বার্ণ ইউনিট বিহীন শেবাচিম হাসপাতালে বার বার অগ্নিকান্ডে রোগী ও স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে বার্ণ ইউনিট বিহীন শেবাচিম হাসপাতালে বার বার অগ্নিকান্ডে রোগী ও স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে - ajkerparibartan.com
বার্ণ ইউনিট বিহীন শেবাচিম হাসপাতালে বার বার অগ্নিকান্ডে রোগী ও স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে

2:35 pm , December 27, 2021

 

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ চিকিৎসকের অভাবে বার্ন ইউনিটের মত অতি স্পর্শকাতর চিকিৎসা সেবা ইউনিট বন্ধের মধ্যে বরিশালের শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বার বার অগ্নি দূর্ঘটনায় রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতংকের সাথে ক্ষোভও বাড়ছে। আর বিষয়টি নিয়ে এ অঞ্চলের সর্ববৃহত সরকারী এ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও গনপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলদের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতালটির নির্মান ত্রুটি সহ নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি এর রক্ষনাবেক্ষনে গনপূর্ত অধিদপ্তর এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলার অভিযোগও দীর্ঘ দিনের। এক হাজার শয্যার দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির বার্ণ ইউনিটটি বন্ধ রয়েছে চিকিৎসকের অভাবে। ফলে গত শুক্রবার ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে অগ্নিদগ্ধ ৭০ রোগীর নিয়ে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে ঢাকা থেকে সাময়িকভাবে ৭ জন চিকিৎসক এনে চিকিৎসা সেবা শুরু করতে ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে যায়। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের বার্ন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের সবগুলো পদই শূণ্য। ফলে এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটির বার্ণ ইউনিটে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার মত কোন চিকিৎসক না থাকায় পুরো ইউনিটটিই বন্ধ হয়ে গেছে আরো মাসাধিককাল আগে। তবে বার্ণ ইউনিট না থাকলেও এ হাসপাতালেই অগ্নি দূর্ঘটনা ঘটছে বার বার। আর যে কোন অঘটন ও দূর্ঘটনার পরে যথারীতি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে তদন্ত রিপোর্টের সে তেজস্ক্রিয় ফাইল কিছুদিন পিংপং বলের মত এ টেবিল ও টেবিলে লাফিয়ে তা ফাইলের ভীড়েই হারিয়ে যায়। ততদিনে প্রায় সবাই ঐসব অঘটনের বিষয় ভুলেও যান। তবে ক্ষত থেকে যায় রোগী এবং স্বজনদের শরীরে ও মনে। গত বছরের শুরুতে নির্মান কাজ শেষ হবার পরে মার্চের প্রথমভাগে নতুন ৫ তলা ভবনটিতে করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়। কিন্তু ১০ জুন নবনির্মিত ভবনে শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় উচ্চ ঝুকির এসব সংক্রমক রোগীরা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়। সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর রাতেও হাসপাতালাটির হৃদরোগ বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিসিইউ’তে একইভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ড হয়। তখন দ্রুত সরিয়ে নেয়ার সময় একজন মুমূর্ষ রোগীর মৃত্যু হয়। নিকটজনেরা ‘অগ্নিকান্ডের আতংকে ঐ রোগীর মৃতুর অভিযোগ’ তুললেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘ঐ রোগী অত্যন্ত নাজুক ও ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ছিল। আতংকে নয়, হৃদ রোগেই তার মৃত্যু হয়েছে’ বলেও দাবী হাসপাতাল কতৃপক্ষের। এমনকি ঐ দূর্ঘটনায় আইসিসিইউ’র সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টটি পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাতভর রোগীদের অন্য ওয়ার্ডে রেখে পরদিন আইসিসিইউ’তে ফিরিয়ে আনা হলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টটি পুরোপুরি চালু করতে আরো কয়েকদিন চলে যায়। ফলে হৃদরোগীদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের মত অত্যন্ত স্পর্শকাতর ওয়ার্ডে চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যাহত হয়। এক হাজার শয্যার বিশাল এ হাসপাতলটিতে হৃদরোগের আইসিসিইউ’তে শয্যা সংখ্যা মাত্র ১০টি হলেও সেখানে প্রতিদিন গড়ে রোগী থাকছেন ২০ থেকে ৩০ জন পর্যন্ত।
কিন্তু রোগীর চাপের সাথে চিকিৎসক ও কর্মী সংকট সহ চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে এখানে সুষ্ঠু চিকিৎসা লাভ অনেকটাই দুরুহ হয়ে পড়েছে। তার উপরে অগ্নিকান্ডের মত ভয়াবহ ও আতংকিত দূর্ঘটনা সরকারী চিকিৎসা সেবার প্রতি সাধারন মানুষের অনাস্থা আরো বৃদ্ধি করছে বলেও জানিয়েছেন একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনরা।
এ ব্যাপারে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলামের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, পুরো বিষয়টি তদন্তে হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি গনপূর্ত বিভাগ ও অক্সিজেন প্লান্ট রক্ষনাবেক্ষনকারী প্রতিষ্ঠানকেও চিঠি দিয়ে সব ধরনের ত্রুটি বিচ্যুতি দুর করতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে কোন ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে গনপূর্ত বিভাগকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT