নগরীর ২ নং ওয়ার্ডে ভোটার তালিকার হালনাগাদ কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ বর্তমান কাউন্সিলর মর্তুজার নগরীর ২ নং ওয়ার্ডে ভোটার তালিকার হালনাগাদ কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ বর্তমান কাউন্সিলর মর্তুজার - ajkerparibartan.com
নগরীর ২ নং ওয়ার্ডে ভোটার তালিকার হালনাগাদ কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ বর্তমান কাউন্সিলর মর্তুজার

3:23 pm , December 14, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরী ২ নং ওয়ার্ডে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন বর্তমান কাউন্সিলর একেএম মর্তুজা আবেদীন। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি, এমনকি কোনো তদন্তও করা হয়নি বলে জানান ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মুরতজা আবেদীন। তার অভিযোগ নিয়ম বহির্ভূত ও অবৈধভাবে কয়েকশ ভোটার করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোটার তথ্য সংগ্রহকারিরা বাড়ি বাড়ি না গিয়ে সম্ভাব্য এক কাউন্সিলর প্রার্থীর অফিসে বসে ভোটার তথ্য হালনাগাদ করার তথ্য রয়েছে। কাউন্সিলর মুরতজা আবেদীন জানান, ওয়ার্ডে ভোটার তালিকা হালনাগাদের ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম হয়েছে। সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এই বিষয়টি  নিয়ে কোনো তদন্ত হয়নি। সবশেষ ৭ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৯৫ সাল থেকে ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তিনি। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে উল্লেখ আছে যে, গত ২২ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। নতুন ভোটার হতে হলে অনলাইন জন্মসনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি, বাড়ি ভাড়ার রশিদ, কাউন্সিলর কতৃক নাগরিক সনদ পত্র, পিতা / মাতা বা স্বামী/স্ত্রীর আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন। কিন্তু এই ওয়ার্ডের নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে এই সব কাগজপত্র যথাযথভাবে সংগ্রহ করা হয়নি। তথ্য সংগ্রহকারীদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ নিজ বাসা ও নির্দিষ্ট স্থানে বসে একাধিক নতুন ভোটার হালনাগাদ করেছেন মর্মে যথাযথ তথ্য প্রমাণ রয়েছে। তথ্য সংগ্রহকারিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে মর্মে একাধিক অভিভাবকের কাছ থেকে প্রত্যয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। তথ্য সংগ্রহকারিরা তাদের ত্রুটি ঢাকার জন্য এই প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।  কাউন্সিলর মুর্তজা বলেন, নির্বাচন কমিশনে একাধিকবার দেওয়া অভিযোগ সম্পর্কে কোনো তদন্ত কর্মকর্তা অদ্যবধি যোগাযোগ করেনি। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটারদের যাচাইকারি হিসেবে ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর/সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দী কাউন্সিলর প্রার্থীরাই দায়িত্ব পালন করবেন। অথচ আমি নিজে ও প্রতিদ্বন্দী কাউন্সিলর প্রার্থী এলাকায় থাকা সত্বেও যাচাইকারি হিসেবে সংরক্ষিত কাউন্সিলরের সচিব ও অফিস সহায়ককে দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো হয়েছে। যাচাইকারি ওয়ার্ড সচিবকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে এই ওয়ার্ডের হালনাগাদ নতুন ভোটারদের কাউকে চেনেন না বলে স্বীকার করেছেন। অন্য ওয়ার্ডে বসবাসরতদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার করা হয়েছে।  তিনি বলেন, অবৈধভাবে ভোটার করার বিষয়ে আমার কাছে পর্যাপ্ত প্রমানাদি রয়েছে। যাদের অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন হয়নি এবং ভোটার হওয়ার বয়স হয়নি তাদেরকেও ভোটার করা হয়েছে এবারের হালনাগাদে। যাদের কোনো বসবাস ২ নম্বর ওয়ার্ডে নেই, কেউ চেনে না তাদেরকেও ভোটার করা হয়েছে। ভোটার করতে কাউন্সিলরের প্রত্যয়ন বা নাগরিক সনদ পত্রের প্রয়োজন হলেও কোনো কিছুই দরকার হয়নি ভোটার তথ্য সংগ্রহকারীদের। তারা নির্দিষ্ট একটি স্থানে বসে এগুলো করেছে। আমার কাছে কিছু তথ্য প্রমান রয়েছে। যেমন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিব্য দাস, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উম্মে তালহা সুবহা ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের শফিকুল ইসলাম, রাব্বি সরদার সহ অসংখ্য মানুষকে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার করা হয়েছে নানা ঠিকানা দেখিয়ে। অথচ যে সব ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে সেই এলাকার মানুষই তাদের চেনে না। অপরদিকে সমস্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাদ পড়া নতুন ভোটারদের স্থানীয় জিলা স্কুলে নতুন ভোটার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলেও সেখানে যাচাইকারী হিসেবে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কাউন্সিলর বলেন, এবারে আমার ওয়ার্ডে যে নতুন ভোটার করা হয়েছে। এর এদের মধ্যে অর্ধেককেই অবৈধ পন্থায় ভোটার করা হয়েছে। এদের মধ্যে কারো অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন নেই আবার কেউ এই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা নয়। আমি সব মিলিয়ে নতুন ৩ থেকে ৫ জন নতুন ভোটারকে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছিলাম। বাকিগুলো কিভাবে তারা হয়েছে বা তাদের কিভাবে যাচাই করেছে তথ্য সংগ্রহকারিরা তা জানিনা। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সচিব তো যাচাই করতে পারে না। সে ও অফিস সহায়ক কিভাবে যাচাইকারী হয় বুঝিনা।  ২ নং ওয়ার্ডে নতুন ভোটার যাচাইকারী ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সচিব মোঃ রাব্বি বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী আমি নতুন ভোটার যাচাইকারী হতে পারি। ৫ নম্বর সংরক্ষিত আসনে যখন ছিলাম তখনও নতুন ভোটার যাচাইকারী হিসেবে ছিলাম। তাছাড়া যাচাইয়ের সময় সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর এক ঘন্টার মত উপস্থিত ছিলেন। পরে অসুস্থ হয়ে পরায় সে চলে যায়। এছাড়া নতুন ভোটার যাচাইয়ের বিষয়টি সাধারণ কাউন্সিলরকে জানানো হয়েছিলো, তিনি আসেননি। এখন তিনি না আসলে কি নতুন ভোটার হবে না ? ভোটার তালিকা হালনাগাদে অনিয়মের বিষয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহকারি মানিক মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবুল বাসার বলেন, কারো অফিসে বসে আমরা তথ্য সংগ্রহ করিনি। নতুন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সব কিছু যাচাই বাছাই করেছি। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহেব সন্দেহবশত এসব অভিযোগ করছেন। নির্বাচন কর্মকর্তারাও বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন। তথ্য সংগ্রহকারি কাশিপুর গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজ সিনিয়র সহকারি শিক্ষক শায়লা পারভীন বলে, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নেই। আমার বাসায় বসে তথ্য সংগ্রহের কোনো কাজ করা হয়নি। আমি কয়েকটি বাসায় গিয়ে লোকজন পাইনি। পরে কাউন্সিলর মুরতজা ভাই আমাকে ফোন করে তার অফিসে গিয়ে যাদের বাসায় গিয়ে লোক পাইনি তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে বলেন। এই বিষয়টিতে আমি রাজি না হওয়ায়, তার অফিসে গিয়ে কাজ না করায় তিনি সন্দেহ করছেন আমরা অন্য কোনো প্রার্থীর হয়ে কাজ করছি। যেটা লিগ্যাল সেটাই করেছি আমরা। আমরা ৫ জন এই ওয়ার্ডে তথ্য সংগ্রহ করেছি। তাছাড়া বর্তমান কাউন্সিলর আমাকে রাস্তায় দেখলে এখন হুমকিও দেয়। ২ নম্বর ওয়ার্ডে তথ্য সংগ্রহকারিদের সুপারভাইজার শহিদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রদর্শক আনোয়ার হোসেন খান বলেন, আমার সাথে রইজ আহম্মেদ মান্না শুধুই নয়, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি সহ কাউন্সিলরের সাথেও কথা হয়েছে। তবে মান্না সাহেবের সাথে কোনো মিটিং হয়নি। আমরা ডোর টু ডোর গিয়ে সব কিছু যাচাই বাছাই করেছি। এই ওয়ার্ডে এবার ৯৬২ জনকে নিবন্ধিত করা হয়েছে, যার মধ্যে সামনের সিটি নির্বাচনে ২০০ থেকে ২৫০ বা ততোধিক ব্যক্তি ভোট দিতে পারবেন। আর এই নিবন্ধিত ৯৬২ জনই নতুন।  এই বিষয়ে বরিশাল সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, অভিযোগের পর বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া ১৫ জানুয়ারী ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। সে সময় ওই কাউন্সিলরের যদি কেনো অভিযোগ থাকে তাহলে সে নির্বাচন কমিশনকে আবেদন করতে পারবে। সেই আবেদন পর্যালোচনা করে  নির্বাচন কমিশন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT