শেবাচিম হাসপাতালে নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীরা মানবিক বিপর্যয়ের কবলে শেবাচিম হাসপাতালে নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীরা মানবিক বিপর্যয়ের কবলে - ajkerparibartan.com
শেবাচিম হাসপাতালে নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীরা মানবিক বিপর্যয়ের কবলে

3:28 pm , January 7, 2023

ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস বন্ধ

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিনাঞ্চলে সরকারী স্বাস্থ্য সেবার সর্ববৃহত প্রতিষ্ঠান, শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় নবনির্মিত একটি ভবনে মেডিসিন বিভাগের ৪টি ইউনিট স্থানান্তরের পরে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাসপাতালের মূল ভবন থেকে মেডিসিন ইউনিটটি নব নির্মিত ভবনে স্থানান্তরের আগেই চিকিৎসক এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্রÑছাত্রী সহ হাসপাতাল কর্মীদের তরফ থেকে আপত্তি জানান হয়েছিল।
কিন্তু কোন কিছু আমলে না নিয়ে ভবনটির নকশা ও নির্মান পরিকল্পনাকে বাদ দিয়ে সেখানে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট স্থানান্তরের ফলে রোগী ও স্বজনদের চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ভবনটির দ্বিতীয় তলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত বেডের চেয়ে মেঝেতেই রোগীর পড়ে আছে বেশী। পুরো ভবনটিতে আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা অপ্রতুল। ফলে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হলে পাঁচতলা ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ড সমুহে অনেকটাই ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শণিবারও দিনভরই এ ভবনে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ থাকায় অনেকটা মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়।
বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা ১ হাজার হলেও শনিবারেও দেড় সহশ্রাধিক রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। কোন কোন দিন রোগীর সংখ্যা ১৮শ অতিক্রম করে বলে কতৃপক্ষ জানিয়েছেন। এরমধ্যে মেডিসিন বিভাগের ৪টি ইউনিটেই পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ৮শ থেকে ১ হাজার রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে।
কিন্তু গত মাসের শেষ দিকে হাসপাতালটির মূল ভবন প্রাঙ্গনের পূর্ব প্রান্তে নব নির্মিত ৫তলা ভবনটিতে মেডিসিন বিভাগের ৪টি ইউনিট স্থানন্তরের পরে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শণিবার সরেজমিনে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত এ হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট ঘুরে চরম অব্যবস্থাই লক্ষ করা গেছে। ভবনটির দোতলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত দূর্গন্ধ আর অন্ধকারে সুস্থ মানুষেরও দমবন্ধ হয়ে আসছিল। ৪টি ইউনিটের অনুমোদিত সবগুলো বেড ঐ ভবনের ২য় তলা থেকে ৫ম তলায় স্থান সংকুলান হয়নি। ফলে বিপুল সংখ্যক মুমূর্ষ রোগীও মেঝেতে পড়ে আছেন।
আবার মেডিসিনের পেয়িং বেড ও পেয়িং কেবিন এখনো মূল ভবনে রয়ে গেছে। ফলে এখানের চিকিৎসকদের রোগীদের দেখভাল করা সহ চিকিৎসা দিতে দুটি ভবনে ছুটতে হচ্ছে। এমনকি এতেকরে মূল ভবনে পেয়িং কেবিন ও পেয়িং বেডে চিকিৎনাধীন মুমূর্ষ রোগীরা অনেক জরুরী সময় যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। নতুন ভবনের মেডিসিন ইউনিটের রোগীদের পথ্য আসছে ৩শ মিটার দুরের মূল ভবনের ৫ম তলা থেকে। ফলে খেলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি আর ধুলোÑবালুর রাস্তায় ট্রলিতে ছোট-বড় হাড়ি চাপিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীদের খাবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিদিন তিন বেলা। পাশাপাশি মেডিসিন ওয়ার্ডে মেডিকেল কলেজের ছাত্রÑছাত্রীদের ক্লাস করার মত কোন কক্ষ না থকায় বিপুল সংখ্যক ছাত্রÑছাত্রীদের শিক্ষা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুদ্ধ ও হতাশ ছাত্র-ছাত্রীরা বিষয়টি কলেজ প্রিন্সিপালকে অবহিত করে অবিলম্বে মেডিসিন ওয়ার্ডে ক্লাস রুমের ব্যবস্থা করারও দাবী জানিয়েছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আইনগত জটিলতায় জড়িয়ে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় গনপূর্ত অধিদপ্তর এ ভবনটি নির্মান করেছে ১০ বছরেরও বেশী সময়ে। আর পুরো ভবনটির নির্মান কাজ যে মানসম্মত হয়নি সে কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতাল কতৃপক্ষও। তবে করোনা মহামারীর শুরুতে তড়িঘরি করে ভবনটির কাজ শেষ করে সেখানেই ‘কোভিড-১৯ওয়ার্ড’ চালু করা হয়েছিল।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০তলা ভবনটির নিচ তলায় বহির্বিভাগ, দোতালাতে প্রশাসনিক ব্লক ও ব্যাংক এবং ৩য় তলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত অপারেশন থিয়েটার স্থাপনের কথা ছিল। সে নকশাতেই ভবনটি নির্মিত হয়েছে। আর ৬ষ্ঠ তলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ওয়ার্ড স্থাপনের কথা। কিন্তু ১০ বছর পরে ৫তলা ভবন নির্মানের পরে মূল পরিকল্পনাকে এড়িয়ে সেখানে মেডিসিন ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিট চালু করায় সু চিকিৎসার নামে চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীর ও মনের নিত্য নতুন সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধরন রোগীও স্বজনদের।
বিষয়টি নিয়ে মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাঃ আনোয়ার হেসেন বাবলু’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে জানান, ‘ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশেই নতুন ভবনে ওয়ার্ড স্থানন্তর করা হয়েছে’। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে তা খুব শিঘ্রই অতিক্রম করা সম্ভব হবে বলে জানান। মূল পরিকল্পনায় ১ম থেকে ৫ তলা পর্যন্ত ওয়ার্ড স্থাপনের কথা ছিলনা বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, হাসপাতালের মূল ভবনে রোগীদের স্থান সংকুলন না হওয়ায় জরুরী ভিত্তিতে নতুন ভবনে মেডিসিন ওয়ার্ড স্থানন্তর করতে হয়েছে। পাশাপাশি খুব শিঘ্রই এ ভবনটির ৬ষ্ঠ ও ৭ম তলার নির্মান কাজ শুরু হবে বলে জানিয়ে পরিচালক বলেন, অদুর ভবিষ্যতে নতুন ভবনটিতে ৫শ রোগীর সু চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT