একজন মাইনুল হাসান রয়েছেন সকলের চোখের মনি কোঠায় একজন মাইনুল হাসান রয়েছেন সকলের চোখের মনি কোঠায় - ajkerparibartan.com
একজন মাইনুল হাসান রয়েছেন সকলের চোখের মনি কোঠায়

3:41 pm , October 1, 2022

শাকিল মাহমুদ বাচ্চু, উজিরপুর ॥  আমাদের মাইনুল হাসান নেই আজ ১৮টি বছর।  তবে আপনার দেখিয়ে যাওয়া নীতি ও আদর্শ  আমাদের মাঝে থাকবে সারাটা জীবন। আজ ২ অক্টোবর দখিনের সাংবাদিকতার প্রান পুরুষ মাইনুল হাসানের ১৮তম মৃত্যুবাষিকী। তার মৃত্যুতে বরিশাল তথা দখিনের মফস্বল সাংবাদিকরা একজন অভিভাবক হারিয়ে এখন শূন্যতায় ভুগছেন। বরিশাল সাংবাদিকতার বাতিঘর মাইনুল হাসান ইত্তেফাক পত্রিকার বরিশাল অফিসের স্টাফ রিপোটার হিসাবে কর্মরত থাকলেও বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলার কর্মরত সাংবাদকর্মীদের একজন বটগাছ হিসাবে ছায়া দিয়ে গেছেন তার মূত্যু’র আগের দিন পর্যন্ত। প্রায় ২ যুগ ধরে সাংবাদিকতায় সকলের চোখের মনি কোঠায় ছিলেন তিনি। ¯্রােতের বিপরীতে কলম ধরার নামই তো সাংবাদিতা তা বরিশালের মানুষকে দেখিয়েছেন মাইনুল হাসান। সে কারনে দখিনের সাংবাদিকরা তার নীতি ও আর্দশ বুকে ধারন করে সাংবাদিকতা করতে চায়। দিনরাত একাকার করে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাই ছিলো মাইনুল হাসানের আসল রুপ। খবর বের করে আনতে তিনি ছিলেন এক অদম্য সাহসী যোদ্ধা।  আমার চেখে দেখা সাংবাদিকতায় সর্বকালের সেরা ব্যক্তিটি হলেন প্রায়ত সাংবাদিক মাইনুল হাসান। চির জাগরণ হয়ে থাকবেন মফস্বল সাংবাদিকদের গুরুজন মাইনুল হাসান। একজন সংবাদকর্মী বিপদে পড়লে (হামলা- মামলা) শিকার হলে তিনি সবার আগে তার পাশে দাঁড়িয়ে সংবাদকর্মীকে উদ্ধার করতেন নিজ সন্তানের মতো করে। তিনি ছিলেন এক সাহসী যোদ্ধা। রাগব বোয়ালদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে কিভাবে সাংবাদিকতা করতে হয় তা তিনি দেখিয়ে গেছেন তৃনমূলের সংবাদকর্মীদের। তার ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগের শতশত সংবাদকর্মীরা। বিশেষ করে আমিও মাইনুল হাসানের ¯েœহ ভালবাসা পেয়েছি, যখনই হামলা মামলার শিকার হয়েছি  মাইনুল হাসান পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করেছেন। ভারত থেকে কিডনি রোগের  চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে মাইনুল ভাই  অসুস্থ অবস্থায়  পায়ে হেটে আমাকে নিয়ে আমার  একটি মামলার বিষয় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা’র কাছে গিয়ে বলেছেন আমার (বাচ্চু) নিরাপরাধ, তাকে যেন অহেতুক হয়রানী  না করা হয়। আমি যখন উজিরপুরে সাংবাদিকতা শুরু করি সেই সময়টা ছিলো সাংবাদিকতার চরম দু:সময়। ৯০ দশকের কথা  একদিকে তথ্য প্রযুক্তি’র সমস্যা  অন্যদিকে বরিশালের উজিরপুর ছিলো সর্বহারাদের আধিপত্য তখন মাইনুল ভাই আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। টেলিফোনে তাকে নিউজ দিতাম, পরদিন পত্রিকায় নিউজ ছাপা হওয়ার পর ফোন দিয়ে মাইনুল হাসান বলতো তোমার সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তার ভালবাসায়  আমার সাংবাদিকতার পথচলা শুরু হয়। সংবাদ সংক্রান্ত কাজে মাইনুল হাসান উজিরপুরে একাধিক বার পা দিয়েছেন। তার সাথে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহে মজাই ছিলো আলাদা। মাইনুল হাসান হাসি ঠাট্টা করে জুনিয়র সহকর্মীদের সাথে অল্পতেই নিজেকে বিলীন করে দিতেন। তার সাথে একাধিক সফর সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। দুর্বৃত্তদের গুলিতে জল্লার ইউপি চেয়ারম্যান অবনী বাড়ৈ নিহত হবার পর উজিরপুরের প্রত্যন্ত কুড়ালিয়া গ্রামে গিয়ে আমি ছবি তুলেছি। হঠাৎ বরিশাল শহরের সাংবাদিকদের টিম হাজির হলে মাইনুল হাসান , শওকত মিল্টন,পুলক চ্যটার্জী, আকতার ফারুক শাহিন, গোপাল সরকার ছিলো ওই টিমে। একটি গাড়ী নিয়ে কোন মতে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করে ফেরার পথে মাইনুল হাসান আমাকে বললেন বাচ্চু তুমি কিভাবে যাবে ? আমাদের গাড়ীতে উঠো, আমি  অনেক  সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে গাড়ীতে উঠতে সাহস পাচ্ছিলাম না। তখন মাইনুল হাসান ধমক দিয়ে বললেন কি ভয় পাও ? তাড়াতারি গাড়ীতে উঠো। গাড়ীতে ওঠার পর  আস্তে আস্তে গাড়ী’র চাকা ঘুরতেই মাইনুল ভাই’র হাসি ঠাট্টায় সাথে শওকত মিল্টনের দিকনির্দেশনা কথায় আমাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি যেন এক আড্ডা ঘরে রুপান্তরিত হয়। ধামুরা বাজারে একটি ভাতের হোটেলে দুপুরের খাবার শেষে সকল সংবাদকর্মীদের খাবার বিলটা মাইনুল হাসান পরিশোধ করে বলেন, তোমরা আমার সন্তানের মতো আমি থাকতে তোমরা বিল দিবা এটা কেমন কথা। সর্বশেষ একটি নিউজের তথ্য সংগ্রহে’র কাজে মাইনুল হাসান উজিরপুরের ওটরায় এসে  ওসি’র বক্তব্য নিতে থানায় যাওয়ার পথে মোটবাইক নিয়ে পরে গিয়ে আহতও  হয়েছিলেন । ওই সময় তার সাথে আমি ছিলাম। নানা সময়ের স্মৃতি রয়েছে তার সাথে। তাকে নিয়ে আমার নানা স্মৃতি রয়েছে তা লিখে শেষ করা যাবে না । সাংবাদিকতার বাতিঘর মাইনুল হাসানের আর্দশ নিয়ে পথ চলতে পারলে একজন পথিকৃৎ সংবাদকর্মী হওয়া সম্ভব। একজন মাইনুল হাসান সংবাদকর্মীদের সাহস যুগিয়েছেন স্বচ্ছ সাংবাদিকতার। মফস্বলে বিনা বেতনে সাংবাদিকতা করা সংবাদকর্মীদের সাংবাদিকতার পাশাপাশি অন্য পেশায় মনোযোগী হতে উৎসাহী করতেন তিনি। এ প্রজন্মের নতুন সাংবাদিকতায় তার অভাব অপূরনীয়।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT