3:13 pm , September 11, 2021
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের গুজব ছড়িয়ে রোগী ও তার স্বজনদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চুরি করার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার বেলা ২ টার দিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে এ গুজব ছড়ানো হয়। এদিকে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।
হাসপাতালের স্টাফ আবুল কালাম জানান, হঠাৎ করেই হাসপাতালের মূল ভবনের দোতলার পূর্ব পাশে অগ্নিকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিছু লোক আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় দোতলা থেকে চার তলা পর্যন্ত পূর্ব পাশের বিভিন্ন ওয়ার্ডে থাকা রোগী ও স্বজনরা তাড়াহুরা করে নীচে নামতে থাকেন।
তিনি বলেন, যারা নীচে নামে তাদের কেউ অগ্নিকান্ড দেখেনি। এমনকি কোথায় অগ্নিকান্ড হয়েছে তাও বলতে পারেনি। পরে হাসপাতালের স্টাফরা খোজ নিয়ে জানতে পারেন দোতলার শিশু ওয়ার্ডে কিছু লোক আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। রোগীসহ সবাই দৌড়ে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে হাসপাতাল ভবনের বাহিরে নিরাপদ দুরত্বে গিয়ে জড়ো হয়।
আবুল কালাম আরো বলেন, ধারনা করা হচ্ছে হাসপাতালে রোগীর স্বজন ছদ্মবেশে থাকা চোরাই চক্রের সদস্যরা চুরি করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
শিশু ওয়ার্ডের স্টাফ মো. জব্বার জানান, তাদের ওয়ার্ডে কোন অগ্নিকান্ড হয়নি। ঘটনার সময় একজন অধ্যাপকসহ চিকিৎসকরা ওয়ার্ডেই ছিলেন। দুজন লোক আকস্মিক আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। তখন সবাই ওয়ার্ডের ভেতর থেকে বাহিরে দৌড়ে বের হয়। আর এ সময়ের মধ্যেই ওয়ার্ডের ভেতর থেকে দুটি মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে।
হাসিনা নামে অপর একজন বলেন, ঘটনার আগে এক শিশু রোগীর স্বজন মোবাইলে চার্জ দেয়ার চেষ্টা করছিলো। সকেটে চার্জার প্রবেশ করানোর সময় স্পার্ক করে। তবে কোন অগ্নিকান্ড হয়নি। ওই সময় এক মহিলা একটু ভয় পেয়ে আতকে উঠলে পাশে থাকা লোকজন অগ্নিকান্ডের গুজব ছড়িয়ে দেয়।
ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম ও আনসার সদস্যরা জানান, অগ্নিকান্ডের খবর শুনে কেউ আর তা যাচাই করেননি। রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌড়ে হাসপাতাল ভবনের বাহিরে চলে আসেন। হাসপাতালের স্টাফরা তাদের বারণ করলেও তারা শোনেননি। পরে অনেক বুঝিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের স্ব স্ব ওয়ার্ডে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে মোবাইল চুরির মৌখিক খবর এসেছে।
তবে মোবাইল বা টাকা পয়সা চুরি যাওয়ার ঘটনায় এখনো কেউ হাসপাতাল প্রশাসনের নিকট লিখিত জানায়নি বলে জানিয়ে হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডাঃ মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, ঘটনাটি এক ধরনের প্রতারণামূলক। গুজব ছড়িয়ে রোগীদের মালামাল চুরির চেষ্টা চালানো হয়েছে। মৌখিকভাবে কিছু মোবাইল খোয়া যাওয়ার কথা শুনছি, তবে কেউ লিখিত দেয়নি।
তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার ফুটেজও পর্যালোচনা করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা আর কেউ ঘটাতে না পারে। সেইসাথে আজকের ঘটনা পরিকল্পিত হয়ে থাকলে, আর তা তদন্তে বেরিয়ে আসলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বরিশাল সদর স্টেশনের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা আব্বাস উদ্দিন বলেন, ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে রোগীসহ সাধারণ মানুষকে হাসপাতাল ভবনের বাহিরে জড়ো অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। তবে কেউই কোথায় আগুন লেগেছে তা বলতে পারেনি। তারপর হাসপাতাল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে খোঁজ চালিয়েও আগুনের সূত্রপাত পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা একটি চক্র মোবাইল ফোন চুরির লক্ষ্যে কৌশলে এ কান্ড ঘটিয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
অপরদিকে গুজবে রোগীদের নিয়ে হাসপাতাল ভবনের বাহিরে গিয়েও বিপাকে পড়েছেন স্বজনরা। আব্দুল নামে এক রোগীর স্বজন জানান, পা ভাঙ্গা স্ত্রীকে নিয়ে হুরোহুরি করে নীচে নেমেছেন। তার থেকে বেশি কষ্ট হয়েছে উপরে উঠতে। ট্রলির সংকটের কারনে হাসপাতালের বাহিরে সড়কের ঘন্টাব্যাপি বসে থাকতে হয়েছে তাদের।