আবারও অবরুদ্ধ মহাসড়ক জনগণের ভোগান্তি চরমে আবারও অবরুদ্ধ মহাসড়ক জনগণের ভোগান্তি চরমে - ajkerparibartan.com
আবারও অবরুদ্ধ মহাসড়ক জনগণের ভোগান্তি চরমে

3:38 pm , March 16, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ পার্কিং নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে আবারও অবরুদ্ধ হয়েছে ঢাকা-পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি মহাসড়ক। সকাল দশটা থেকে ঘন্টাখানেকের এই অবরোধের কারণে হাজারো যাত্রী চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ বাস বা গণপরিবহন ত্যাগ করে হাঁটতে শুরু করেন এসময়। অনেক মহিলা, বৃদ্ধ যাত্রী ও শিশুদের কষ্টের সীমা ছিলোনা। ঝালকাঠির রাজাপুর ও বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে আসা এ্যাম্বুলেন্সও আটকে ছিলো যানজটে। যানজট বিস্তৃত হয়েছিলো পটুয়াখালী সড়কের নলছিটি জিরো পয়েন্ট, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রূপাতলী হয়ে আমতলা মোড় এবং ঝালকাঠি পিরোজপুর মহাসড়কের কালিজিরা ব্রীজ পর্যন্ত। একদিকে রূপাতলী চত্বরে শ্রমিকদের অবস্থান অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যুতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ছাত্রদের অবরোধে মহাসড়ক অচল হয়ে যায়।  এর আগে গত ৩ মার্চ ইজিবাইক ও অটোরিকশা শ্রমিকদের সাথে বাস শ্রমিকদের সংঘর্ষে মহাসড়কে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। নগর চিন্তাবিদদের দাবি শুধু শ্রমিকরা নয়, রাজনৈতিক মিছিল মিটিং এর কারণেও নগরীতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে সদর রোড প্রায় প্রতিদিনই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়।
১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনালের বাস শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে মুসা নামে এক মাহেন্দ্র চালককে মারাত্মক জখম করে। প্রতিবাদে একঘন্টার বেশী মহাসড়ক অবরোধ করে মাহেন্দ্র শ্রমিকরা। সকাল দশটায় একই সময় বরিশাল-পটুয়াখালী  মহাসড়কের শিমুলতলা বাজারের সামনে বাসচাপায় স্কুলছাত্রসহ ২ জন নিহতের ঘটনায় সেখানেও সড়ক অবরোধ করে ছাত্র ও জনতা। ফলে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় বরিশাল নগরীসহ আশেপাশের এলাকায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, সকাল দশটার দিকে রূপাতলী বাস টার্মিনালের একদল শ্রমিক বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মাহেন্দ্র স্ট্যান্ডে এসে অপেক্ষমান একটি গাড়ি সরিয়ে নিতে  বলে। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা মুসা নামে এক মাহেন্দ্র চালকের উপর হামলা চালিয়ে মারাত্মক জখম করে। সজিব, পলাশ, গাজী, সুমনসহ নামে বেশ কয়েকজন চালক জানান, প্রায় প্রতিদিনই সিটি করপোরেশনের হলুদ কটি পরা একদল অপরিচিত লোক এসে মেয়রের দোহাই দিয়ে আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আঘাত করে আলফার গ্লাস, সাইডলাইট এসব ভাঙছে। কিছু বললেই তারা বলছে আমরা মেয়রের লোক। মেয়রের নির্দেশ পালন করছি।
সকাল দশটার দিকে একদল বাস মালিক সমিতির লোক এসে মাহেন্দ্র চালক মুসাকে মারধর করেছে। পুলিশ এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মাহেন্দ্র শ্রমিকরা রূপাতলী গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। ফলে ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী সড়কের সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়ক থেকে সরে যায় শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা আরো বলেন, এসময় মহানগর শ্রমিকলীগের সভাপতি পরিমল দাসও ছিলেন। তিনিতো বলতে পারতেন মাহেন্দ্র বা আলফা চালকরা আমারই শ্রমিক। কেন তাদের এভাবে হয়রানি করা হয়? তিনি তা কিছুই বলেননি। তিনি উল্টো বাস মালিক সমিতির লোক হয়ে কথা বলেছেন।
বাস মালিক চালক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরিমল দাস জানান, তেমন কিছুই ঘটেনি। একজন আলফা চালকের সাথে বাস মালিক সমিতির একজনের একটু তর্ক হয়েছিলো। আমরা ও মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে শান্ত করেছি।
এরকম ঘটনাতো প্রায়শই ঘটছে, এটা কেন? উত্তরে পরিমল বলেন, এক জায়গায় থাকলে এরকম একটু আধটু হয়। আবার মিটেও যায়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আলফা চালকদের সাথে বাস শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে সড়ক অবরোধ হয়েছিল। আমরা কোতোয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত আলফা চালককে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাই ও তাদের সর্বাত্মক আইনী সহযোগিতার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন। এর আগে গত ৩ মার্চ রুপাতলীতে ইজিবাইক পার্কিং করা নিয়ে শ্রমিকদের মারধর করার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রতিবাদে ইজিবাইক শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে। ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য রমজান আকন হৃদয় জানান, রূপাতলী স্ট্যান্ডের আশেপাশের এলাকাও কি বাস মালিক সমিতির কর্মচারীরা ইজারা নিয়ে নিয়েছে? নাকি মেয়র শুধু তাদেরই লোক? তারা মাহেন্দ্র আলফা, সিএনজি, ইজিবাইক স্ট্যান্ডে এসে প্রায়শই ঝামেলা করছে।
হৃদয় বলেন, এর আগে তারা আমাদের ইজিবাইক শ্রমিক শাওন ও আবদুল্লাহকে মারধর করেছে। যার ধারাবাহিকতায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরুদ্ধ করে। তখন বাস মালিক সমিতির কর্মচারীরাও সংঘবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেয় ও দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছিলো। পরবর্তীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা ডা. মনীষা চক্রবর্তীসহ স্থানীয় নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. ফারুক ও বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপনের উপস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হয়। সেই সময় বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশসহ ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ না করার অঙ্গীকার করা হয়। তারপরও তাদের আচরণ একই আছে। ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারাও বাস মালিক সমিতিকে এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে সতর্ক করেছেন বলে জানান রমজান আকন।
১৬ মার্চ বেলা ২ টার পরে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের ট্রাফিক বক্সে গেলে কর্মকর্তা ইমরান বলেন, বর্তমানে রুপাতলী এলাকায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এখানে এসে জানা যায়, সপ্তাহ দুয়েক আগে বাস শ্রমিকদের সাথে ট্রাফিক সার্জেন্টেরও ঝামেলা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ মনে করতে পারেননি সার্জেন্ট ইমরান।
এধরণের অসংখ্য  অশোভন আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে রূপাতলী বাস টার্মিনালের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। তবে তা অস্বীকার করে শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন জানান, গত ডিসেম্বরে সার্জেন্ট টুটুলের সাথে ঝামেলা হয়েছিল। সে বিভিন্ন সময় তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমাদের শ্রমিকদের মারধর করতো। শ্রমিকরা কোনো অন্যায় করলে তিনি আমাদের জানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা না করে প্রায়ই পরিবহন শ্রমিকদের অত্যাচার করেন।
বরিশালের সামাজিক আন্দোলনের নেতা ও বরিশাল সাহিত্য সংসদের সহ সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ বলেন, কিছু হলেই মহাসড়কে অবরোধ তোলাটা যেমন আমাদের কাম্য নয়, তেমনি ব্যস্ত সড়ক আটকে কোনো বিয়ে, মাহফিল বা রাজনৈতিক কর্মসূচিও আমরা চাইনা। এজন্য একটা নীতিমালা হওয়া এবং তা পালনে বাধ্য করা খুবই জরুরী। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক সব কর্মসূচি শহরের বাইরে নির্দিষ্ট বড় মাঠে হওয়া উচিত।
কাজী মিজানুর রহমানের বক্তব্যে সমর্থন দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক এবং বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT