ছয়লেন মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শুরু আর কত দূর! ছয়লেন মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শুরু আর কত দূর! - ajkerparibartan.com
ছয়লেন মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শুরু আর কত দূর!

4:07 pm , March 27, 2024

আসন্ন ঈদে দুর্ভোগের শঙ্কা

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ আসন্ন ঈদ উল ফিতরে সার দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা জাতীয় মহাসড়কে বড় ধরনের বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ নিয়ে শংকিত পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। ঘরমুখি এবং  ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলমুখি মানুষের বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ নিয়ে শঙ্কায় সবাই। পদ্মা সেতু চালু হবার পরে বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকার সাথে রাজধানী সহ প্রায় সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী বরিশাল-ফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কটিতে যানবাহনের সংখ্যা প্রায় তিনগুন বেড়ে গেছে। কিন্তু ঢাকা থেকে ৬ লেনের বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পদ্মাসেতু পার হয়ে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ভাঙ্গায় পৌঁছানোর পরে বরিশাল পর্যন্ত ১৮-২৪ ফুট প্রশস্ত ৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে তীব্র যানজট ও দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। ১৯৬০ থেকে ’৬৬ সালের মধ্যে মাত্র ৫ টন বহনক্ষম এ মহাসড়কটি দুই যুগ আগে জাতীয় মহাসড়কের মর্যাদা লাভ করলেও ১২ ফুট থেকে ২৪ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত হয়েছে, কিন্তু বহন ক্ষমতা আর বাড়েনি।
উপরন্তু দুই পাশের নানা অবৈধ স্থাপনা মহাসড়কটিকে গলা টিপে ধরেছে। বাড়তি ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে অবৈধ যানবাহনের আধিক্য। বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। সড়ক অধিদপ্তর ও হাইওয়ে পুলিশের একাধিক সূত্রের মতে বরিশাল-ফরিদপুর মহাসড়কে এখন প্রতিদিন গড়ে ১৮ হাজারেরও বেশী যানবাহন চলাচল করে। যা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় সমান। অথচ জাতীয় এ মহাসড়কটি ৬ লেনের। আর বরিশাল-ফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কটি সিঙ্গেল লেনের। প্রতিদিন এ মহাসড়কে কমপক্ষে ৫টি করে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ২০ মার্চ পূর্ববর্তী ছয় মাসে এ মহাসড়কে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো দু শতাধিক। এসব দুর্ঘটনাজনিত কারণ ছাড়াও নিত্যদিনের যানজটে প্রতিদিন নাকাল হচ্ছেন এ মহাসড়ক ব্যবহারকারী নারী ও শিশু সহ হাজার হাজার যাত্রী। এসব দুর্ঘটনা ও যানজটে এ মহাসড়ক ব্যবহারকারী পণ্য পরিরবহনেও দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে। মহাসড়কটির বাটাজোর, গৌরনদী, ভূরঘাটা, রাজৈর, টেকেরহাট, ভাঙ্গা, তালমামোড় ছাড়াও বরিশাল মহানগরীর নতুল্লাবাদ, নবগ্রাম রোড-চৌমহনী, আমতলা মোড়, রূপাতলী ও বাকেরগঞ্জে যানজট এখন নিয়মিত ঘটনা।
পদ্মা সেতু চালু হবার পরে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার পথ পাড়ী দিতেই এখন বিভিন্ন যানবাহনের প্রায় ৩ঘন্টা সময় চলে যাচ্ছে । ফলে সেতু চালুর পরে দ্রুত সময়ে ঢাকা ও সন্নিহিত এলাকায় পৌঁছানোর যে আশা করা হয়েছিল, তা ইতোমধ্যে মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে।
অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিক্রমে ২০১৫ সাল থেকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বরিশালÑফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কটি সাগর পাড় পর্যন্ত  ৬ লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে ২০১৮ সালে শেষ হয়। এমনকি সমীক্ষার পথনকশা অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে ১৮শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে একটি আলাদা প্রকল্পও অনুমোদন করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ৩ বছর পরেও ভূমি অধিগ্রহণ কাজের অর্ধেকও সম্পন্ন হয়নি। তবে ওইসব জমির বর্তমান বাজার মূল্য দ্বিগুনেরও বেশী বৃদ্ধি, নতুন পথনকশা অনুযায়ী বাড়তি প্রায় ২শ হেক্টর সহ জমির মূল্য পরিশোধেই দ্বিগুনেরও বেশী অর্থের প্রয়োজন হবে বলে সড়ক অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বাস্তবতার আলোকে ইতোমধ্যে বরিশাল মহানগরীর পরিবর্তে প্রায় ১৬ কিলোমিটার বাইপাস নির্মানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় সে অনুযায়ী  সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পটুয়াখালীতেও পথনকশায় কিছু পরিবর্তন করতে হচ্ছে। ফলে এ দুটি স্থানে আরো অন্তত ২শ হেক্টর বাড়তি ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সংশোধিত ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ তৈরীর কথাও জানিয়েছে সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র।
অপরদিকে মহাড়কটির বরিশাল বিমানবন্দর ও ফরিদপুরে একটি প্রতিববন্ধী স্কুলের কাছে এলাইনমেন্ট নিয়েও যথেষ্ট জটিলতা তৈরী হয়েছে। এ দুটি স্থানের এলাইনমেন্ট নিয়ে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হতে পারে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।
অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি চূড়ান্ত না হলে এডিবি ছাড়া আরো কয়েকটি দাতা সংস্থার সাথে প্রকল্পটির অর্থায়ন নিয়ে কথা চলছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে ২০১৫ থেকে ’১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও পথনকশা অনুযায়ী ২১১ কিলোমিটার মহাসড়কটির জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ২১ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও ভূমি অধিগ্রহণেই অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন হতে পারে। যার পুরোটাই দিতে হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।
উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে পৌঁছলেও সেখান থেকে ৯১ কিলোমিটার দক্ষিণে বরিশাল, ৩০ কিলোমিটার উত্তরে ফরিদপুর শহর এবং ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে পায়রা ও ২০৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটায় পৌঁছার মহাসড়কের কোনটিই মানসম্মত নয়। এসব মহাসড়ক এখনো মাত্র ১৮ থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ।
ফলে  আসন্ন  ঈদ উল ফিতরের আগে পরে দেশের ৮ নম্বর বরিশালÑফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কে সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সংশ্লিষ্ট মহল।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT