2:25 pm , September 25, 2021
অপদখল থেকে নদী উদ্ধার করতে হবে
কাজী ফিরোজ ॥ প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্ব ‘বিশ্ব নদী দিবস’ যথাযথ ভাবে পালন করে আসছে। আজ বিশ্ব নদী দিবস। দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় বরিশালেও দিবসটি পালিত হবে। ১৯৮০ সালে কানাডার খ্যাতনামা নদী বিষয়ক আইনজীবী মার্ক আ্যঞ্জেলো দিনটি নদীদিবস হিসাবে পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জাতিসংঘ ২০০৫ খৃস্টাব্দে দিবসটি অনুসমর্থন করে। বাংলাদেশে ২০১০ খৃস্টাব্দ থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। সারা দেশের ন্যায় বরিশালেও বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার জোট নদী দিবস উদযাপন পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবে। নদী ও মানুষের জীবন অবিচ্ছেদ্য। নদী রক্ষার তৎপরতা গোটা দুনিয়া জুড়েই। একসময় বাংলাদেশে ছোট বড় প্রায় সাড়ে এগার’শ নদী ছিল। বর্তমানে অস্তিত্ব আছে মাত্র ৪০৫ টি।বর্তমানে দেশে মোট নৌপথ আছে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে সারা বছর চলাচলের উপযোগী নাব্য নৌপথ রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। অবশিষ্ট ২ হাজার ৩৬৮ কিলোমিটার শুধু বর্ষা মৌসুমে সচল থাকে অথচ স্বাধীনতা পূর্বকালেও প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে নৌপথ ছিল। উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রন, অপরিকল্পিত বাঁধ, স্লুইসগেট, নির্মানের ফলে নদী তার জীবন হারাচ্ছে প্লাস্টিক, পলিথিন, পলি জমে নদীর তলদেশ উচু হয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে। সরকারি হিসাবে সারাদেশে প্রায় ৪৭ হাজার অবৈধ দখলদার নদী গিলে খাচ্ছে। বাস্তবে এই সংখ্যা এর প্রায় দ্বিগুণ। আইনি প্রক্রিয়ায় এই অপদখল থেকে নদী উদ্ধার করতে হবে। কয়েকটি জনপ্রিয় শ্লোগান, “বাঁচাও নদী বাঁচাও দেশ, আমার সোনার বাংলাদেশ।” “বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।” কীর্তনখোলা সহ বরিশাল অঞ্চলের নদী -খাল, পরিবেশ -প্রতিবেশ সুরক্ষায় এই মাসের ২৭ তারিখ কীর্তনখোলার তীরে দিবসটি পালনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষ্যে সম্মিলিত উদযাপন পর্ষদ,এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দাবি হল : সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কীর্তনখোলা নদীসহ সকল নদ -নদী ও খাল সমুহে সিএস মৌজা ম্যাপ অনুসরন করে সীমানা নির্ধারনপূর্বক স্থায়ী পিলার স্থাপন করতে হবে ; নদী -খালের প্লাবনভূমি /তীর ভূমিতে অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করে স্থায়ী উচ্ছেদ অভিযান করে তীর ভূমি সংরক্ষণ করতে হবে ; নগরীর প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত ‘ লাল তালিকাভুক্ত শিল্প কলকারখানা নির্দিষ্ট শিল্পজোনে দ্রুত স্থানান্তর, ইটিপি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে ; দেশের সকল নদীকে ‘ আইনি ব্যক্তি,আইনি স্বত্ত্বা ও জীবন্তসত্ত্বা ‘সহ জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন কে নদীর অভিভাবক ঘোষনা পুর্বক নির্বাহী ক্ষমতা অর্পন করে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা, অধিদপ্তর ও মন্ত্রলালয় যথাযথ সহযোগিতা দিতে বাধ্য থাকিবে মর্মে আইনি ব্যবস্থা করতে হবে, সমন্বিত ড্রেজিং ব্যবস্থার আওতায় ক্যাপিটাল /মেইন্টেনেস ড্রেজিং নিশ্চিত করে বর্জ্য, পলি অপসারণ করতে হবে, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কীর্তনখোলায় দখল, বর্জ্যের দূষন চলছে বহুকাল আগে থেকেই।প্লাস্টিক, পলিথিন, মনুষ্য বর্জ্য, গ্হৃস্থালি বর্জ্য, রাসায়নিক তরল, এর সাথে বর্তমানে যোগ হয়েছে কভিড ওয়েস্ট মাস্ক, গ্লোভস। সব কিছুর গন্তব্য নদী,সমুদ্র। পলাশপুর ব্রীজ হতে দক্ষিনে যমুনা অয়েল ডিপো পর্যন্ত ৩’৫৭ কি:মি অংশে গড়ে উঠেছে অবৈধ ভবন, লঞ্চ,ট্রলার নির্মান ডকইয়ার্ড, মার্কেট আরও কত কি। । মাঝে মধ্যে ভাসমান কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও সেটা কাজের কিছু নয়। নদী রক্ষা কমিশনের হিসাব মতে অবৈধ দখল দারের সংখ্যা ২৩৩৩জন তবে বাস্তবে এই সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। অপরিকল্পিত ও অবিন্যস্ত ভাবে গড়ে উঠা শিল্প কারখানা গুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত ইটিপি ব্যবহার না করে সরাসরি নদীতে রাসায়নিক বর্জ্য ফেলার অভিযোগ আছে। নদীর পানি ও পরিবেশ দূষনের এটাও অন্যতম কারন। এর বাইরে আছে পানিতে লবনাক্ততার আগ্রাসন। স্থায়ী সীমানাপিলার এবং দখলদারদের নামের তালিকা প্রচার এবং প্রদর্শনের দাবী দীর্ঘদিনের। কীর্তনখোলাসহ সকল নদী দখল-দূষন মুক্ত করার কাজে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিৎ। নদীর রক্ষক এবং তদারককারীগন এমন দিনে কীর্তনখোলা রক্ষায় জনগনের কাছে কি অংগিকার করেন এবং সম্ভব স্বল্পতম সময়কালে করনীয় বাস্তবায়নের অগ্রগতির দিকে তাকিয়ে রইলাম।