দক্ষিণাঞ্চলে পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির পরেও কৃষকের গলার কাটা ! দক্ষিণাঞ্চলে পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির পরেও কৃষকের গলার কাটা ! - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চলে পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির পরেও কৃষকের গলার কাটা !

3:34 pm , March 18, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে আবাদের সাথে অনুকুল আবহাওয়ায় ভাল ফলনের পরে দর পতনে উৎপাদিত পেঁয়াজ নিয়ে কৃষকের দুর্গতির শেষ নেই। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের একটি বড় অংশেরই আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায়। এ অঞ্চলে আবাদকৃত প্রায় ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে এবার পেঁয়াজে উৎপাদন প্রায় ১২ লাখ টনের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বীজসহ অন্যান্য উপকরন এবং কৃষি শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির কারণে এবার প্রতি মণ পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৬শ টাকা হলেও জমিতে সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকায়ও তা কিনতে চাচ্ছে না পাইকাররা। ফলে লাভের আশা ইতোমধ্যে দূরাশায় পরিনত হয়ে পেঁয়াজ এখন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকের গলার কাটায় পরিনত হয়েছে। কৃষকের কপালে দুঃশ্চিন্তার রেখাও ক্রমশ গভীর হচ্ছে। অথচ খোলা বাজারে এখনো প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রী হচ্ছে মানভেদে ৩৩ থেকে ৩৮ টাকায়।
গত এক দশকে দক্ষিণাঞ্চলে পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ ভাগ। কিন্তু এবার উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় আগামী বছরগুলোতে এ অর্থকারী ফসল আবাদে কৃষকের মাঝে আগ্রহ কতটা অক্ষুন্ন থাকবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে অর্থনীতিবীদদের মধ্যে।
সমাপ্ত প্রায় রবি মৌসুমে দেশে ৩৬ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ২ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টরে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী এবার দেশে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরেরও বেশী জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে ৩৬ লাখ টনেরও বেশী। যার মাধ্যমে দেশে চাহিদার প্রায় কাছাকাছি মেটান সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন কৃষিবীদরা।
নিকট অতীতেও দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশে পেঁয়াজ আবাদের পরিমান ছিল সীমিত। ফলে বিপুল পরিমান পেঁয়াজ আমাদানী ছাড়া কোন বিকল্প ছিলনা। তবে অতি সাম্প্রতিককালে সারাদেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও পেঁয়াজ আবাদ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। এমনকি সাম্প্রতিককালে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদও ধীরে ধীরে বাড়ছে। কৃষিবীদদের মতে, রবি মৌসুমে বর্তমান আবাদ পরিস্থিতি ধরে রাখার সাথে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ বৃদ্ধিসহ কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল উন্নত বীজ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে পারলে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজেই পুরো চাহিদা মেটান সম্ভব হতে পারে।
রবি ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদের ক্ষেত্রে এখনো কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানেরÑউচ্চ ফলনশীল বীজসহ আবাদ প্রযুক্তি কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছছে না। এমনকি আমাদের কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-‘বারি’ ইতোমধ্যে উন্নতমানের ও উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজের একাধিক জাত উদ্ভাবন করলেও কৃষক পর্যায়ে তার বীজ এবং আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তর না করায় এতদিন চাহিদা ও উৎপাদনে ব্যাপক ঘাটতি ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবাদ ও উৎপাদন বাড়লেও এখন উৎপাদিত পেঁয়াজ ক্রমশ কৃষকের গলার কাটা হয়ে উঠতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন কৃষিবীদরা।
কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত “বারিÑ১” নামের বীজ থেকে হেক্টর প্রতি ১২Ñ১৬ টন পর্যন্ত উন্নতমানের পেঁয়াজ উৎপাদন সম্ভব। এ জাতটির পেঁয়াজের কন্দের আকার চ্যাপ্টা ও গোলাকার। ৫০Ñ৫৫সেন্টিমিটার উচ্চতার গাছের গোড়ায় কন্দ পাটল বর্ণের এবং অধিক ঝাঁঝযুক্ত পেয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। এসব গাছে পাতার সংখ্যা ১০Ñ১২টি। প্রতি কন্দের ওজন ৩০Ñ৪০ গ্রাম।  অপরদিকে এ পেঁয়াজ বীজের ফলনও হেক্টর প্রতি প্রায় ১ টনের মত। এ জাতের পেঁয়াজ পারপেল ও স্টেম ফাইলাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন বলে জানা গেছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT