অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বরিশাল সিটি কলেজের কম্পিউটার অপারেটরের কক্ষে তালা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বরিশাল সিটি কলেজের কম্পিউটার অপারেটরের কক্ষে তালা - ajkerparibartan.com
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বরিশাল সিটি কলেজের কম্পিউটার অপারেটরের কক্ষে তালা

3:21 pm , April 10, 2022

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সাথে শিক্ষকদের বাকবিতন্ডা

হেলাল উদ্দিন ॥ সংকট পিছু ছাড়ছে না নগরীর সিটি কলেজের। অভিযোগ উঠেছে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথ সংকট তৈরি করে পদটি আগলে রেখেছেন। এর সাথে নতুন যুক্ত হয়েছে তার ছত্রছায়ায় নি¤œমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আউয়াল হোসেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পরামর্শে ও নির্দেশনায় কলেজের টাকা আতœসাতের মিশনে রয়েছে সে। পরে অধ্যক্ষ নিজের পকেটে ভরেন আতœসাতের টাকা। অবশ্য এসব কাজে সহযোগিতা করায় আউয়ালকে খুশি রাখেন অধ্যক্ষ সুজিত। রোববার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন আউয়াল তাদের কাছ থেকে ভর্তি বাবদ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে মাত্র ২ হাজার টাকার রশিদ দিচ্ছে। বিষয়টি কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে গেলে তারা নি¤œমান সহকারী আউয়ালের কক্ষ তালাবদ্ধ করে দেয় এবং কলেজ অধ্যক্ষ এসব বিষয়ের কোন প্রতিকার বা সমাধান না করায় তার সাথেও বাক-বিতন্ডায় জড়িয়েছেন শিক্ষকরা। কলেজেরসিনিয়র শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আউয়াল দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও ফরম পুরন বাবদ টাকা নিয়ে কম টাকার রশিদ দিচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছে। রোববার একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী মোনালিসা আক্তার বিথির কাছ থেকে ভর্তিবাবদ সাড়ে ৪ হাজার টাকা নিয়ে ২ হাজার রশিদ দিয়েছে। বিষয়টি লিখিত আকারে জানালে আউয়ালের কাছে জানতে চাইলে সে দুর্ব্যব্যবহার করে। পরে ক্ষুব্দ হয়ে তার কক্ষে তালা দেয়া হয়েছে।
ওই শিক্ষক আরো বলেন, কলেজের আয়া (আলেয়া) মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেছে, তাকে উচ্চতর গ্রেড দেয়ার প্রলোভন ও অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে আউয়াল। শিক্ষকরা বলেন, কলেজের গর্ভনিং বডির সভাপতি জেলা প্রশাসকের কাছে কলেজের বিষয়ে অবহিত করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তাই এবার তাকে সব জানাবো এবং চলমান সংকটের সমাধান করার পরই ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবে। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন এতদিন করোনার কারনে সিটি কলেজে স্ব শরীরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে কলেজের সমস্যার বিষয়টি অজানা নয়। এবার এ বিষয়ে কাজ শুরু করব। উভয় পক্ষকে ডেকে চলমান সংকটের সমাধান করার চেষ্টা করব।
কলেজ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বরিশাল সিটি কলেজের অধ্যক্ষ অবসরে গেলে পদটি শূন্য হয়। তখন উপাধ্যক্ষ রবীন্দ্র নাথ অধিকারীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী রবীন্দ্র নাথ অধিকারী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদটি ছেড়ে দেন। কিন্তু একজন নিয়োগ প্রার্থী আদালতে মামলা করায় অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১২ জুলাই তৎকালীন পরিচালনা কমিটি সুজিত কুমার দেবনাথ অন্তবর্তীকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে বসেন। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়ম অধ্যক্ষের পদ শূন্য হলে উপাধ্যক্ষ কিংবা প্রথম জ্যেষ্ঠ পাঁচজন শিক্ষকের মধ্য থেকে একজনকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে পারবে কলেজ পরিচালনা কমিটি। সেখানে সুজিত কুমার দেবনাথ জ্যেষ্ঠতার দিক দিয়ে কলেজের ১৭ নম্বর শিক্ষক। তাঁর ওপরে যে ১৬ জন শিক্ষক রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৮ জন সহকারী অধ্যাপক। এরপরও তিনি মামলার অজুহাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদটি পাঁচ বছর ধরে আগলে আছেন। কলেজের উপাধ্যক্ষ রবীন্দ্র নাথ অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, সুজিত কুমার দেবনাথ নিয়মবহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে চিঠি দিলেও তিনি পদ ছাড়ছেন না। এদিকে কলেজের শিক্ষকদের অভিযোগ, সুজিত কুমার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কলেজে প্রশাসনিক কোনো শৃঙ্খলা নেই। কলেজের আর্থিক হিসাব-নিকাশেও কোনো স্বচ্ছতা নেই। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য জমা করা টাকার কোনো হিসাব নেই। কলেজে নেই কোনো ডিমান্ড রেজিস্টার। শিক্ষকদের দলাদলির কারণে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই কলেজের শিক্ষার মানও দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। অপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যাকে নিয়ে কলেজে অনিয়ম দূর্নীতির বলয় গড়েছেন সেই আউয়ালের বিরুদ্ধেও রয়েছে ঢেড় অভিযোগ। জানা গেছে পিয়ন পদে কলেজে চাকুরী জীবন শুরু হয় আউয়ালের। তখন তার বয়স ১৮ বছর পূর্ন হয়নি। তিনি শোলনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সনে যশোর বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে। রোজিঃ নং ৮০৪৯৬/১৯৯০-৯১ রোল বরিশাল নম্বর ২৫২৬ জন্ম তারিখ ০৪/০৬/১৯৭৭ ( চৌঠা জুন ঊনিশ শত সাতাত্তর সাল)। তিনি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পিয়ন পদে আবেদন করেন। নিয়োগ পেয়ে ০২/১২/১৯৯৩ (দুই বার তেরানব্বই) তারিখ পিয়ন পদে যোগদান করেন। তখন তার বয়স মাত্র ১৬ বছর ০৫ মাস ২৮ দিন। আর তিনি এমপিও ভুক্ত হয় ০১/০১/১৯৯৫ থেকে যাহার ইনডেক্স নং ৬০৫৯৯৭ (ফেব্রুয়ারী-৯৫ কলেজের ১ম এমপিও) বেতনের ০১/০১/৯৫ তারিখ তার বয়স ১৭ বছর ৬ মাস ২৭ দিন। বেতনের সময় তার বয়স ১৮ বছর পূর্ন হয় নাই। এমপিও সিটের উপরে সু-স্পস্ট উল্লেখ আছে কোন শিক্ষক কর্মচারীর বেতন শুদ্ধ রূপে না হয় তার বেতন ভাতা করা যাবে না। আর বেতন ভাতা করলে সভাপতি ও অধ্যক্ষ দায়ী হবেন। আউয়াল হোসেনের নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ খানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৮ বছরের আগে বেসরকারী কলেজে পিয়ন থেকে অধ্যক্ষ পর্যন্ত করোরই চাকুরীর কোন সুযোগ নাই। এমন ঘটনা ঘটে থাকলেও ( আউয়াল) জন্ম তারিখ ০৪/০৬/১৯৭৭ স্থলে ঘষামাজা করে আবেদন করেছেন।
এছাড়া আউয়াল হোসেন পিয়ন থাকা কালীন সময় ১৯৯৭ সালে বরিশাল সিটি কলেজ থেকে ডিগ্রী পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল বরিশাল সিটি কলেজে। সে সুবাধে আউয়াল পরীক্ষার মূল খাতা নিয়ে বাহির থেকে লিখে জমা দেওয়ার সময় কক্ষ পরিদর্শক সহকারী অধ্যাপক জাহিদ হোসেনের নিকট হাতে নাতে ধরা পড়ে এবং পরীক্ষা থেকে বহিস্কার করে। যাহার রেজিঃ নং ৭৫৪৪ শিক্ষা বর্ষ ১৯৯৫-৯৬ রোল বরিশাল নং ৮২০১৭। এমন অপরাধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ আউয়াল হোসেনকে ৩ বছররের জন্য বহিস্কার করে। বহিস্কারের পর বরিশাল সিটি কলেজ থেকে ১৯৯৮ সনে নতুন রেজিঃ করে পরীক্ষা দেয়। যাহার রেজিঃ নং ৯২০৭ শিক্ষা বর্ষ ১৯৯৬-৯৭ পরীক্ষার রোল নং ৩৮১৭২ পাশের সন ১৯৯৮।
আউয়াল পিয়ন থেকে ২০১০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন এবং গর্ভনিং বডি তার পদত্যাগ পত্র গ্রহন করেন। চাকুরী ছেড়ে একই কলেজে ০৯/০৯/২০১০ তারিখ প্রধান সহকারী হিসাবে যোগদান করেন। নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ হয় নাই মর্মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পত্র স্বারক নং ৭জি/১৩৩ ৯ক-৩)/৮/৫১৯৬/২ তারিখ ২৩/০৫/২০১১ এমপিও না মঞ্জুর করা হয়। পরে ২১/০৭/২০১১ নিম্মমান সহকারী কাম কম্পিটার অপারেটর পদে যোগদান করে পিয়ন পদের ৬০৫৯৯৭ নং ইনডেক্স দিয়ে চাকুরী করেন আউয়াল হোসেন। তার পরেও গভানিং বডির অনুমতি ছাড়া অবৈধ ভাবে প্রায় ২ বছরের সরকারী বেতন ভাতা তুলে নেন। অবশ্য সরকারী টাকা অবৈধ ভাবে তোলার অভিযোগে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাহানারা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালতে এমপি ২৩/২০১৮ মামলা দায়ের করেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT