ইউজিসির অনুমোদন অভাবে অনেক কাজ অসমাপ্ত পড়ে আছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসির অনুমোদন অভাবে অনেক কাজ অসমাপ্ত পড়ে আছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের - ajkerparibartan.com
ইউজিসির অনুমোদন অভাবে অনেক কাজ অসমাপ্ত পড়ে আছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের

3:19 pm , February 28, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাসের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা, পর্যাপ্ত গবেষণাগার, পাঠাগার, মিলনায়তন ছাড়াও নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালুরও সুযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র ইউজিসির অনুমোদন অভাবে অনেক কাজ অসমাপ্ত পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
বরিশালে কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে ৫৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়টি গত ২২ ফেব্রুয়ারী একযুগ পূর্তি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করে। নদী তীরবর্তী এমন মনোরম পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন ও নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে উইন্ডমিলের ব্যবহার নিয়ে কথা ওঠে উৎসব মঞ্চে। এছাড়াও ৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর থাকার জন্য  ছেলেদের দুটি ও মেয়েদের দুটি হল বর্তমান রয়েছে। এ হলগুলোতে এক হাজার শিক্ষার্থী থাকতে পারলেও বাকিদের বাইরে মেসে থাকতে হচ্ছে। এ জন্য তাঁদের ব্যয় যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে নিরাপত্তাহীনতা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কমিটি না থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের প্রভাব বিস্তার ও কোন্দলের নীরব শিকার হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্লাসরুম ও পাঠাগারের পর্যাপ্ত বইয়ের সংকট স্পষ্ট হলো বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে। শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। অধ্যাপক আছেন মাত্র একজন, ৩৫ জন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছে বাকী সব পদই শূন্য। নেই   উপ উপাচার্য, স্থায়ী রেজিস্টার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ট্রেজারারসহ পাঁচটি অনুষদের ডিন নেই। গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত বই না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী তায়েফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের চার বছরে ৩২টি কোর্স করতে হয়। এসব কোর্সের অধিকাংশ বই আমাদের গ্রন্থাগারে নেই। একযুগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য কোনো গতি আনা যায়নি। গবেষণা খাতে বরাদ্দও সীমিত। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো শিক্ষকেরা নিজেদের উদ্যোগে গবেষণা কাজে অংশ নিলেও শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটা একেবারেই অনুপস্থিত। শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত না করা গেলে শিক্ষার মান বৃদ্ধির করার উপায় নেই। গবেষণা উপযোগী ল্যাব, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, বাজেট, দক্ষ শিক্ষক সবকিছুতেই সংকট রয়ে গেছে বলে স্বীকার করেন কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু গত ১১ বছরে আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের অনেক রিসোর্স আছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল আমাদের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি নানা বিষয়ে গবেষণা করবে, নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করবে। নিজস্ব বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস ইত্যাদি সহ দেশ-বিদেশের মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে তাঁদের একটি নিবিড় নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। এর মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, উদ্ভাবন আদান প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান আসবে। সেটা আমরা ততটা অর্জন করতে পারিনি।’
তবে উইন্ডমিল, বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেট ও বেশ কয়েকটি অসমাপ্ত ভবনের নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক বরাদ্দ না পাওয়ার অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। সরেজমিনে ২৮ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার ববি ক্যাম্পাস ঘুরে, জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল মাহমুদ, ডেপুটি রেজিস্টার বাহাউদ্দীন গোলাপ, সহকারী রেজিস্টার মোঃ শোয়েব, হিসাব উপপরিচালক সুব্রত কুমার বাহাদুর, লাইব্রেরীয়ান ড. ধীমান কুমার রায়সহ টিএসসি এলাকায় ছাত্র শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনির্ভর হয়ে ওঠার।
কেননা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘিরে দুপাশে প্রধান সড়কে হতে পারে বাণিজ্যিক স্থাপনা। যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় তৈরি হবে। ক্যাম্পাসের ভেতর অসমাপ্ত ভবন, ছাত্রাবাস বৃদ্ধি ও মিলনায়তনের কাজ সম্পন্ন হলে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ও আয় বৃদ্ধি ঘটবে। বিদ্যুৎ খাতে একটা বড় ব্যায় বাঁচানো সম্ভব হবে নদী তীরবর্তী এলাকায় উইন্ডমিল স্থাপন করে কিংবা সব টয়লেটের পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে বায়োগ্যাস প্লানে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন। এজন্য সুষ্ঠু  পরিকল্পনা জরুরী বলে জানান ববি উপাচার্য ছাদেকুল আরেফিন। তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনার অভাব নেই। পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক বরাদ্দের অভাবে বেশিরভাগ কাজ আটকে আছে।
২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল সদর উপজেলার কর্ণকাঠীতে ৫০ একর জমিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের যৌক্তিক প্রত্যাশা, দাবি ও লালিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরের বছর ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জিলাস্কুল ক্যাম্পাসের কলেজ ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম পরিচালনা এবং শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের শুভ সূচনা ঘটে। প্রতিষ্ঠাকালীন ০৪টি অনুষদের অধীনে ০৬টি বিভাগের ৪০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ০৬টি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগে প্রায় ৯১০০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। ১৯৯ জন শিক্ষক, ১১৬ জন কর্মকর্তা এবং ১৪৪ জন কর্মচারীর সমন্বয়ে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির কারিগর হিসেবে জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আন্তরিকতা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক, গবেষণা, সহশিক্ষাসহ বঙ্গবন্ধুর দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি খুব ভালোভাবেই করে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার বিকাশ এবং সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর একটি কার্যকর গবেষণাধর্মী স্মার্ট উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে মনে করেন উপাচার্য ছাদেকুল আরেফিন। এসময় তিনি ক্যান্টিনের খাবারের মান বৃদ্ধি, ক্যাম্পাসের ভিতরে জঙ্গল পরিষ্কার করে ফলজ ও সৌন্দর্যবর্ধন বৃক্ষরোপণ করার বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন। ছাদেকুল আরেফিন বলেন, বায়োগ্যাস প্লান এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় উইন্ডমিলের ব্যবহার নিয়েও আমাদের গবেষণারে পর্যালোচনা চলছে। গবেষণার ফলাফল নিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে এবিষয়ে বিস্তারিত জানাবো।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT