কষ্টচাপা উল্লাসে ঢেকে ছিল জন-প্রহরীদের ঈদ গল্প কষ্টচাপা উল্লাসে ঢেকে ছিল জন-প্রহরীদের ঈদ গল্প - ajkerparibartan.com
কষ্টচাপা উল্লাসে ঢেকে ছিল জন-প্রহরীদের ঈদ গল্প

3:02 pm , May 6, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ এই ঈদে আমরা যখন ব্যস্ত আনন্দ উল্লাসে ঠিক তখন আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিচ্ছেন যারা তাদের কি অবস্থা? পরিবার পরিজনহীন তাদের ঈদ আনন্দ কিভাবে তা কি কখনো ভেবেছি নাকি জেনেছি তাদের চাপাকষ্টের উল্লাসে ঢাকা ঈদের গল্প? সকালে দায়িত্বরত অবস্থায় ঈদের নামাজে অংশ নেন, কখনো বদলি কাউকে পান কখনো সালাম ফিরিয়েই দাঁড়িয়ে যান দায়িত্ব পালনে। আর হাসি মুখে বলেন, জনমানুষের মাঝে থেকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারাটাই প্রধান আনন্দ তাদের। ঈদের দিন ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসে এমনটাই বলেন বদলী দায়িত্বে থাকা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সাব ইন্সপেক্টর। তিনি এই মূহুর্তে তার মুসলিম সহকর্মীর স্থানে দাঁড়িয়ে ঈদগাহ মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছিলেন। বললেন, সে নামাজ আদায় শেষে চলে আসলেই আমি চলে যাব বাসস্ট্যান্ডে। ওখানে আমার ডিউটি আজ। আর বরিশালের পুলিশ লাইন সড়কে ট্রাফিক সামলাতে ব্যস্ত পুলিশ সদস্য জানালেন, ১৫ রোজা থেকেই শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বাড়তি সদস্য যুক্ত হয়েছে। ঈদের জামাত এখানে দুটো হবে। আমি ২য় জামাতে অংশ নেব। তখন আমার বদলে আরেকজন দায়িত্ব পালন করবেন। ঈদের দিন বৃষ্টি থাকায় নগরীর ভ্রমণ বা পর্যটন স্পষ্টগুলোতে লোকের খুব একটা ভীড় হয়নি। তাই দ্বিতীয় দিন নদী পাড়ের মুক্তিযোদ্ধা পার্ক থেকে ত্রিশ গোডাউন, বেলস পার্ক সহ সর্বত্র ছিলো উপচে পরা ভিড়। বেলস পার্কে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের দুজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুলিশ কনস্টেবল নাজমুলের বাড়ি বানারীপাড়ার গুঠিয়া এলাকায় এবং মাকসুদের বাড়ি পটুয়াখালী। বেলস পার্কে ডিউটিরত অবস্থায় তারা জানান, পরিবারের সদস্যদের সাথে ফোনে কথা হয় নিয়মিত। মা কিছুটা কষ্ট পেয়েছেন তবে ঈদের ডিউটি আমাদের এটাও বোঝেন। জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছি। তবে প্রতিবছর এটা ভাগভাগি হয়, আমি রোজার ঈদে ডিউটি করলে কোরবানির ঈদে ছুটি পাই। আর প্লানেট পার্কের সামনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত ট্রাফিক সার্জন সিদ্দিকের বাড়ি বরগুনা জেলায়। তিনি বলেন, ঈদে ডিউটি না পরলে বরং খারাপ লাগে এখন। অভ্যাস হয়ে গেছে যে। সন্তানের জন্য কিছুটা মন খারাপ হয়। তখন ভিডিও কলে কথা বলে শান্ত করি। কিছুটা বিষন্ন ত্রিশ গোডাউনে দায়িত্বরত কনস্টেবল শাবনাজ। তার বাড়িও বরগুনা জেলায়। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার মজাই আলাদা। বাবা-মা আর সন্তানের জন্য খারাপতো লাগবেই। কিন্তু কি করবো বলুন। আগেতো দায়িত্ব পালন করতেই হবে। তবে ব্যাতিক্রম বানারিপাড়ার মেয়ে পুলিশ কনস্টেবল ইয়াছমীন। তিনি বলেন, এই যে হাজারো প্রায় মানুষের আসা-যাওয়া। সকলের মধ্যে নিরাপদ পথচলার আনন্দ। এটা আমাকেও আনন্দ দেয়। সত্যি বলতে মানুষের মাঝে নিরাপত্তার স্বস্তি দিতে পারলে আমাদের ঈদ আনন্দে পরিপূর্ণ হয়। ঈদের দিনটিতে মা-বাবা কিম্বা স্ত্রী – স্বামী সন্তানকে দূরে রেখে মানুষের সেবায় নিয়োজিত এই সৈনিকদের তাই হাজারো সালাম। তাদের ত্যাগের বিনিময়েই উৎসবমুখর হয় আমাদের প্রতিবারের ঈদ উদযাপন। ত্রিশ গোডাউন এলাকায় সাব ইন্সপেক্টর মনির এর নেতৃত্বে ছয়জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের কারো কারো মুখে চাপা কষ্টের ছাপ থাকলেও মনির বলেন, এখনতো ডিজিটাল যুগ চলছে। চাইলেই সেলফোনে পরিবারের সদস্যদের সাথে ভিডিও কলও করা যাচ্ছে। সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারছি। তবে এই যে রাত এগারোটা পর্যন্ত এখানে আগত মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি। এ আনন্দ কম নয়। যদিও ঈদ উপলক্ষে রাত দশটা পর্যন্ত এখানে জনসমাগম অনুমতি আছে। অন্যসময় আটটার পর থাকা নিষেধ। ঈদ উপলক্ষে আমরা ছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও আছেন এখন। ঈদের পর এই নিরাপত্তা থাকবে না তাই তখন নদী পাড় এলাকায় আটটার পর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে জানান তিনি। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, গোয়েন্দা দপ্তরের সদস্য ছাড়াও জনমানুষের নিরাপত্তায় রয়েছেন র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা। ঈদের দিন সকালে ক্যান্টিনে বা মেচে সেমাই নাস্তা খেয়ে বের হয়ে পরেছেন রাস্তায়। কেউ ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরেছেন, কেউ কেউ পারেননি হয়তো। একটা চাপাকষ্ট নিয়ে নিয়মিত টহল দিচ্ছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। নিশ্চিত করার চেষ্টা নগরবাসীর নিরাপদ জীবন। দুপুরে তারাও খাচ্ছেন মাংস পোলাও। তবে ঘরে নয়, মেচে, ক্যানটিনে কিম্বা গাড়িতে বসেই। এটাই তাদের ঈদ আনন্দের গল্প। যদিও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি)’র উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম বার বলেন, ঈদে আমাদের ছুটি নেই এটা সত্যি। তবে এ নিয়ে আমাদের মনে কোনো কষ্টও নেই। ঈদ শেষ হয়েছে। মানুষেরা নির্বিঘেœ ঘরে পৌছে ঈদ পালন করেছেন আবার বৃহস্পতিবার থেকে ফিরে যেতেও শুরু করেছেন। তাদের যাতায়াতের পথে, তাদেরই অজান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারাটাই আমাদের ঈদ আনন্দ। আমরা সবমিলিয়ে ৮০ জনের বেশি নিরাপত্তা প্রহরী বরিশালের সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ ঈদ উদযাপনে ভূমিকা রাখতে পেরেছি এটাই আমাদের বড় আনন্দ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT