হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির চারটি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির চারটি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি - ajkerparibartan.com
হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির চারটি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি

3:57 pm , September 4, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম হওয়ার পরও সেই প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অফিস সহকারি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অযোগ্য অপর এক প্রার্থীকে। আবার পরিকল্পিতভাবে অনুত্তীর্ণ ঘোষনা করা হয়েছে অনেক প্রার্থীকে। বরিশাল সদর উপজেলাধীন হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় চতুর্থ শ্রেণির চারটি পদে চারজন কর্মচারী নিয়োগে এমন ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে গত সোমবার (২৯ আগষ্ট) মোঃ জহিরুল ইসলাম নামে এক প্রার্থী বাদী হয়ে বরিশাল সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩৫৭/২০২২। একই অভিযোগ এনে ২৩ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আরো একটি লিখিত অভিযোগ করেন অপর এক প্রার্থী শিপু রানী। ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীদের দাবি, মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অকৃতকার্যদের। তাই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা। জানা যায়, চলতি বছরের ১৫ জুন বিদ্যালয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির চারটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক, নৈশ প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া পদে গত মাসের ১২ আগষ্ট নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই একই দিনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষনা করার কথা থাকলেও ফলাফল প্রকাশ করা হয় পরেরদিন হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে। তবে ফলাফল প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ তোলেন একাধিক প্রার্থী। তারা জানায়, পরেরদিন ফলাফল প্রকাশের বিষয়টি ছিল ফলাফল পাল্টে দেয়ার অপকৌশল। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রভাবশালী সভাপতি, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আবু জাফর ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোটা অংকের বিনিময়ে তাদের নির্ধারিত চারজন প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করাতে সফল হয়েছেন। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এ বিষয়ে মামলার বাদী মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর মধ্যে আমি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করিয়া নির্বাচিত হই। নিয়োগ বোর্ডের সদস্যগণ আমাকে ১ম স্থান দেখাইয়া ফলাফল সীট প্রস্তুত করেন। তখন নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের নিকট ফলাফল সীটের কপি চাইলে তাহারা গড়িমশি করতে থাকেন এবং পরেরদিন ফলাফল প্রকাশের পর সীট দেয়া হবে বলে জানায়। কিন্তু পরেরদিন ফলাফল প্রকাশের সীটে দেখি আমার স্থানে মাকসুদুর রহমান নামে অপর এক প্রার্থী প্রথম হয়েছেন। পরে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিকট অফিস সহায়ক পদে মাকসুদুর রহমানের বে-আইনী ও অবৈধ নিয়োগ বাতিলক্রমে আমাকে উক্ত পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তারা মাকসুদুর রহমানের নিয়োগের বিষয়টি বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করলে আমি মামলা করতে বাধ্য হই। তিনি বলেন, প্রার্থী মাকসুদুর রহমান সহ বাকী তিন জনই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুগত লোক। প্রায় পনের লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম আরো বলেন, বিজ্ঞ আদালত কৃর্তক স্কুলের নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় দলিল দস্তাবেজ তলব করা হলে আমার ১ম স্থান হবার বিষয়টি শতভাগ প্রমাণিত হবে বলে বিশ্বাস করি। এছাড়া আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারি অপর এক প্রার্থী শিপু রানী বলেন, আমার পরীক্ষা খুবই ভাল হয়েছে তারপরও ফলাফলে আমাকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। তাছাড়া একই দিনে ফলাফল প্রকাশ না করে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যদের নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, স্কুলের চারটি পদে নিয়োগে বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতির জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহিন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আবু জাফর ও প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম দায়ী। তাছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনঃ নিরীক্ষা সহ অন্যান্য দুর্নীতি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গত মাসের ২৩ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরুজ্জামান বলেন, আমি বেশ কয়েকদিন ছুটিতে ছিলাম। গতকাল কাজে যোগ দিয়েছি তবে অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে খতিয়ে দেখা হবে। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল পরেরদিন প্রকাশের বিষয়টি জানতে চাইলে হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ বোর্ডের দায়িত্বে থাকা বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার কথা অনুযায়ী পরের দিন ফলাফল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী একদিন পর ফলাফল ঘোষণা করার কোন সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি পুনরায় প্রধান শিক্ষিকার সিদ্ধান্তের কথা বলেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাহবুবা রহমান বলেন, আমি পরেরদিন ফলাফল ঘোষনা দেবার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেইনি। ফলাফল ঘোষনা দেয়ার দায়িত্ব ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির। তার সিদ্ধান্তেই পরেরদিন ফলাফল ঘোষনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে হোগলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহিন বলেন, সেদিন শুক্রবার জুম্মার নামাযের সময় হওয়ায় প্রার্থীরা অনেকেই চলে যাওয়ায় নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পরেরদিন ফলাফল ঘোষনা করা হয়েছে। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, নোটিশ বোর্ডে এখনও নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি নিয়ে গড়মিল করা হয়েছে। লাখ লাখ টাকার বানিজ্য হয়েছে। অপরদিকে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আঃ রব ভাইবা বোর্ডের সদস্য না হওয়া সত্বেও বরিশাল সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরিক্ষা চলাকালীন সময় উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, নিয়োগ পরিক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে একজন তার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। অভিযোগকারীরা বলেন, নিয়োগবোর্ডের সদস্য না হলেও শুক্রবার নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রে তার ঢোকার কোন সুযোগ নেই। তার প্রার্থীর নাম চুড়ান্ত করতেই বে-আইনিভাবে নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্যদের সাথে আতাত করে কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। যা বিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে নিশ্চত হওয়া যাবে। এদিকে ভুক্তভোগীরা বলেন, আমাদের চাকরি না দিয়ে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাদের নির্ধারিত সদস্যদের চাকরি দিয়েছেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে এ নিয়োগ বন্ধের দাবী জানিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT