3:03 pm , January 23, 2022
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভাইরাস আবার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রতিদিনই সংক্রমন সংখ্যা ও হার বাড়ছে। এ অঞ্চলে শনাক্তের হার ইতিমধ্যে প্রায় ২৫ ভাগের কাছে। নগরীসহ বরিশাল, পিরোজপুর ও ভোলা এখন করোনার আতুড় ঘর। তবে পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠির অবস্থাও ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। রোববার দুপুরের পূর্ববর্তী ৪৮ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় আরো ২২৬ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে রোববার দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায়ই শনাক্তের সংখ্যা ১৭৪। ফলে চলতি মাসের ২২ দিনে শনাক্তের সংখ্যা ৭৫৯ জন। অথচ গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে এ অঞ্চলের ৬ জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০৫ জন। এরমধ্যে অক্টোবরে ২১৭, নভেম্বরে ৬৬ এবং ডিসেম্বর মাসে সংক্রমন সংখ্যাটা ছিল ২২ জনে। অক্টোবরের প্রথম পক্ষে দুই জনের মৃত্যু হলেও নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কোন মৃত্যু ছিল না। চলতি মাসেও এখন পর্যন্ত কোন মৃত্যু সংবাদ নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে পরিস্থিতি অবনতির মুখেও নগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও নুন্যতম স্বাস্থ্যবিধি পালিত হচ্ছে না। খোদ নগরীর ৮০ ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিলেও নগরীতে কয়েকটি বেসরকারী স্কুলে রোববারও ক্লাস নিতে দেখা গেছে। এ অঞ্চলের কোথাও স্বাস্থ্য বিধি অনুসরনের বালাই নেই।
অপরদিকে সংক্রমন বৃদ্ধির সাথে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে। রোববার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালটির করোনা ওয়ার্ড ২৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিল বলে পরিচালক জানিয়েছেন। তবে আইসিইউ’তে কোন রোগী চিকিৎসাধীন নেই বলে জানা গেছে। পরিস্থিতির অবনতি বিবেচনায় শেবাচিম হাসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলা ও উপজেলা হাসপাতালই করোনা রোগী ভর্তির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে শেবাচিম হাসপাতালেই ৩শ শয্যার করোনা ওয়ার্ড ছাড়াও ৩০ শয্যার আইসিইউ প্রস্তুত রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এদিকে গত ৪৮ ঘন্টায় আক্রান্তদের মধ্যে নগরীতে প্রায় ৭০ জন সহ বরিশাল জেলায় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৯৯ জন। এ নিয়ে নগরীতে ১১ হাজার ২শ সহ জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৬৯ জনে। গত মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় মৃতের সংখ্যা ছিল ২৩০। যারমধ্যে নগরীতেই মারা গেছেন ১০২ জন।
এ সময়ে খুলনা-বাগেরহাটের সীমান্তবর্তী পিরোজপুরে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৪৪। জেলাটিতে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৬৭ জন আক্রান্তের মধ্যে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দ্বীপজেলা ভোলাতেও গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন করে ৩৫ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। জেলাটিতে ইতোমধ্যে ৬ হাজার ৯৬২ জন আক্রান্তের মধ্য মারা গেছেন ৯১ জন। পটুয়াখালীতেও গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন করে ২২ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। জেলাটিতে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৩শ জন আক্রান্তের মধ্যে ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বরগুনা ও ঝালকাঠিতে গত ৪৮ ঘন্টায় যথাক্রমে ১২ জন ও ১০ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বাধিক মৃত্যুহারের বরগুনাতে ৪ হাজার ২ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৯৭ জনের মৃত্যুর কথা বলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সর্বাধিক সংক্রমনের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠিতে ৪ হাজার ৭০৯ জন আক্রান্তের ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আর স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমিত হিসেবে গত ৪৮ ঘন্টায় ৩৬ জন সহ দক্ষিণাঞ্চলে সর্বমোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৪ হাজার ৭৪৯ জন। সুস্থতার হার চলতি মাসে কিছুটা হ্রাস পেয়ে এখন ৯৫ ভাগেরও নিচে।