পদ্মা সেতু চালু হলেও ৬ লেনের ফরিদপুর-ভাংগা-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা মহাসড়ক এখনো সুদুর পরাহত! পদ্মা সেতু চালু হলেও ৬ লেনের ফরিদপুর-ভাংগা-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা মহাসড়ক এখনো সুদুর পরাহত! - ajkerparibartan.com
পদ্মা সেতু চালু হলেও ৬ লেনের ফরিদপুর-ভাংগা-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা মহাসড়ক এখনো সুদুর পরাহত!

3:46 pm , May 25, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ আগামী মাসেই দেশের সর্ববৃহত উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ শেষে যান চলাচলে জন্য খুলে দেয়া হবে। এ সেতুর সাথে সংযুক্ত পায়রা বন্দর সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার জাতীয় মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি এখনো চরম অনিশ্চয়তার কবলে। ফলে পদ্মা সেতুর সুফল পেতে দক্ষিণাঞ্চলবাসী হয়তো আরো বহু বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে ইতিহাসের সর্বাধিক ব্যয়বহুল ৩১ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ও সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকাÑমাওয়াÑভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মিত হলেও ভাংগা-বরিশালÑপায়রা-কুয়াকাটা এবং ভাংগাÑফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করণ প্রকল্পটির ‘উন্নয়ন প্রকল্প সারপত্র-ডিপিপি’ পর্যন্ত তৈরী হয়নি।
অথচ ফরিদপুর থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২১১ কিলোমিটার বিদ্যমান মহাসড়কের দুই পাশে আরো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি অধিগ্রহনে ২০১৮ সালে সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে ১৮শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের পরে ৪ বছরেরও বেশী সময়ে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। এমনকি সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে এ ভুমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা থাকলেও আগামী বছরের জুনের আগে তা সম্পন্ন হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এমনকি প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ প্রকল্পটির জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত থাকলেও সর্বশেষ তারা এ লক্ষ্যে পুনরায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ এলাইনমেন্ট চুড়ান্ত করে সংশোধিত নকশা প্রনয়নের কথা বলেছে। ফলে আগামী মাসে পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সব জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়তি বিড়ম্বনার সৃষ্টি করবে বলেই মনে করছে পরিবহন বিশেষজ্ঞগন। ফলে দূর্ঘটনার সংখ্যাও বহুগুন বৃদ্ধির আশংকা করছেন তারা। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে পৌছলেও সেখান থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিনে বরিশাল, আর ৩০ কিলোমিটার উত্তরে ফরিদপুর শহর এবং ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে পায়রা ও ২০৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটায় পৌছার সড়ক-মহাসড়কের কোনটিই মানসম্মত নয়। এসব মহাসড়ক এখনো মাত্র ১৮ থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ।
ফরিদপুরÑবরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা ৬ লেন মহাসড়ক নির্মানে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রায় ১৮শ কোটি টাকা ব্যয় সংম্বলিত ভূমি অধিগ্রহনে একটি প্রকল্প একনেক-এর অনুমোদন লাভ করে। ২০২০-এর জুনে অধিগ্রহন প্রক্রিয়া শেষ করার কথা থাকলেও তা ২০২৩-এর জুনেও তার বাস্তবায়নের খুব একটা লক্ষন নেই।
এমনকি এ প্রকল্পটির জন্য ২০১৫ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করলেও বরিশাল মহানগরীকে এড়িয়ে বাইপাস নির্মানের বিষয়টি তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। নগরবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে বাইপাস নির্মানের সিদ্ধান্ত হলেও তার এলাইনমেন্ট করতে প্রস্তাবিত রেল পথের সাথে কিছুস্থানে সাংঘর্ষিক হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় পথ নকশা নিয়েও জটিলতা তৈরী হয়েছে।
ইতোমধ্যে বিদ্যমান জাতীয় মহাসড়কটি বাদ দিয়ে নতুন ৬ লেন মহাসড়ক নির্মানেরও চিন্তা করেছিল সড়ক অধিদপ্তর। কিন্তু মন্ত্রনালয় বিষয়টিতে সায় না দেয়ায় বিদ্যমান মহাসড়কটিই ৬ লেনে উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হলেও কবে এ মহাসড়কের বাস্তব কাজ শুরু হবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। আগের প্রকল্প পরিচালক অবসরে যাবার পারে নতুন পিডি’র সাথে বৈঠক করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক পূর্বের সীমক্ষা প্রতিবেদনের ওপর ডিপিপি তৈরীতে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে নতুন সমীক্ষা সহ চুড়ান্ত এলাইনমেন্ট এবং প্রস্তাবিত মহাসড়ক সহ সেতু ও কালভার্ট সমুহের পরিপূর্ণ নকশা প্রনয়নের কথাও বলেছে এডিবি।
খোদ প্রধানমন্ত্রী সহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রীও বারবারই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত করার তাগিদ দিয়ে আসছেন। এসব মহাসড়কগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১৫ সালে ফরিদপুরÑবরিশালÑকুয়কাটা জাতীয় মহাসড়কের জন্য পারামর্শক নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের ত্রুটিপূর্ণ নকশা সহ নানা গলদে ডিপিপি প্রস্তুত হয়নি গত ৭ বছরেও। অপরদিকে ৪ বছর আগে ভুমি অধিগ্রহনের অর্থ দেয়া হলেও সড়ক অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার উদাসীনতাÑঅবহেলায় তারও কোন অগ্রগতি নেই। বাস্তব অবকাঠামো নির্মান শুরু আরো এখনো বহু যোজন দূরে। এসব বিষয়ে বরিশাল ও গোপলগঞ্জ সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করা হলে সকলেই নানামুখী জটিলতায় কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হবার কথা জানা গেছে। প্রকল্পটির নতুন পরিচালক নতুন অর্থ বছরে বরাদ্ব পেলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্ভব্যতা সমিক্ষা সহ বিস্তারিত নকশা তৈরীর আশাবাদ ব্যক্ত করে ২০২৩-এর ডিসেম্বরের মধ্যে ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরন সম্ভব হবে বলেও জানান।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT