বিদ্যারূপেন সংস্থিতা বিদ্যারূপেন সংস্থিতা - ajkerparibartan.com
বিদ্যারূপেন সংস্থিতা

3:47 pm , February 14, 2024

মুকুল দাস ॥ দস্যু রতœাকর বাল্মিকী হয়েছিলেন যার বরে, তারই বরে মহামূর্খ কালিদাস কবিকুল তিলক কালিদাসে রূপান্তরিত হয়েছেন। তিনিই জ্ঞান দায়িনী বেবী সরস্বতী। কেউ বলেন বাগদেবী আবার কেউবা বীনাপানি। সৃস্টির প্রথম প্রভাত থেকে যে শক্তি এগিয়ে নিয়ে এসেছে মানব সভ্যতাকে সেই শক্তিই হচ্ছেন বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী মহাশ্বেতা সরস্বতী। মাঘ মাসের শুক্লা শ্রীপঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবী অর্চিত হয়ে থাকেন। দেবী সরস্বতীর চিত্রকল্প এই রকম শুভ্রসূতি, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেত হংসারূঢ়া, শ্বেত বস্ত্র পরিহিতা, শ্বেত পুষ্পে শোভিতা, শ্বেত চন্দনে চর্চিতা, পুস্তক লেখনী এবং শ্বেত বীনাধারিনী। বলা যায় প্রতিটি অনুষঁন্দের গভীর তাৎপর্য রযেছে ধর্মীয়ভাবে। দেবীর অধিষ্ঠানের পর পুজোর আগ পর্যন্ত উপোস থেকে মায়ের চরণে অঞ্জলি নিবেদন করে বিদার্থীরা এবং প্রার্থনা জানায় প্রণাম মন্ত্রের মাধ্যমে।
“সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল লোচনে
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।”
জ্ঞান শক্তির আধার দেবী সরস্বতী। ইনি বানীরূপিনী বাগদেবতা। বাগ দেবী অর্থে এর মাহাত্ম্য এরূপ মানুষের হৃদয়কে পবিত্র ও নির্মল করেন। যিনি যজ্ঞ শলিনী এবং অন্নদাত্রী সেই সরস্বতী দেবী আমাদের যজ্ঞ কামনা করেন। ইনি সুন্দর ও সত্য বাক্যের প্রেরণ কর্ত্রী, ইনি যজ্ঞের ধারনকর্ত্রী। ইনি সমুদয় নর-নারীর হৃদয়ে জ্যোতি সঞ্চারিত করেন। সরস্বতীর দেবীরূপে উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায় পরমাত্মার মুখ থেকে এক দেবীর আবির্ভাব হয়। এই দেবী শুক্লবর্না, বীনাধারিনী ও চন্দ্রের শোভাযাক্তা। এই দেবী শ্রুতি ও শাস্ত্রের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবিদের ইষ্টদেবতা। এ জন্য এ দেবীর নাম সরস্বতী। সৃষ্টিকালে ইনি ইশ্বরের ইচ্ছায় পাঁচ ভাগে বিভক্ত হন। রাধা, পদ্মা, সাবিত্রী, দূর্গা ও সরস্বতী। এর মধ্যে এক শক্তি সরস্বতী কৃষ্ণ কন্ঠ হতে উদ্ভূতা। শ্রী কৃষ্ণ এই দেবীকে প্রথমে পুজো করেন। সেই থেকে এই দেবীর পুজোর প্রচলন হয়। দেবী কৃষ্ণ হতে উদ্ভৃত হয়ে কৃষ্ণকে কামনা করেন। তখন কৃষ্ণ সরস্বতীকে নারায়ন ভজনা করতে বলেন (ব্রহ্মা বৈবর্ত পুরাণ) দেবী ভাগবত মতে সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী, কিম্ভ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ সতে লক্ষী ও সরস্বতী দু’জনের নারায়নের স্ত্রী। সরস্বতীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র এরকম।
ভদ্র কাল্যৈ নমো নিতং সরস্বত্যৈ নমোনম:
বেদ বেদাদ্দঁ বেদান্ত বিদ্যাস্থানেভ্য এ বচ ॥
এষ সচন্দন পুষ্প বিল্ব পত্রাঞ্জলি ও সরস্বত্যৈ নমোঃ”
বেদে সরস্বতী বাগদেবী ভূলোকে ইলা, অন্তরীক্ষ লোকে সরস্বতী আর স্বর্গলোকে ভারতী নামে খ্যাত। সরস্বতী শব্দ বিশ্লেষনের মাধ্যমে দেখা যায়- সরস শব্দের উত্তর বতুপ প্রত্যায়যোগ করে এবং স্ত্রী লিঙ্গ ঈশ প্রত্যয়যুক্ত করে হয় সরস্বতী। সরস্বতী পুজোর দিনেই ছোট শিশুদের হাতে খড়ি দেয়া হয়। পুরুত মশাই কষ্টি পাথরের থালার উল্টো পিঠে শিশুকে চকখড়ি দিয়ে বর্নমালা লেখান। আবার কোথাওবা খাগের তৈরী কলম উপুর হয়ে কপালে ঠেকায়।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে
কুচযুগ শোভিত মুক্তাহাতে
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে
ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্তুতে ॥
স্তোত্র উচ্চারণের মধ্যদিয়ে খাগের কলম মাটি থেকে তুলতে হয়। যার কপালে কলম লেগে থাকে ধারণা করা হয় তার প্রভূত বিদ্যার্জন হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বী শিল্পী, কবি, লেখক, নাট্যকর্মী, সঙ্গীত শিল্পী সকলের আরাধ্যা দেবী সরস্বতী। এ পুজোর প্রচলন সাধারন ভাবে স্কুল, কলেজ, ক্লাব ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহে রয়েছে এবং এ উপলক্ষে আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ঢালাও ব্যবস্থা থাকে। কিছুদিন আগেও সরস্বতী পুজোর দিন পড়াশুনো ও গান গাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন পুজোর দিনই মায়ের সামনে হারমোনিয়াম নিয়ে গাইতে হয়।
“আমারও তো সাধ ছিল, আশা ছিল মনে
সরস্বতীর চরণ ছুয়ে থাকবো জীবনে” ॥
সরস্বতী পুজো ব্যক্তিগত ও সর্বজনীন দু’ভাবেই হয়ে থাকে। শ্রী পঞ্চমী তিথিতেই বানীবরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিদ্যার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীগণ। এভাবে প্রতিবছর মা আসেন আবার চলে যান।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT