2:41 pm , September 7, 2021
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ইতিহাস আর ঐতিহ্য মিশে আছে নগরীর বর্তমান বঙ্গবন্ধু উদ্যান ঘিরে। ইতিহাসের অনবদ্য অংশ হয়ে আছে উদ্যানের একটি পুরাতন রেইনট্রি গাছ। শত বছরের পুরাতন এই গাছটি উদ্যানের পাশে দাড়িয়ে স্বাক্ষী হয়ে আছে হাজারো ঐতিহাসিক ঘটনার। তবে অব্যবস্থাপনা ও যথাযথ পরিচর্যার অভাবে এই শতবর্ষী রেইনট্রি গাছটি এখন মৃত্যুর দাড়প্রান্তে। অভিযোগ উঠেছে ২০১১ সালে উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে গাছের মুলের অংশটি কংক্রিট দিয়ে বাধানোর পর থেকেই ধীরে ধীরে প্রান হারাতে শুরু করেছে গাছটি। এর পরে ১০ বছরে এখন সে মৃত প্রায়। হয়ত এটিকে এখন আর বাঁচিয়ে তোলার পথও নেই। এমন একটি পুরাতন গাছ হারালে তা ঐতিহাসিক এই স্থানের জন্য অপুরনীয় ক্ষতি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। হয়ত অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে, তার পরেও গাছটিকে রক্ষা করার পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তারা। সূত্র মতে, ১৮৯৬ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এনডি বিটসেন বেল বরিশালে আসেন। তার নাম মিশে আছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ঘিরে। এই উদ্যান নির্মাণে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিটসেন বেলের প্রচেষ্টার নিদর্শন স্বরূপ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এটি ‘বেলস্ পার্ক’ নামে পরিচিত ছিল। জনশ্রুতি রয়েছে, রাজা পঞ্চম জর্জের বরিশাল শুভাগমনকে স্মরণীয় করতে এই মাঠটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন বেল । কিন্তু কোন এক কারণে সে সময় এই কর্মসূচী বাতিল হয়ে যায়। তারপর থেকে সরকারী-বেসরকারী সকল বৃহৎ কর্মকান্ড এই মাঠকে ঘিরেই সম্পন্ন হয়। এ মাঠটি গড়ে তুলতে বিটসেন বেল বেশ দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন। সে সময়ে কীর্তনখোলা নদী আরও এগিয়ে ছিল। কীর্তনখোলার তীর ঘেঁষে সবুজের এই গালিচা এক অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ রচনা করেছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই পার্কের নামকরণ করে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’। সেই থেকে দাফতরিকভাবে এটি ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ হিসেবে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু উদ্যানটির দৈর্ঘ্য ৭৫০ ফুট। প্রস্থে এটি ৫৫০ ফুট। তবে এটি উদ্যান ও পাশের লেকসহ সম্পূর্ণ হিসাব। শুধু উদ্যানটি দৈর্ঘ্যে ৫৫০ ফুট ও পাশে ৪৫০ ফুট। উদ্যানটি ঘিরে রয়েছে ওয়াকওয়ে। রয়েছে অসংখ্য বাহারি বৃক্ষ। বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মাঝে সবুজ ঘাসের গালিচা ছাড়াও এর চারদিকে রয়েছে ফুলের বাগান ও ছায়াদানকারী বৃক্ষ। এর মধ্যে সর্বাধিক পুরাতন ও বড় আকারের রেইনট্রি টি রয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মজিবর রহমান সারোয়ারের উদ্যোগে সরকারি থোক বরাদ্দে ২০০৫ সালে গণপূর্ত অধিদফতর তাদের মালিকানাধীন এ উদ্যানটির চার পাশে একটি ওয়াকওয়ে, বসার স্থান ও গার্ডেন লাইট স্থাপনসহ দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষ রোপণ করা হয়। ২০১০-১১ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচিত মেয়র শওকত হোসেন হিরন মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ সংগ্রহ করে এ মাঠে দ্বিতীয় ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ পুরো উদ্যানটি স্থায়ী আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেন। এ সময় রেইন ট্রি গাছের মুলের অংশ কংক্রিট দিয়ে বাধানো হয়। উন্নয়নের জন্য করা এই কাজে ক্ষতি হয়ে যায় গাছটির। স্বাভাবিক ভাবে গাছটি তার জীবন প্রক্রিয়া পরিচালনে ব্যর্থ হয়ে প্রান হারাতে শুরু করে। বর্তমানে গাছটি প্রায় মৃত। এখানে রেড়াতে আসা একাধিক জনের সাথে আলাপে তারা শতবর্ষি এই গাছটিকে উদ্যানের অন্যতম আকর্ষন বলে এটি রক্ষায় যথাযত ব্যবস্থা অতি দ্রুততার সাথে গ্রহনের দাবী জানান। এ বিষয়ে বন বিভাগের প্রধান কর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, যদিও এটি তাদের কার্যের আওতায় নেই। তার পরেও দ্রুততার সাথে গনপূর্ত ও সিটি কর্পোরেশনের গাছটি রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিৎ। পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, এমন একটি শতবর্ষী বৃক্ষ এক অমূল্য সম্পদ। এটি পরিবেশের একটি মূল্যবান অংশ। যত দ্রুততার সাথে সম্ভব এই গাছ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।