মুক্তিযোদ্ধা পার্ক হতে পারে পর্যটন আয়ের উৎস মুক্তিযোদ্ধা পার্ক হতে পারে পর্যটন আয়ের উৎস - ajkerparibartan.com
মুক্তিযোদ্ধা পার্ক হতে পারে পর্যটন আয়ের উৎস

3:28 pm , August 7, 2022

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নগরীর কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে গড়ে তোলা মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি হতে পারে পর্যটন আয়ের উৎস। প্রয়োজন প্রশাসনের সচেতন উদ্যোগ। আর ভ্রমণকারী ও বরিশালের সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের দাবী, এখানে নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক বলয় তৈরি করা হোক প্রশাসন থেকেই। যদিও প্রশাসন বলছে উম্মুক্ত সাহিত্য সাংস্কৃতিক আয়োজন করতে হলে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হবে সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দকে।
সরেজমিনে রবিবার দুপুরে ডিসিঘাট এলাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পার্কের ভিতর প্রবেশ করতে গেলে প্রথমেই চোখে পড়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ ডিসি ঘাট থেকে মুক্তিযোদ্ধা পার্কের প্রবেশদ্বারপর্যন্ত গড়ে উঠেছে অনেকগুলো অবৈধ দোকানপাট। পাশেই বিশাল বস্তি এলাকার ছেলেমেয়েদের ছুটোছুটি, কাপড় শুকানোসহ বস্তিবাসী মহিলা- পুরুষের আড্ডার চিত্র এই এলাকার পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একটু হেঁটে পার্কে প্রবেশ করতে গেলেই বাধা খাদ্য গুদামের মালমাল উঠানামা করানো শ্রমিকদের কারনে। তাদের টপকে পার্কের ভিতর প্রবেশ করে চোখে পড়ে স্কুল কলেজ পড়ুয়া কিশোর কিশোরীদের আড্ডা। আছেন লঞ্চের যাত্রীরাও। বয়স্ক কর্মহীন মানুষ। ছাগল ভেড়া, রাজাহাঁস সবই আছে এখানে। শুধু নেই নিরাপত্তার কোনো সু ব্যবস্থা। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ পার্কটি বরিশালবাসী শুধু নয়, দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের অন্যতম একটি আকর্ষণ।
২০১১ সালের ২৬ মার্চ এই পার্কটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রায়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন। তবে এর কাজ শুরু হয় ২০১০ সালেই। নদীর তীরে মেরিন ওয়ার্কশপ এলাকায় সম্পূর্ণ পরিপাটি করে সাজানো গোছানো এ মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি প্রাথমিকভাবে নির্মান করতে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে পার্কটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকে মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি নগরবাসী তথা প্রকৃতিপ্রেমীদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু মানুষ সবসময় আছেন। পার্কের বেঞ্চে শুয়ে, বসে অবসর কাটান তারা। তবে নিরাপত্তা নেই, নেই প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয়ার কোনো ব্যবস্থা এ অভিযোগ প্রায় সকলেরই।
পার্কে ঘুরতে আসা কলেজ পড়ুয়া সোহানার অভিযোগ, এখানে বখাটেরা এসে তাদের বিরক্ত করে। তাছাড়া একটি পাবলিক টয়লেট থাকলে খুব ভালো হতো। জরুরী প্রয়োজনে মেয়েদের খুব সমস্যা হয় বলে জানান তিনি।
আর বয়োবৃদ্ধ ব্যবসায়ী খান মোহাম্মদ বলেন, সন্ধ্যার পর পার্ক এলাকায় আসা যায় না। কোনো আলোর ব্যবস্থা থাকে না। অন্ধকারের মধ্যে আজে বাজে আড্ডা দেখা যায়। এটা সন্ধ্যার পর অন্যজগত হয়ে যায়। অথচ এই পার্কটি শহরের প্রাণ। বস্তিগুলো সরিয়ে দিলে এটিকে আরো দীর্ঘ করা যায় এবং সোজা ত্রিশ গোডাউন হয়ে কীর্তনখোলার আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ব্রীজে যাওয়া যেত।
বীর প্রতীক খ্যাত মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে দীর্ঘ ৪০ বছর আমাদের দাবি ছিলো এ মুক্তিযোদ্ধা পার্ক নির্মানের জন্য। প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের প্রচেষ্টায় নির্মিত এই পার্কটি জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে উদ্বোধন হয়েছে। তাই এটির মর্যাদা অনন্য। বরিশাল অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তি ও সাধারণ জনগনের কাছে মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি বিনোদনে নতুন মাত্রা হিসেবে যোগ হয়েছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংশ্লিষ্ট কিছু ভাস্কর্য বা জাদুঘর থাকা জরুরী। একটি মুক্তমঞ্চ এবং কয়েকটি ছাতা তৈরি করার কথা ছিলো। কথা ছিলো সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা ছিলো। এটি সংরক্ষণ ও ভ্রমণকারীদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্ব। অথচ ইদানিং প্রায়ই অভিযোগ শুনছি পার্কে এটা ওটা দূর্ঘটনা ঘটছে।
মানিক আরো বলেন, অনেকদিন পার্কটিতে যাওয়া হয়নি। তবে ১২ আগস্ট বাংলা সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত সাহিত্য আড্ডায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে যাবো ইনশাআল্লাহ। তখন দেখবো ওটির কি অবস্থা?
আর নদী তীরবর্তী এই এলাকায় মাদকের অভয়ারণ্য বলে দাবী বরিশালের সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশের। তিনি বলেন, এখানে একটি মুক্তমঞ্চ ও বিদ্যুৎ পানি সুবিধাসহ একটি পাবলিক টয়লেটও রাখতে হবে। পাবলিক টয়লেট এখন আয়ের উৎস। আর উম্মুক্ত সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চায় বাঁধা দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে কখনোই অনুমতির প্রয়োজন হয়না। বরিশাল সিটি করপোরেশন এজন্য অনুমতি দাবি করে বলেই নদী পার কেন্দ্রিক সাহিত্য আড্ডা কমে গেছে বরিশালে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল, কাজল ঘোষ, কবি দীপঙ্কর চক্রবর্তী প্রমুখের সাথে কথা বলে জানা যায়, নগরীর কোলাহল থেকে একটু স্বস্তি পেতে এবং খোলা আকাশের নিচে কীর্তনখোলা নদীর মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিতে নগরীর অনেকেই ছুটে আসেন এই পার্কে। স্ব-পরিবারে কিংবা একা প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় বাড়ে মুক্তিযোদ্ধা পার্কে। পাশাপাশি এখানে সাহিত্য সাংস্কৃতিক আয়োজন হলে দর্শক আরো বিনোদন পাবেন। তবে সন্ধ্যার পর পার্কে ঘোরার পরিবেশ থাকে না বলে জানান তারা। সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের দাবি এখানে একটি অত্যাধুনিক মুক্তমঞ্চ তৈরির। সেটি নদীর উপর ঝুলন্ত হতে পারে। তবে তার আগেও প্রয়োজন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, পার্কটির আধুনিকায়নের চিন্তা মেয়র মহোদয়ের রয়েছে। শুনেছি আগামী ১২ আগস্ট বিকেল তিনটায় বাংলা সাহিত্য পরিষদ ও বরিশাল সাহিত্য সংসদ এই পার্কে সাহিত্য আড্ডা করবে। ওখানে কবিতা, গল্প নিয়ে আড্ডার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করবেন বীরপ্রতীক মহিউদ্দিন মানিক। এটা একটি ভালো উদ্যোগ। মেয়র মহোদয়ও এ জাতীয় উদ্যোগের পক্ষে। তবে সিটি করপোরেশন এলাকার এ জাতীয় আয়োজন যে কোনো সাহিত্য আড্ডার আয়োজনের জন্য লিখিতভাবে সিটি কর্পোরেশনকে জানাতে হবে বলে জানান স্বপন কুমার দাস।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT