রিমোটে চলছে স্কুলছাত্র তুহিনের লঞ্চ রিমোটে চলছে স্কুলছাত্র তুহিনের লঞ্চ - ajkerparibartan.com
রিমোটে চলছে স্কুলছাত্র তুহিনের লঞ্চ

3:38 pm , February 6, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ অভাব-অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা মো. তুহিন ইসলামের।  পড়াশুনার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই চেষ্টা করে প্রযুক্তি নির্ভর কিছু না কিছু বানাতে। সম্প্রতি তার নিজ হাতে বানানো কর্কসিডের লঞ্চ পানিতে ভাসতে শুরু করেছে। যা নিয়ে ইতোমধ্যে তুহিনের নিজ এলাকা বরিশাল নগরের পলাশপুরের বৌ-বাজারে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে সদ্য সংযুক্ত হওয়া এমভি সুন্দরবন-১৬ এর আদলে তুহিনের বানানো লঞ্চটি চালাতে রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে লঞ্চটিতে থাকা দুটি মোটর চালু রাখতে পাওয়ার হিসেবে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। আর ওই মোটর দুটির সঙ্গে সংযুক্ত করা দুটি পাখাকে (প্রপেলার) ঘুরিয়ে সামনে-পেছনে নিয়ে যায় লঞ্চটিকে। চারতলায় মাস্টার ব্রিজ থাকা এ লঞ্চটিকে বিভিন্ন তলায় বাহারি রংয়ের আলোকবাতি লাগানো হয়েছে। তিন তলার ছাদের সঙ্গে লাগানো হয়েছে ব্লুটুথ স্পিকার। বাস্তবে সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের মতো নিচ তলায় ডেক, সামনে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি, দোতলা-তিনতলায় কেবিন, চারতলার পেছনের অংশে সাইলেন্সারের ধোঁয়া বের হওয়ার জায়গা ও দোতলার সামনে হেড লাইটও রয়েছে।
এ লঞ্চের কারিগর বরিশাল সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওয়েল্ডিং বিভাগের নবম শ্রেণির ছাত্র তুহিন জানান, তার বাবা মনির হোসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মা নাছিমা বেগম গৃহিণী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে মেঝ। তার বড় ভাই তুষার তেমন কিছু করেন না। অভাব-অনটনে তাকে পড়ালেখার পাশাপাশি চাচা মিন্টু হাওলাদারের দোকানে রোজ দুইশ টাকা বেতনে কাজ করতে হয়।
তিনি জানান, আমি প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন সবসময় দেখি। এ জন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাতে কিছু পেলে তা দিয়ে কিছু বানানোর চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে ইলেক্ট্রিক কাজ করে কিছু রোজগারও করি। আবার স্কুলে যাওয়া, পড়ালেখার পাশাপাশি নগরের ফলপট্টি এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিন্টু চাচার দোকানে কাজ করে প্রতিদিন কিছু টাকাও উপার্জন করি। এর মধ্যে বেশিরভাগ টাকা সংসারে দিয়ে কিছু নিজের কাছে রাখি। সেখান থেকে টাকা জমিয়ে কর্কসিড, প্লাস্টিকের পাইপ, কাগজ, মোটর, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক তার, কন্ট্রোলার, প্রপেলার সংগ্রহ করি। টাকা জমিয়ে দুই মাসের চেষ্টায় সুন্দরবন-১৬ এর আদলে লঞ্চটি বানাই। ছয় ফুট লম্বা ও দেড় ফুট প্রশস্তের এ লঞ্চটি পানিতে চালাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত হাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
মূলত সুন্দরবন-১৬ লঞ্চটি যখন বানানো শুরু হয় তখন বেলতলার ডক ইয়ার্ডে প্রায়ই যেতাম। সেখান থেকেই কর্কসিড দিয়ে লঞ্চ বানানোর ইচ্ছে জাগে। গত বছরের ১৬ অক্টোবর আমার এ লঞ্চটি বানাই এবং দুইমাস পর পানিতে ভাসাই। সুন্দরবন-১৬ লঞ্চ যেদিন উদ্বোধন হয় সেদিন আমার হাতে বানানো লঞ্চটি নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। সুন্দরবন লঞ্চের মালিক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু কাকা ও কোম্পানির লোকজনকে বলেছিলাম এটি তাদের উপহার দিতে চাই। মনে হয় আমাকে কিছু দিতে হবে এটা ভেবে তারা অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। সেখানে থেকে অনেক কষ্ট পেয়েই বাসায় আসি। এর কয়েকদিন পর আমার বাবা রাগ করে এটি ঘর থেকে ফেলেও দেন। এতে আমার লঞ্চটির বেশকিছু ক্ষতিও হয়। তবে সেগুলো মেরামতে তেমন আগ্রহ ছিল না কিন্তু মিন্টু চাচার কারণে ও স্থানীয়দের উৎসাহে লঞ্চটি আবারও মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি।
মিন্টু বলেন, আমি সারা বছর ফল বিক্রি করলেও শীতে ভ্যানে করেই পিঠা বিক্রি করছি ফলপট্টি এলাকায়। তুহিন সকালে স্কুলে যায় আর বিকেলে আমার দোকানে বসে, যা উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার চলে। ওর বাবা কিছুই করে না, মাঝে মধ্যে তুহিনের বড় ভাই অটোরিকশা চালায়। শুধু তুহিনেরই পড়ালেখা আর উপার্জনের ইচ্ছে আছে। তবে ও যে এর বাইরে কিছু করতে পারবে তা ভাবিনি।
তিনি বলেন, পলাশপুরে বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতর পানি ওঠে। তুহিন লঞ্চ তৈরির আগে একটি পানির পাম্পও বানিয়েছে তা দিয়ে ঘরে জমে থাকা পানি বের করেছি। এবার একটা লঞ্চ বানিয়েছে। যখন লঞ্চটি আশপাশের পুকুরগুলোতে ভাসায় তখন মানুষের ভীড় হয়। সুযোগ পেলে তুহিন বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে এটা আমার বিশ্বাস।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT