ধর্ষনের মামলা থেকে বাঁচতে এবার ধর্ষিতা তরুণীর মা-খালা-মামার বিরুদ্ধে মামলা ধর্ষনের মামলা থেকে বাঁচতে এবার ধর্ষিতা তরুণীর মা-খালা-মামার বিরুদ্ধে মামলা - ajkerparibartan.com
ধর্ষনের মামলা থেকে বাঁচতে এবার ধর্ষিতা তরুণীর মা-খালা-মামার বিরুদ্ধে মামলা

3:55 pm , August 29, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ধর্ষনে অন্ত:সত্ত্বা তরুনীর মা, মামা ও খালাকে আসামী করে আদালতে নালিশী অভিযোগ করেছে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে পালানোর চেষ্টাকারী পুলিশ কনষ্টেবলের ভাই। রোববার বরিশালের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করা হয়েছে বলে আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল তালুকদার জানিয়েছেন। তিনি জানান, অতিরিক্ত মুখ্য হাকিম মো. মাসুম বিল্লাহ নালিশী অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
নালিশী অভিযোগে ১নং বিবাদী করা হয়েছে ধর্ষণে অন্ত:সত্ত্বা তরুনীর মামা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক হাফিজুর রহমানকে। এছাড়াও তরুনীর মা রুবাইয়া আক্তার রুবী ২ নং এবং খালা নাইমা আক্তারকে ৩ নং বিবাদী করা হয়েছে।
মামলার বাদী হয়েছেন বরিশাল জেলা পুলিশের কনষ্টেবল পদে চাকুরীরত কাওসার আহম্মেদের ভাই মো. ফেরদাউস হোসেন বাবু। সে বরগুনা সদর উপজেলার আমরাঝুড়ি এলাকার বাসীন্দা আলম সিকদারের ছেলে।
নালিশী অভিযোগের বরাতে এ্যাড. ইব্রাহিম খলিল তালুকদার জানান, তার ছোট ভাই কনষ্টেবল কাওসার হোসেনকে গত ২৫ আগষ্ট তরুনীর মা ফোন করে বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে পূর্ব থেকে থাকা তরুনীর মামা এএসআই নিজেকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে ৩ নং বিবাদীসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনসহ কনষ্টেবলের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চোখ বেধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে তাকে নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকায় নিয়ে তাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে হ্যান্ডকাপ পরিহিত অবস্থায় হত্যার উদ্দেশ্যে কীর্তনখোলা নদীতে ফেলে দেয়। এছাড়াও ধর্ষণে অন্ত:সত্ত্বা তরুনী বিয়ে না করলে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তখন কাওসার স্থানীয় মানুষের কাছে সহায়তা চায়। স্থানীয়রা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের সহায়তায় কাওসারকে উদ্ধার করে বলে নালিশী অভিযোগে উল্লেখ করেছে বাদী।
তরুনীর মা অভিযোগ করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পর নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে।  মামলা তুলে না নিয়ে বিষয়টি মীমাংশা করার জন্য পুলিশ কনষ্টেবলের বাবা-ভাইসহ স্বজনরা চাপ দিচ্ছে। তাদের প্রস্তাব মেনে না নিলে আরো ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছে কনষ্টেবলের বাবা ও ভাইসহ স্বজনরা। অপরদিকে তরুনীর করা মামলার আসামী কনষ্টেবল কাওসার আহম্মেদ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিস্ক (২) ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। সুস্থ থাকার পরেও তাকে হাসপাতালে রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তরুনীর মা।
তরুনীর মা বলেন, কনষ্টেবল কাওসারের ধর্ষণে ৫ মাসের অন্ত:সত্ত্বা কন্যা বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রয়েছেন। তাই তিনি হাসপাতালে থাকেন। শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে কনষ্টেবল কাওসারের বাবা আলম সিকদার, ভাই বাবুসহ স্বজনরা তাকে একা পেয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে কন্যাকে বিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হলে নানা ধরনের হয়রানি করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন।
থানায় মামলা দায়ের করার পর থেকে আমাকে ও আমার পরিবারকে কনষ্টেবল কাওসারের পক্ষে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে আমি ও আমার পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী মো. ফেরদাউস হোসেন বাবু বলেন, ঘটনা নিয়ে হাসপাতালের কেন্টিনে তরুনীর মায়ের সাথে তিনি, তার বাবা, ইউপি সদস্য দুই চাচা কথা বলেছেন। বিষয়টি কিভাবে সমাধান করা যায়, সেই বিষয়ে কথা হয়েছে। এখানে হুমকি দেয়া হয়নি।
কনষ্টেবল হাসপাতালে ভর্তি থাকার বিষয়ে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ইউনিটের সহকারী রেজিষ্টার মো. শাহাদাত হোসেন জুয়েল বলেন, কনষ্টেবল কাওসার আহম্মেদ বলেছেন ‘তার হাত ও পায়ে ব্যাথা। তাই এক্সরে করতে দেয়া হয়েছে। এক্সরে রিপোর্ট পেলে তার বিষয়ে সিদ্বান্ত নেয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকা থেকে কীর্তনখোলা নদীতে ঝাপ দেয়া পুলিশ কনষ্টেবলকে উদ্ধার করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের একটি দল।
ওই ঘটনার পর কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম জানিয়েছিলেন, নগরীর দক্ষিন আলেকান্দা এলাকায় স্ত্রী সন্তানসহ ভাড়া বাসায় থাকতো জেলা পুলিশের কনষ্টেবল কাওসার। ভাড়া বাসার মালিকের কন্যার (১৯) সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে। এতে তরুনী অন্ত:সত্ত্বা হয়। বিষয়টি প্রকাশ হলে কাওসার আত্মগোপনে থাকে। গত বৃহস্পতিবার ত্রিশ গোডাউন এলাকায় কাওছারকে খুঁজে পায় মেয়ে, তার মা ও খালা। তাদের সাথে কাওছারের কথপোকথনের এক পর্যায়ে ৯৯৯-এ কল দেন। তখন পালানোর চেষ্টায় নদীতে ঝাঁপ দেন কাওছার।
পরে কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে ট্রলার নিয়ে মাঝ নদী থেকে কাওছারকে উদ্ধার করে।
তরুনী নিজে বাদী হয়ে নারী ধর্ষনের অভিযোগে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা করেছে। মামলায় একমাত্র কাওসারকে আসামী করা হয়েছে। মামলার আসামী হিসেবে কাওসারকে আদালতে পাঠানো হয়।
তরুনীর করা মামলার আইনজীবী সাইম উল আলম রিপন জানান, আদালতে নিজেকে অসুস্থ জানিয়ে হাসপাতালে ভর্তির আবেদন করে। আদালত তাকে পুলিশ প্রহরায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT