অমর একুশে গ্রন্থমেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা - ajkerparibartan.com
অমর একুশে গ্রন্থমেলা

3:13 pm , November 23, 2021

কাজী মিজানুর রহমান ॥ ফেব্রুয়ারি মাস প্রায় সমাগত। বাঙালির প্রাণের ভাষার মাস। ৫২ ‘র ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ মায়ের ভাষা বাংলাভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের, বীরত্বপূর্ন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের সেই মহান স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত বই মেলার এই নামকরণ করা হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
বইমেলা ঢাকা কেন্দ্রিক।বর্ধমান হাউস ছাড়িয়ে এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৯৮৪ খৃস্টাব্দ থেকে বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে এই মেলার আয়োজন হচ্ছে। যদিও মেলার ইতিহাস অনেক পুরনো। প্রতিবছর বইমেলা ফেব্রুয়ারি মাসে মাসব্যাপি অনুষ্ঠিত হয়। করোনা অতিমারির কারনে গত বছর মার্চ-এপ্রিলে আয়োজন করতে হয়েছিল ‘মন খারাপের মেলা’।
আমাদের বাংলা একাডেমি এই মেলার আয়োজক।দেশের প্রায় সব প্রকাশনা সংস্থা মেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে।
বই মেলায় লেখক কর্নার, তথ্যকেন্দ্র, সাহিত্য আলোচনা, কবিতাপাঠ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, নান্দনিক অঙ্গসজ্জা পুরস্কার মেলার আকর্ষণ বাড়ায়।
বিভিন্ন রক্ত সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান সেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে রক্ত সংগ্রহ করে। রেডিও, টিভিতে লাইভ প্রচার মেলার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। লেখককুঞ্জে লেখকগন উপস্থিত থেকে পাঠক ও দর্শকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
বই মেলায় প্রতিবছর তিন থেকে চার হাজার বই প্রকাশিত হয়। মেলার সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক স্বপ্ন, আশা আকাঙ্ক্ষা, জীবনজীবিকা, এ এক মহাযজ্ঞ।
একমাস ব্যাপি অনুষ্ঠিত এই বইমেলা সময়ের বিবেচনায় সবচেয়ে বড় বইমেলা।
বিশ্বের প্রথম বইমেলা হয়েছিল ১৮০২ খৃস্টাব্দে নিউইয়র্কে। আর বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বই মেলা অনুষ্ঠিত হয় জার্মানির ফ্রাংকফুটে।
দেশজ সংস্কৃতি, কৃষি, ইতিহাস -ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শিল্প ও সাহিত্য সংরক্ষণ গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির মানসিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে এই বইমেলা। বইমেলায় আনন্দ উপভোগ এবং বই কেনা এক সাথেই হয়ে যায়। অনেক দূর্লভ বই হাতের কাছে পাওয়া যেতে পারে যা অন্য সময় খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। বই বিমুখ বর্তমান প্রজন্মকে বইমুখী করতে সাহায্য করতে পারে বই মেলা। নগরজীবনের একঘেয়েমি দূর করতেও ভুমিকা আছে।
সময় এসেছে এই মেলা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার। বই বিমুখ কিশোর, তরুনদের আকাশপ্রযুক্তির নেশা, মাদকাসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিতে পারে এই বই মেলা।
আমার কাছে মনে হয় এই মেলা অন্তত বিভাগীয় পর্যায় আয়োজন হতেই পারে।
ইচ্ছে থাকলেও অনেকের পক্ষে ঢাকা বই মেলায় যাওয়া সম্ভব হয় না। সময়, অর্থ, স্বাস্থ্য সব কিছুর সমন্বয় সবার হয়ে উঠে না। মেলা বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে অনেকের অতৃপ্তি আনন্দেপূর্ন হতে পারে।
আমাদের বরিশালে বইমেলা আয়োজনের প্রকৃষ্ট পরিবেশ বিরাজমান। জীবনানন্দ দাস,কামিনী রায়, কুসুম কুমারী, সুফিয়া কামাল, আসাদ চৌধুরী প্রমুখ কবি, লেখকের চারণভূমি বরিশালে। অনেক গুণী লেখক, কবি, শিল্পী, ছড়াকার, সাহিত্যক,ইতিহাসবিদ আছেন।এখানে আছেন অনেক সাহিত্যপ্রেমি, নিজেদের আগমনী জানান দিতে উন্মুখ নবীন লেখক,পাঠক।
লেখক – পাঠকের মহামিলন বই মেলা আয়োজনের মাধ্যমে এদের মেলবন্ধন করা গেলে সেটা হবে সকলের জন্য মঙ্গলজনক।
মেলাকে ঘিরে একটা নতুন আবহ সৃষ্টি,অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং কিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
জনসমাগম, যাতায়াত, ট্রাফিক, নিরাপত্তা সব দিক বিবেচনায় ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ হতে পারে বইমেলা আয়োজনের আদর্শস্থান। বিকল্প হিসাবে ‘পরেশ সাগর’ মাঠ আসতে পারে।
যেহেতু করোনা নির্মূল হয় নাই, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়েই আমাদের আগাতে হবে। সামাজিক দুরত্ব মেনে চলার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
বরিশালের জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন, সংস্কৃতজনসহ সবাই এগিয়ে আসলে বরিশাল হতে পারে দেশে মাঠ পর্যায় বইমেলা আয়োজনের পথিকৃৎ।
মেলায় সিটি কর্পোরেশন,স্বাস্থ্যবিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, রেডক্রিসেন্ট,ফায়ার সার্ভিস,হোটেল রেস্টুরেন্ট,সেচ্ছাসেবকদের দায়িত্বশীল পরিসেবা প্রয়োজন হবে।পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাধীন থাকলে নিয়ন্ত্রণ হবে সহজ।
আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান ২২ মার্চ ‘২০২২ পর্যন্ত চলবে।
বইমেলা আয়োজনে প্রস্তুতি সময় থাকবে খুবই কম।
সময় ফুরিয়ে আসছে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে খুব দ্রুত। লেখক পরিবেশ ও সমাজকর্মী।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT