর্সের পরিবর্তে কোষীয় চৈতন্য শক্তি বা সেলুলার কনসাসনেস বলাই সংগত এবং চৈতন্য শক্তির কম বেশি হলেই জীবকোষে বিশৃ:ঙ্খলতা সৃষ্টি হয় এবং রোগ দেখা দেয় দেহে। অতীব দুঃভাগ্যের বিষয় যে, হোমিওপ্যাথির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি না কোন বৈজ্ঞানিক সূত্রও আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু হোমিওপ্যাথি ঔষধ খেলে রোগ সারে। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? কোন কোন বৈজ্ঞানিক মনে করেন, হোমিওপ্যাথি ঔষধের মধ্যে কোন অনু বা মলিকুল নেই। তাহলে এটা ঔষধ হলো কিভাবে বা কিভাবে দেহে কাজ করে ? তবে আমার অনুসন্ধান থেকে বলছি যে, হোমিওপ্যাথির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রসায়ন শাস্ত্রের সূত্রাবলী দ্বারা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন পদার্থ বিজ্ঞানের আধুনিক সূত্রাবলীর প্রয়োগ। বর্তমানে অনেক প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরা হোমিওপ্যাথি নিয়ে গবেষণা করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন প্রখ্যাত ন্যানো প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক ড. জয়েস রমেস বিলারী। তিনি ভারতের আইআইটি মুম্বাইয়ের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী। তিনি ২০১০ সালে একটি গবেষণা প্রবন্ধে তার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন। এতে তিনি হোমিওপ্যাথিক ঔষুধের মধ্যে ন্যানো কনার উপস্থিতি শনাক্ত করেন। ইহাই হোমিওপ্যাথির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। অন্যরা হলেন ব্রিটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ব্রাইয়েন যোশেফসান যিনি ১৯৭৩ সনে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান এবং আরেকজন হলেন ফ্রান্সের ভাইরোলজিষ্ট অধ্যাপক লুক মনট্যাগনিয়ার যিনি ২০০৮ সালে হিভ ভাইরাস এর  উপর গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার পান।
ফ্রান্সের বিজ্ঞানী জেকুইস বিনভেনিষ্ট ১৯৮৮ সনে প্রথম ‘নেচার’ জার্নালে হোমিওপ্যাথির বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তখনি বৈজ্ঞানিক মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এটাই প্রতিষ্ঠিত কোন জার্নালে প্রকাশিত হোমিওপ্যাথির প্রথম বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বলে ধারনা করা হয়। এর বিরুদ্ধে অনেক বৈজ্ঞানিক প্রতিবাদ লেখাও ঐ জার্নালে ছাপা হয়। পরে ঐ বৈজ্ঞানিকের আরেকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে ফ্রান্স থেকে গবেষণার মূল বিষয় ছিল হোমিওপ্যাথি ঔষধের মধ্যে ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ইনফরমেশন খোঁজা। যাকে তিনি নাম দেন ওয়াটার মেমোরি। এ প্রবন্ধে গবেষক এর নাম দেন বাইয়োম্যাগনেটিক সিগলালিন বা হোমিওপ্যাথিতে কোয়ান্টাম ইফেক্ট। বর্তমানে আরও অনেক গবেষক  হোমিওপ্যাথি চর্চা ও গবেষনায় যুক্ত আছেন তাদের মধ্যে জার্মানীর অধ্যাপক এইচ ওয়ালেস, আমেরিকার অধ্যাপক আইরেশ বেল, ইটালির অধ্যাপক ডেল গুইডিস, আমেরিকার অধ্যাপক রুস্তম রায় প্রমুখ। এই প্রবন্ধের গবেষক মানুষের উপর হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনের গবেষণার পাশাপাশি ফসলের, পশুপাখি ও মাছের উপর হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করছেন। হ্যানিমানের সৃষ্টি হোমিওপ্যাথি সারা বিশ্বে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হউক। পৃথিবীর সমস্ত হোমিওপ্যাথির পথিকৃৎ, চিকিৎসক, গবেষক, রোগী এবং অনুরাগীদের হ্যানিমানের জন্মদিনে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT