উচ্চ ফলনশীল বীজ ও উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহারে আমদানী নির্ভরতা হ্রাস করবে উচ্চ ফলনশীল বীজ ও উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহারে আমদানী নির্ভরতা হ্রাস করবে - ajkerparibartan.com
উচ্চ ফলনশীল বীজ ও উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহারে আমদানী নির্ভরতা হ্রাস করবে

3:25 pm , May 24, 2022

দেশে ডাল উৎপাদন চাহিদার ৪০ ভাগেরও কম

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দেশে ডালের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টনের বেশী হলেও উৎপাদন এখনো ১০ লাখ টনেও পৌছতে পারেনি। ফলে প্রতি বছরই বিপুল বৈদেশিক মূদ্রা ব্যয়ে নেপাল, ভারত, ভুটান ও অষ্ট্রেলিয়া সহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে ডাল জাতীয় কৃষি পণ্য আমদানী করতে হচ্ছে। এমনকি গত কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা- টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে মুসুর ডাল বিক্রি করতে গিয়েও সরকারকে আরো বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এখনো দেশে ডাল জাতীয় খাদ্য পণ্যের চাহিদার প্রায় ৬০ ভাগের যোগান আমদানী নির্ভর। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানী-রফতানী বাণিজ্যের ভারসাম্যেও বিঘœ ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল মহল। তবে আমাদের ‘কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ ও ‘পরমানু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বিনা’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল মুগ, খেশারী ও মুসুর সহ বিভিন্ন ডাল বীজের আবাদ বৃদ্ধি করতে পারলে বর্তমানের জমিতেই আরো অন্তত ৩ লাখ টন বাড়তি ডাল উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করনে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। বারি’র বিজ্ঞানীগন ইতোমধ্যে মসুর ডালের ৭টি, খেসারী ডালের ৩টি, মুগ ডালের ৬টি, ছোলার ৯টি, মাসকলাই ডালের ৩টি ও ফেলন ডালের ১টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন। বারি উদ্ভাবিত এসব উচ্চ ফলনশীল জাতের ডালের উৎপাদন হেক্টর প্রতি দেড় থেকে ২ টন পর্যন্ত। পাশাপাশি এসব ডালে আমিষের পরিমানও ২০-৩০ ভাগ। এছাড়া বিনা’ও বেশ কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল ডাল বীজ উদ্ভাবন করেছে। গোশতের পরেই ডালে প্রোটিন বা আমিষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী বলে তা আমাদের দেশের দরিদ্র ও সল্পোন্নত জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পূরনের তুলনামুলক সস্তা উৎস বলেও মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীগন। ডাল থেকে যে পরিমান প্রোটিন পাওয়া যায়, তা ডিম, দুধ বা গোশতের মাধ্যমে অর্জনে অন্তত তিনগুন অর্থ ব্যয় করতে হয়। এজন্য ডালকে ‘গরীবের গোশত’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এছাড়া ডালের ছোলা বিভিন্ন পশু খাদ্যেরও একটি সমৃদ্ধ উপকরন। সারা দেশে এখনো ডাল জতীয় ফসলের মোট আবাদ ৮ লাখ হেক্টরের বেশী নয়। তবে তার ৩৫ ভাগেরই আবাদ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে। খেসারী ও মুগ ডালের ৪০ ভাগই এখনো আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চল সহ দক্ষিন উপকূলীয় চরাঞ্চলে। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভাদ্রের বড় অমবশ্যায় ভর করে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর প্রবল বর্ষণে খেশারী সহ বিভিন্ন ডাল ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে ডালের উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটছে। এমনকি গত কয়েক বছরে ঘূর্ণঝড় ‘বুলবুল’ ও ‘ইয়াস’ সহ অনাবৃষ্টি ও অকাল বর্ষণেও ডালের ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে দেশে প্রায় সোয়া ৮ লাখ হেক্টর জমিতে মুগ,মুসুর, খেশারী, মটর, অড়হড়, ফেলন, ছোলা ও মাসকালাই ডালের সর্বমোট উৎপাদন ছিল সোয়া ৯ লাখ টনের মত। এরমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলেই প্রায় ৩ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অতি বৃষ্টি প্লাবনের ক্ষতি বাদে প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টরে ডালের আবাদ নিশ্চিত হয়। যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ ভাগের সামান্য বেশী। আর উৎপাদন ছিল প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার টনের মত। এমনকি সারা দেশে উৎপাদিত ৩ লাখ ৩৭ হাজার টন মুগ ডালের প্রায় ২ লাখ ৮৫ হাজার টনই এসেছে দক্ষিনাঞ্চল থেকে। দেশে উৎপাদিত ৩ লাখ টন খেশারীর প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টনই উৎপাদন হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা থেকে। যদিও ইয়াস’এর প্রবল বর্ষণে গত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিনাঞ্চলে আমন ও খেশারীর জমি প্রায় সপ্তাহ খানেকই ছিল পানির তলায়। ফলে উৎপাদনেও বড় বিপর্যয় ঘটে গেছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদদের মতে, দেশে ডালের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জমির পরিমান বাড়ান সম্ভব না হলেও বারি ও বিণা’র উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যাবহারের কোন বিকল্প নেই। সরকার আগামী কয়েক বছরে দেশে ডাল জাতীয় ফসল আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির একটি কর্মসূচী গ্রহন করেছে বলে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
কিন্তু এখনো দেশে ‘বারি’ ও ‘বিনা’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল এবং অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ ডালের বীজ মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে যেমনি পৌছছে না, তেমনি এসব ডাল-এর আবাদ প্রযুক্তিও মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তরের উদ্যোগ খুব যোড়াল নয়। ডাল সহ অনেক ফসলের ক্ষেত্রেই এখনো কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন না হলেও দায়িত্বশীল মহলের মতে, ‘দেশে ডালের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ডিএই যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে’। মহলটির মতে, ‘গত এক দশকে দেশে ডালের উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে। তা আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে’ বলেও জানান দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগন। দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, দেশে গত রবি মৌসুমে যে প্রায় সাড়ে সোয়া ৯ লাখ টন ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদন হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় সাড়ে ২.৬০ লাখ টন মসুর ডাল ও প্রায় ৩ লাখ টন খেসারী ডাল উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া গত রবি মৌসুমে দেশে ৩.৩৭ লাখ টনের মত মুগ ডাল উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার টন মটর ডাল, ৮৫ হাজার টন মাসকলাই, ৫২ হাজার টন ফেলন ডাল উৎপাদন হয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই প্রায় ৩২ হাজার টন ফেলন ডাল উৎপাদন হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে মাত্র ৮শ হেক্টর জমিতে অড়হর ডালের উৎপাদন ছিল ১ হাজার টনেরও কম। অথচ অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ এ ডালের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির বিশাল সুযোগ রয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT